প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রিজার্ভের টাকা নিয়ে বসে থাকলে হবে না, দেশের মানুষের কল্যাণে খরচ করতে হবে। কারণ রিজার্ভ সব সময় খরচ হতে থাকে এবং এটা রোলিং করে।
আজ সোমবার দুপুরে দেশের ৫৯টি জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানের পর দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এ শপথ অনুষ্ঠান হয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে একটা কথা আসছে যে রিজার্ভ নেই। রিজার্ভের টাকা নাকি সব চুরি হয়ে গেছে। আমরা ’৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি তার আগে সরকারে ছিল বিএনপি। তখন রিজার্ভ ছিল মাত্র ২ দশমিক ৬ বা ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন রিজার্ভ ছিল ৫ বিলিয়ন ডলার। এটাকে আমরা প্রায় ৪৮ বিলিয়নের কাছাকাছি নিতে সক্ষম হই। এরপর করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। করোনাকালে যোগাযোগ ও আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমেছিল। এ অবস্থায় কোনো আমদানি না হওয়ার কারণেই কিন্তু রিজার্ভ জমা হয়। করোনা-পরবর্তী আমদানির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ে। শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে চাষাবাদের বিভিন্ন যন্ত্রপাতিও কিনে আনতে হয়। সে কারণে আমাদের টাকা খরচ করতে হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ভ্যাকসিন কেনার ক্ষেত্রে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়েছে। ভ্যাকসিন তৈরির শুরুতেই ১২শ কোটি টাকা জমা দিই, যেন আমরা আগে ভ্যাকসিন পেতে পারি। আমি চেয়েছি আগে ভ্যাকসিন কিনে এনে দেশের মানুষকে বাঁচাতে। শুধু ভ্যাকসিন কিনে আনলেই তো হয় না, তা প্রয়োগে অন্যান্য সরঞ্জামাদিও লাগে, অনেক কিছুই লাগে। সেগুলো আমরা প্লেন পাঠিয়ে পাঠিয়ে বিদেশ থেকে আনিয়েছি। তাতে টাকা খরচ হয়নি! টাকা তো খরচ করতে হয়েছে। এভাবে কিন্তু আমরা মানুষের কল্যাণে রিজার্ভের টাকা ব্যবহার করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা যেতে না যেতেই শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তারপর নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞা। বিশ্বজুড়ে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। চাল, গম, জ্বালানি ও ভোজ্যতেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। শুধু দাম বেড়েছে তা নয়, পরিবহন খরচও অনেক বেড়ে গেছে। ২০০ ডলারে আমরা যে গম কিনতাম সেটা এখন ৫০০ ডলারে কিনতে হয়। কিন্তু আমরা তো আমাদের দেশের মানুষকে কষ্ট দিতে পারি না। যেখানে যত দামই লাগুক আমরা কিন্তু কিনে নিয়ে আসছি, মানুষকে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, ৫০ লাখ মানুষকে আমরা মাত্র ১৫ টাকা কেজিতে চাল দিচ্ছি। আর যারা একেবারেই অপারগ তাদের তো বিনা পয়সায়ও খাবার দিচ্ছি। বিনামূল্যে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি।
সরকারপ্রধান বলেন, রপ্তানি খাতেও আমরা প্রণোদনা দিচ্ছি, সেখানেও টাকার দরকার হচ্ছে। রপ্তানি থেকে কিন্তু আমাদের লোকেরাই লাভবান হচ্ছে। এভাবে আমরা ৮ বিলিয়ন খরচ করেছি। এখন চড়া দামে খাদ্য, গ্যাসসহ সব পণ্য কিনতে হচ্ছে। টাকা নিয়ে বসে থাকলে তো হবে না। টাকা দেশের মানুষের কল্যাণে খরচ করতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে যারা কথায় কথায় বলে রিজার্ভ গেল কোথায় তাদের জন্য একটু বলতে চাই, বিএনপির নেতা তারেক জিয়ার সাজা হয়েছে কেন, অর্থপাচার মামলায় তার সাজা হয়েছে। এই অর্থপাচার মামলা কিন্তু আমাদের আবিষ্কার না, এটা করেছে আমেরিকা এবং আমেরিকার লোকজন (এফবিআই) বাংলাদেশে এসে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। সেই মানিলন্ডারিং মামলায় তার সাত বছরের সাজা এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানা হয়। এছাড়া ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরা চালান মামলা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলারও সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া। সাজাপ্রাপ্ত আসামি একটি দলের নেতা হয় কী করে। গ্রেনেড হামলা নিয়েও বিএনপি অপপ্রচার চালিয়েছে। এদের চরিত্রই অপপ্রচার চালানো। এদের কথায় মানুষ যেন বিভ্রান্ত না হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নামে ট্রাস্ট করে বিদেশি ফান্ড পেয়েছে খালেদা জিয়। একটা টাকাও কোনো এতিম পায়নি। কেউ পায়নি। সব টাকা তার ব্যাংকে জমা। সে কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেসব মামলায় সে সাজাপ্রাপ্ত। তারপর তার ভাই, বোন ও ভগ্নিপতি আমার কাছে এসে সাজা স্থগিত করার অনুরোধ করেন। আমি খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকতে দিয়েছি। কিন্তু এখানেও আপনাদের মনে রাখতে হবে আমার মা-বাবা-ভাই হত্যার সঙ্গে জিয়া জড়িত, এটা স্পষ্ট। গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ আমাদের নেতাকর্মী হত্যায় খালেদা-তারেক জড়িত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু মানুষের ওপর প্রতিশোধ নিতে যাইনি। ২০০১ সালের পর আমাদের নেতাকর্মীরা যেভাবে নির্যাতিত হয়েছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা কিন্তু কারও ওপর নির্যাতন করিনি। আমি তাকে (খালেদা জিয়া) যেখানে এভাবে সুযোগ দিয়েছি অথচ সে কী আচরণ করেছে আমার সঙ্গে। তার ছেলে কোকো যে টাকা পাচার করেছিল, সে টাকাও কিন্তু আমরা কিছু অংশ ফেরত আনতে পেরেছি। কোকো মারা গেছে আর তারেক জিয়ার সাজা হয়েছে। সেই তারাই আবার অর্থপাচারের কথা বলে কোন মুখে।
তিনি বলেন, কোকো মারা যাওয়ার পর আমি সান্ত্বনা দিতে গিয়েছিলাম। আমাকে ঢুকতে দেওয়া হলো না, দরজা বন্ধ। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা, আমাকে কত অপমান করেছে আপনারা ভেবে দেখেন। তারপরও আমি খালেদার প্রতি দয়া দেখিয়েছি, তাকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছি। কারণ, আমরা তো তাদের মতো এতো ছোট মন নিয়ে আসিনি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্থানীর সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম প্রমুখ।