ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১

স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের পর জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন আমাদের এই পদ্মা সেতু : কৃষিমন্ত্রী

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১৭ জুন ২০২২ ০৮:৪১:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, আমরা জানি পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্নের সেতু, আমাদের গৌরবের সেতুর, জাতির অহংকার সেতু, একাত্তরের ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে একটা নতুন জাতি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। বঙ্গবন্ধুর ডাকে এদেশের লক্ষ্য মায়ের সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল সর্বোচ্চ ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে। জীবন বাজি রেখে আমরা যুদ্ধ করছি। যুদ্ধে বিজয় আমাদের বাঙালি জাতির জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন, সবচেয়ে বড় সাফল্য। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বপরিবারের শাহাদাত বরণ করেন। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। এই হত্যার উদ্দ্যেশ ছিল বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধ্বংস করা। বাংলাদেশকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি দীর্ঘদিন দেশকে পরিচালনা করেছে। কখনো সামরিক শাসন জারি করে, কখনো স্বৈরাচারী কায়দায়, কখনো গণতন্ত্রের লেবাস পড়ে। 

শুক্রবার বিকালে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরপ একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রাপ্তিতে ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুলের সম্মানে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পরবর্তীতে ২০০১ সালে দেশে উন্নয়নের নতুন যাত্রা শুরু করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদ পাড় করেছে। তৃতীয় মেয়াদেও আমরা সাড়ে তিন বছর অতিক্রম করেছি। এই সময়ে এই সরকারের সাফল্য অর্থনীতির এমন কোন দিকে যেখানে আমাদের অর্জন হয়নি। যেটি সারা পৃথিবীতে প্রশংসিত হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে দৃশ্যমান অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে প্রভাব পরেছে। পদ্মা সেতু, আইসিটি, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রতিটি ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক উন্নয়ন হয়েছে। স্বাধীনতার পর পদ্মা সেতু আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় একটি অর্জন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের পর জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন আমাদের এই পদ্মা সেতু। একটি জাতির ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে থাকবে। যতদিন চন্দ্র সূর্য থাকবে যতদিন এই পদ্মা সেতু থাকবে ততদিন এই পদ্মা সেতুর সাথে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নাম ইতিহাসের পাতায় থাকবে। এই সেতু জাতির অহংকার, এই অহংকারকে ধরে রাখার জন্য যে কোনো রকম ত্যাগ স্বীকারের করতে দেশের নাগরিকরা পিছপা হব না। যত চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হোক না কেন আগামী ২৫ জুন এই সেতু উদ্বোধন হবে। সারা জাতি উৎসব করার মানসিকতা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সারাদেশ মানুষকে আমরা পদ্মা সেতু নিয়ে যেতে পারবে না। তবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষই বেশি যাবে উদ্বোধনের সময়। জাতির আনন্দে খুশিতে খুশি আমরা সবাই। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আগের চেয়ে অনেক সক্ষম। কোন শক্তি যদি এই আনন্দ উৎসবকে ব্যবহত করতে চায় তবে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে। 

কৃষিমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে কৃষির জন্য অনেক সাফল্য বয়ে আনবে। সারাদেশের ফুল সরবরাহ করে থাকে যশোরের কৃষকরা। এই ফুলের ট্রাক ঢাকায় ফেরি করে যেতে কোন সময় ২-৩ দিন সময় লাগতো। এতে অনেক ফুল নষ্ট হয়ে গিয়ে কৃষরা ক্ষতির মুখে পড়তো। পদ্মা সেতু চালু হলে মাত্র কয়েক ঘন্টায় এই ফুল ঢাকায় চলে যাবে। এই এলাকায় অনেক শাক-সবজি হয়। আজকে বাংলাদেশ দানাদার খাদ্যে সংয়সম্পূর্ন। আমাদের অর্থকরী ফসল শাক-সবজি, ফল-মূল বিদেশে রপ্তানি করছি। আমরা শুধু গামেন্সের উপর নির্ভরশীল নয়। আমরা শাক-সবজি, ফল-মূল সুন্দর প্যাকেজিং করে বিদেশে পাঠিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অজর্ন করতে পারবো। পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণ অঞ্চলের ফসল বিদেশে রপ্তানির দ্বার উন্মক্ত হবে। বিভিন্ন ফ্যাক্টটরি তৈরি হবে। দেশের অর্থনীতিতে পদ্মা সেতু বিরাট ভূমিকা পালন করবে। সারা দেশের সাথে ২১ টি জেলার নতুন করে সহজ ভাবে যোগাযোগ সৃষ্টি হবে।

কুমিল্লা সিটি কপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন খুবই সক্ষম ও সফল। যে নির্বাচনগুলো হয়েছে সেগুলো সুষ্ঠ হয়েছে। যে কোন মানুষই মনে করবে নির্বাচন কমিশন খুবই স্বক্ষম। এই নির্বাচনে খুব হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। মাত্র কিছু ভোটের ব্যবধানে নৌকা জিতেছে। আমরা সব সময় বিএনপিকে নির্বাচনে আহবান জানাই। আমরা চাই যে এমন একটা নির্বাচন হবে, সকল রাজনৈতিক দল ও মানুষ এখানে অংশগ্রহণ করবে। জনগন নির্বাচণের মাধ্যমে যাকে রায় দিবে সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী হবে। এ দেশের মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সামনের দিনে আবারও নেত্বতে দেখতে চায়।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুকের সভাপতিত্বে স্বরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি.এম মোজাম্মেল হক, এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের এমপি, ছানোয়ার হোসেন এমপি, আতাউর রহমান খান এমপি, হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী, তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, খান আহমেদ শুভ এমপি, ডা. মির্জা নাহিদা বন্যা প্রমুখ।