চট্টগ্রামে গত কয়েক দিনের ব্যবধানে আবারো বেড়ে গেছে শীতের সবজির দাম। লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়ছে মৌসুমী বিভিন্ন সবজির দাম। এতে করে বিপাকে পড়তে হচ্ছে নিন্ম ও নিন্ম মধ্যবিত্ত মানুষকে। সহসাই সবজিসহ নিত্যপণ্যের লাগাম টানা না গেলে মানুষের জীবনে কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিবে এমন মত প্রকাশ করেছেন, ভোক্তারা। শীত কালিন সবজি ছাড়াও মুরগী, গরুর মাংস এবং জরুরি নিত্যপণ্য চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা-ময়দা, পেঁয়াজ ও আলুর দাম বেড়েই চলেছে। শীতের সবজি শুরুতে দাম বাড়তি থাকার পর মাঝখানে কয়েকদিন নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমানে দাম যেখানে কমে যাওয়ার কথা সেখানে আরো বেড়ে যাচ্ছে এমন অভিযোগ ক্রেতাদের। ফুলকপি, পাতা কপি, শিম, টমেটোর দাম অনেকটা ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। গতকাল নগরীর কাজীর দেউরি, বহদ্দারহাট, রেয়াজ উদ্দিন বাজার ও বায়েজিদের কাঁচাবাজার ও অক্সিজেন ও নয়ারহাট এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। ফুলকপি প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা। পটল, শসা, লাউ ও মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে। কাঁচা মরিচ ৪০-৫০ টাকা। তবে পেপে, আলু, ঝিঁঙ্গার দাম কিছুটা কমলেও। নতুন আলু (দেশী) বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা কেজি দরে। খুচরা বাজারের ব্যবসায়িরা জানিয়েছেন, শীতকালিন সবজির সরবরাহ আরো বাড়লে আগামী সপ্তাহে দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে মাছ-মাংসের বাজারেও দাম অনেকটা বেশী। গলদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকা কেজি দরে। পাবদা ৩০০-৩৫০ টাকা। ইলিশ মাছ ১ হাজার থেকে আকারভেদে ১২শ টাকা কেজি দরে। রুই মাছ ৩০০-৩২০ টাকা। দেশী কই মাছ ৪০০-৪৫০ টাকা। ফার্মের কই মাছ ২০০-২২০ টাকা। শিং মাছ ৪০০-৪৫০ টাকা। টেংরা মাছ (দেশী) ৪৫০-৫০০ টাকা। কাতাল মাছ ২৮০-৩০০ টাকা। তবে সিলভার কাপ, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া ১৩০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মুরগীর দাম উঠানামা করছে প্রতিদিন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগী বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকা। দেশি মুরগী ৩৮০-৪০০ টাকা, লেয়ার মুরগী ২৬০-২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকা। গরুর মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে (আকারভেদে) ৬০০-৬৫০ টাকা। কোথাও-কোথাও গরুর মাংস ৭০০ টাকা দরেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। দেশী মুরগীর ডিম বিক্রি হচ্ছে, এক হালি (৪টি) ৪৮ টাকায়। ফার্মের মুরগীর ডিম এক হালি (৪টি) ৩৬-৪০ টাকা। আর হাঁসের ডিম এক হালি (৪টি) ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দামও চড়া। দেশি মসুর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা। ভারতীয় মসুর ডাল ৮০-৮৫ টাকা। খেসারি ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে, মুগডাল ১৪০ টাকা, বুটের ডাল ৮০ টাকা, ছোলা (বুট) ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চালের বাজারের অবস্থাও একই পাইকারি বাজারে সিনিকেট চাল ৫৬ টাকা, বেতি চাল ৫৫, মিনি সিদ্ধ ৫৬, নাজির শাইল ৭০, জিরা শাইল ৬৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। অক্সিজেন এলাকায় বাজার করতে শিক্ষিকা কুজিস্তা জানান, শুধু সবজি আর মাছ-মাংস নয়, প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দামই বেড়েছে। সে তুলনায় আমাদের আয় বাড়েনি। ফলে পুরো মাস চলতে হয় অনেক কষ্ট করে। বাজার দরের এমন বেহাল অবস্থায় নিন্ম আয়ের মানুষ পড়েছে অনেকটা বিপাকে। রিক্সা চালক আব্দুল মোতালেব জানান, বাজার দরের এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। একই কথা জানিয়েছেন, সিএনজি ট্যাক্সি চালক মোহাম্মদ সুমন। বাজার মনিটরিং কমিটির তদারকির অভাবে পাইকারি ও খুচরা বাজারের ব্যবসায়িরা বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরী করে নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম ইচ্ছেমাফিক বাড়িয়ে চলেছে এমন অভিযোগ করেছেন, ক্রেতা ভোক্তারা। তবে অক্সিজেন এলাকার পাইকারি দোকান হাজী সিরাজ ষ্টোরের সত্ত্বাধিকারি এসএম শাহাবুদ্দিন জানান, কৃত্রিম সংকটের বিষয়টি সঠিক নয়। সরবরাহ বাড়লে আপনা-আপনিভাবেই কমে যাবে নিত্যপণ্যের দাম। তবে ভিন্ন মত প্রকাশ করলেন, একই এলাকার জাহাঙ্গীর ষ্টোরের সত্ত্বাধিকারি মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোড়ালো করলে, ক্রেতা-ভোক্তা ও ব্যবসায়িরা উভয়েরই উপকার হবে। মসলা দোকানি মো. সাজ্জাদ জানান, পেয়াজ আর আদা ব্যতিত অন্যান্য মশলার দাম আগের মতোই আছে। কোনো-কোনো ব্যবসায়িরা এ অভিযোগ অস্বীকার করে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বাজার দর কিছুটা বেশী বলে জানিয়েছেন।