ঢাকা, রবিবার ৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় ছয় হাজার কোটি টাকার মৎস্য ও জলজ প্রাণী ধ্বংস!

মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ,লক্ষ্মীপুর : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২৪ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৪৭:০০ অপরাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

বছরের  চৈত্র- বৈশাখ, মার্চ - এপ্রিল, সেপ্টেম্বর - নভেম্বর  মাসে চিংড়ি রেণু অবৈধ ভাবে আহরণ করে নদী পাড়ের অসাধু জেলেরা,  লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে চিংড়ি পোনা আহরণ মৌসুমের বিগত তিন মাসে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের মৎস্য সম্পদ ও জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে। 

সরেজমিনে লক্ষ্মীপুরের মেঘনাপাড়ে ঘুরে তথ্য সংগ্রহের পর চিংড়ি শিকারী, ব্যবসায়ী এবং কর্মকর্তা মৎস্য বিজ্ঞানীর সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসন শুধু পোনা ব্যবসায়ীদের মধ্যে অভিযান সীমাবদ্ধ রেখেছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।

 অন্যদিকে পোণা আহরণকারীরা বলেছেন, প্রশিক্ষণ পেলে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা হলে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করেই এ মৌসুমে প্রায় হাজার কোটি টাকা মূল্যের চিংড়ি পোণা আহরণ সম্ভব।

 

সরেজমিনে গিয়ে লক্ষ্মীপুর সদর এবং কমলনগর উপজেলা চর রমনী মোহন ইউনিয়নের বুড়িরঘাট সংলগ্ন প্রায় ১ কিমি এলাকায় অন্তত ১৫শ থেকে ২ হাজার পোনা আহরণকারীর দেখা মেলে। এদের মধ্যে শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সী নারী, পুরুষ ছিল। শিকারীদের মশারি এবং ঠেলা জাল নিয়ে চিংড়ি রেণু আহরণে ও বাছাই করার কাজে ব্যস্ত দেখা গিয়েছিল।

 

স্থানীয়রা জানায়, জেলার রায়পুর থেকে রামগতি উপজেলার টাংকি বাজার পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিমি এলাকায় চলে এ শিকার উৎসব। প্রতি বছর বৈশাখ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত মাস পর্যন্ত পুরো এলাকা জুড়ে কমপক্ষে ৪০ হাজার স্থানীয় এলাকাবাসী ও জেলে জুড়ে চিংড়ি পোনা ধরার উৎসবে মেতে ওঠে।

মেঘনার বুকের জালিয়ার চরের শিকারী রুস্তমকে পর্যবেক্ষণ করে এ প্রতিবেদক। শিকারী কিশোর মশারি জাল টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। এক ঘন্টার মধ্যে সে প্রতি ৫-১০ মিনিট পর পর তারা উপরে ওঠে আসে। প্রতিবার দেখা যায় এক-একটি বাগদা চিংড়ি পোনার সাথে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য পোনা-ডিম মশারি জালে উঠে আসে।

 রুস্তম শিকার করা এক টানের মাছ এ প্রতিবেদকসহ স্থানীয়রা গুণে সেখানে মাত্র ২১টি বাগদা পাওয়া যায়। আর অন্য প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় ৭শ ২৯টি। এ সময় ছোট ছোট অনেক অজানা পোকামাকড়ও দেখতে পাওয়া যায়। ওই তরুণ বাগদা পোনা নেয়ার পর ছোট অন্য মাছগুলো নদীর তীরেই ফেলে দিতে চাইলে এ প্রতিবেদকের বাধাঁয় শেষ পর্যন্ত নদীতেই ফেলা হয়।

শহরআলী মোড়  এলাকার বাসিন্দা মোঃ হাসান জানান, গত বছর তিনি চিংড়ি আহরণকারীদের ফেলে দেয়া কিছু উচ্ছিষ্ট তার নিজের পুকুরে ফেলেছেন। পরে এবার শুকনো মৌসুমে তার পুকুর অন্তত ১শ প্রজাতির বিভিন্ন মাছ পাওয়া গেছে।

 

ইলিশ, কোরাল, পোয়া, চেউয়া, লইট্টা, ভেটকি, পাঙাশ, রিটা, বাছা, বাতাসি, বাইলা, বাটা, কাঁকড়া, কুচিয়া, পাবদাসহ নাম না জানা অসংখ্য প্রজাতির মাছ পোনাশিকারীদের জালে নষ্ট হতে দেখছেন ২নং উত্তর  চরবংশী  এলাকার নদীর পাড়ের বাসিন্দা মো: মাহবুব। তিনি জানান এভাবেই তো প্রতিদিন কোটি কোটি মাছ নষ্ট হয়। তবে আমরা প্রশাসনের অভিযান শুধু ব্যবসায়ীদেরর মধ্যেই দেখছি।

মাঝ বয়সী নারী ছালেহা জানান, প্রতিদিন নদীতে ২ বার সকাল সন্ধ্যায় জোয়ারের পর কমপক্ষে ৪ ঘন্টা ভাটা থাকে। তখনই রেণু পোনা ধরা হয়। তিনি আরো জানান, চিংড়ির রেণু মৌসুমে শুধু একদিন কোস্টগার্ড তাদের কে নদী থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।

 

 

 

 

পোনা ব্যবসায়ী কামরুল অভিযোগ করে বলেন, মৎস্য বিভাগ ও কোস্টগার্ড ব্যবসায়ীদের সংগৃত মাছ নিয়েই অভিযান শেষ করে। কিন্ত নদীর হাজার হাজার শিকারী যে কত বড় ক্ষতি করে তাতে বাধাঁ দিতে দেখিনি।

 

রায়পুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, উপজেলায় 

অভিযান চালিয়ে কিছুদিন আগেও পিকআপভর্তি আট লাখ চিংড়ি রেণু জব্দ করেছে জেলা মৎস্য বিভাগ। ঢাকা-রায়পুর সড়কের রায়পুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে পিকআপভর্তি ৩৩ ব্যারেল (ড্রাম) চিংড়ির রেণু জব্দ করা হয়। জব্দকৃত পোনাগুলোর বাজারমূল্য আনুমানিক ৪০ লাখ টাকা বলে জানায় জেলা মৎস্য বিভাগ।পরে জব্দকৃত চিংড়ির রেণুগুলো রাত ১০টার দিকে সদরের মজুচৌধুরীরহাট ফেরিঘাট এলাকার মেঘনা নদীতে অবমুক্ত করা হয়।

 

তিনি আরো জানান চিংড়ি রেণু পোনা ধরার সময় স্থানীয়দের দ্বারা নষ্ট হওয়া জলজ প্রাণীর বাজার মূল্য নির্ণয় করা হয়নি। তবে এর মূল্য বিশাল হবে। তিনি আরো জানান, ব্যবসায়ীরা পোনা কেনার কারণে স্থানীয়রা ধরে আর সেজন্যই মূলত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান করা হয়। তিনি শিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান হচ্ছে বলেও জানান।

 

পোনা আহরকারীদের মাধ্যমে মেঘনায় মৎস্য ও জলজ সম্পদের ক্ষতি কেমন, তা জানতে কথা হয় রায়পুর ফিস হ্যাচারির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা  ড. মোঃ ওয়াহিদ মজুমদারের  সাথে। তিনি জানান,চিংড়ি পোনার আহরণের সময় অন্য মৎস্য সম্পদের ক্ষতির মূল্য নির্ধারণে আনুষ্ঠানিক গবেষণা হয়নি। তিনি নিজের অভিজ্ঞতার ব্যাখা দিয়ে জানান, একজন শিকারী প্রতি ঘন্টায় কমপক্ষে ১০ বার মাছ বাছাই করেন। প্রতিবার কমপক্ষে মাত্র ১শটি পোয়া মাছের বাচ্চা নষ্ট করলে দিনের ৪ ঘন্টায় সে ৪ হাজার পোয়া মাছের বাচ্চা নষ্ট করে। এভাবে ওই অঞ্চল একদিনে শুধু পোয়া মাছই ১শ ৬০ কোটি নষ্ট হতে পারে। প্রতিটি মাছের মূল্য ১ টাকা হলেও পুরো মৌসুমের মাত্র ৭০ দিনে এ ক্ষতি দাড়াঁয় গড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। অন্যান্য মূল্যবান মাছের হিসাব ছাড়াই এ ক্ষতি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, একটি বাগদার পোনা আহরণে অন্যান্য প্রায় ৭০-৮০টি সাদা মাছের প্রজাতির পোনা এবং প্লাঙ্কটন নিশ্চিত ধ্বংস হয়।

 

স্থানীয়ভাবে জানা যায়, বাংলাদেশের পুরো উপকূলেই এভাবে চিংড়ি পোনা ধরা হয়। লক্ষ্মীপুরের চার উপজেলা রামগতি, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর সদর ও রায়পুরের মেঘনা নদী ও ততসংলগ্ন সংযোগ খাল থেকে রেণু আহরণ মৌসুমের প্রতি মাসে আহরিত হয় প্রায় দেড়শ কোটি বাগদা চিংড়ির রেণু। প্রায় ৪০ হাজার স্থানীয় এলাকাবাসী ও জেলে এ পোণা ধরে। ৪টি উপজেলার প্রায় ২শ ৫০ জনের বেশি স্থানীয় ব্যবসায়ী চিংড়ি রেণুর এ ব্যবসার সাথে জড়িত। এদের প্র!ত্যেকের অধীন ২শ এর মতো শিকারী আছে। নদী থেকে আহরিত প্রাকৃতিক চিংড়ি চাষের জন্য অত্যন্ত মানসম্মত। তাই ঘেরের জন্য সবচেয়ে লাভবান এবং নিরাপদ এ প্রাকৃতিক রেণু। জেলার ছোট বড় ২০টি নদী ঘাট থেকে নৌ-পথ ও সড়ক পথে রেণু চালান করা হয় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার এব চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

 

মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে উপকূলীয় এলাকা থেকে বাগদা চিংড়ির পোনা আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্ত পোনার সাথে নদীর তীরের মানুষের বড় ধরণের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড জড়িত থাকার কারণে আইন করে আর অভিযান চালিয়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জেলেসহ স্থানীয়রা অভিমত দিচ্ছে, ইলিশ রক্ষার মতো সচেতনা বাড়িয়ে চিংড়ি রেণু আহরিত হলে ক্ষতি কিছু কাটিয়ে ওঠা যাবে। নতুবা এ ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড কমানো সম্ভব নয়। 

অভিযান চালিয়ে কিছুদিন আগেও পিকআপভর্তি আট লাখ চিংড়ি রেণু জব্দ করেছে জেলা মৎস্য বিভাগ। ঢাকা-রায়পুর সড়কের রায়পুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে পিকআপভর্তি ৩৩ ব্যারেল (ড্রাম) চিংড়ির রেণু জব্দ করা হয়। জব্দকৃত পোনাগুলোর বাজারমূল্য আনুমানিক ৪০ লাখ টাকা বলে জানায় জেলা মৎস্য বিভাগ।পরে জব্দকৃত চিংড়ির রেণুগুলো রাত ১০টার দিকে সদরের মজুচৌধুরীরহাট ফেরিঘাট এলাকার মেঘনা নদীতে অবমুক্ত করা হয়।

 

তিনি আরো জানান চিংড়ি রেণু পোনা ধরার সময় স্থানীয়দের দ্বারা নষ্ট হওয়া জলজ প্রাণীর বাজার মূল্য নির্ণয় করা হয়নি। তবে এর মূল্য বিশাল হবে। তিনি আরো জানান, ব্যবসায়ীরা পোনা কেনার কারণে স্থানীয়রা ধরে আর সেজন্যই মূলত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান করা হয়। তিনি শিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান হচ্ছে বলেও জানান।

 

পোনা আহরকারীদের মাধ্যমে মেঘনায় মৎস্য ও জলজ সম্পদের ক্ষতি কেমন, তা জানতে কথা হয় রায়পুর ফিস হ্যাচারির সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা  ড. মোঃ ওয়াহিদ মজুমদারের  সাথে। তিনি জানান,চিংড়ি পোনার আহরণের সময় অন্য মৎস্য সম্পদের ক্ষতির মূল্য নির্ধারণে আনুষ্ঠানিক গবেষণা হয়নি। তিনি নিজের অভিজ্ঞতার ব্যাখা দিয়ে জানান, একজন শিকারী প্রতি ঘন্টায় কমপক্ষে ১০ বার মাছ বাছাই করেন। প্রতিবার কমপক্ষে মাত্র ১শটি পোয়া মাছের বাচ্চা নষ্ট করলে দিনের ৪ ঘন্টায় সে ৪ হাজার পোয়া মাছের বাচ্চা নষ্ট করে। এভাবে ওই অঞ্চল একদিনে শুধু পোয়া মাছই ১শ ৬০ কোটি নষ্ট হতে পারে। প্রতিটি মাছের মূল্য ১ টাকা হলেও পুরো মৌসুমের মাত্র ৭০ দিনে এ ক্ষতি দাড়াঁয় গড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। অন্যান্য মূল্যবান মাছের হিসাব ছাড়াই এ ক্ষতি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, একটি বাগদার পোনা আহরণে অন্যান্য প্রায় ৭০-৮০টি সাদা মাছের প্রজাতির পোনা এবং প্লাঙ্কটন নিশ্চিত ধ্বংস হয়।

 

স্থানীয়ভাবে জানা যায়, বাংলাদেশের পুরো উপকূলেই এভাবে চিংড়ি পোনা ধরা হয়। লক্ষ্মীপুরের চার উপজেলা রামগতি, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর সদর ও রায়পুরের মেঘনা নদী ও ততসংলগ্ন সংযোগ খাল থেকে রেণু আহরণ মৌসুমের প্রতি মাসে আহরিত হয় প্রায় দেড়শ কোটি বাগদা চিংড়ির রেণু। প্রায় ৪০ হাজার স্থানীয় এলাকাবাসী ও জেলে এ পোণা ধরে। ৪টি উপজেলার প্রায় ২শ ৫০ জনের বেশি স্থানীয় ব্যবসায়ী চিংড়ি রেণুর এ ব্যবসার সাথে জড়িত। এদের প্র!ত্যেকের অধীন ২শ এর মতো শিকারী আছে। নদী থেকে আহরিত প্রাকৃতিক চিংড়ি চাষের জন্য অত্যন্ত মানসম্মত। তাই ঘেরের জন্য সবচেয়ে লাভবান এবং নিরাপদ এ প্রাকৃতিক রেণু। জেলার ছোট বড় ২০টি নদী ঘাট থেকে নৌ-পথ ও সড়ক পথে রেণু চালান করা হয় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার এব চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

 

মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে উপকূলীয় এলাকা থেকে বাগদা চিংড়ির পোনা আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্ত পোনার সাথে নদীর তীরের মানুষের বড় ধরণের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড জড়িত থাকার কারণে আইন করে আর অভিযান চালিয়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জেলেসহ স্থানীয়রা অভিমত দিচ্ছে, ইলিশ রক্ষার মতো সচেতনা বাড়িয়ে চিংড়ি রেণু আহরিত হলে ক্ষতি কিছু কাটিয়ে ওঠা যাবে। নতুবা এ ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড কমানো সম্ভব নয়।