সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড়-বজ্রপাতে ৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে সুনামগঞ্জে ও সকালে সুনামগঞ্জে এসব মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায় বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে বয়ে যাওয়া ঘন্টাব্যাপী প্রলয়ংকরী ঘূর্ণি ঝড়ে মা, মেয়ে ও ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার বহু ঘরবাড়ী, ফসল ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে ।
জানাযায়, উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের সুলেমান পুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক হারুন মিয়ার টিন সেড ঘরের উপর পাশ্ববর্তী দুটি বিশাল আকৃতির ঢেউয়া ও খস গাছ প্রচন্ড ঝড়ে উপড়ে ঘরের উপর পড়ে চাপা দিলে সাথে সাথেই স্কুল শিক্ষক হারুন মিয়ার স্ত্রী মৌসুমি বেগম (৩৫) মেয়ে মাহিমা বেগম(৪) ছেলে হোসাইন আহমদ (১) এর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।
পাটলী ইউপি চেয়ারম্যান আংগুর মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে প্রচন্ড শক্তিশালী ঘূর্ণি ঝড়ে বড় আকৃতির দুটি গাছ টিন ঘরের মধ্যে পড়ে চাপ দিলে মা ও ছেলে- মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার ৩ জন কে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, পরিবারটি খুবই গরীব। স্ত্রী সন্তানদের হারিয়ে একটি বেসরকারি স্কুলের খন্ডকালীন শিক্ষক হারুন মিয়া এখন পাগলপ্রায়।
জগন্নাথপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, মা ও ছেলে- মেয়ের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে ।
এদিকে জেলার শাল্লা উপজেলার নাছিরপুর গ্রামে বজ্রপাতে মুকুল খাঁ (৫০) ও তার ছেলে মাসুদ খাঁর (৭) মৃত্যু হয়েছে। সকাল সাতটার সময় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় মাসুদ খাঁ তার দুই ছেলে ও শ্যালক পুত্রকে নিয়ে বাড়ির পাশে জমিতে কৃষি কাজ করতে যান। সকাল সাতটার দিকে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে মুকুল খাঁ ও ছেলে মাসুদ খাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত মুকুল খাঁর ছেলে রিমন খাঁ (১১) ও শ্যালক পুত্র তানভীর হোসেন (৭) আহত হওয়ায় চিকিৎসার জন্য দ্রুত হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। এমন মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় পৃথক স্থানে বজ্রপাতে স্কুল ছাত্রীসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
বজ্রপাতে নিহতরা হলেন- বানিয়াচং উপজেলা সদরের ৩নং দক্ষিণ-পূর্ব ইউনিয়নের তাতারী মহল্লার বাসিন্দা আক্কেল আলীর ছেলে হোসাইন আহমেদ (১২), একই মহল্লার আব্দুর রহমানের মেয়ে রুমা আক্তার (১৩) ও খাগাউড়া ইউনিয়নের এড়ালিয়া গ্রামের সামছুল মিয়ার ছেলে আলমগীর মিয়া (২৫)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বানিয়াচং থানার (ওসি) মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, মৃত রুমা আক্তার স্থানীয় একটি স্কুলের ৬ষ্ট শ্রেণির ছাত্রী। সকালে সে বাড়ির পাশের মাঠে লাকড়ি শুকাচ্ছিল। এসময় ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এছাড়াও হোসাইন আহমেদ ও আলমগীর মিয়া হাওরে কৃষিকাজে ব্যস্ত থাকার সময় বজ্রাঘাতে গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মলয় কুমার জানান, মৃতদের তালিকা তৈরী করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।