ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০শে কার্তিক ১৪৩১
ক্ষুব্ধ যাত্রীরা

বকেয়া বেতনের দাবি, ৫০ ঘণ্টা অবরোধের কবলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক

এম এইচ শাহীন, গাজীপুর | প্রকাশের সময় : সোমবার ১১ নভেম্বর ২০২৪ ০১:৩৬:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

গাজীপুরে টি অ্যান্ড জেড গ্রুপের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গাজীপুরের মালেকের বাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। টানা তিনদিন সড়ক অবরোধের কারণে এই মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুর থেকে টঙ্গী ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস থেকে কড্ডা-নাওজোড় পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে ওই সড়ক দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন পড়েছে। ফলে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা।

সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। মহাসড়কের পাশেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে রাত জেগে পালাক্রমে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। তবে এখন পর্যন্ত অবরোধে কোনো ধরনের ভাঙচুর ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। 

এদিকে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের কারণে স্থানীয় শাখা রোডগুলোতেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ছোট-বড় অনেক গাড়ি অপেক্ষাকৃত সরু রাস্তায় প্রবেশ করায় ওই রাস্তাগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

কারখানা শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চার মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে টি এন জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড গ্রুপের ৬টি কারখানার শ্রমিকেরা শনিবার সকাল থেকে আন্দোলনে নামেন। এক পর্যায়ে তারা মালেকের বাড়ি কলম্বিয়া মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দাবি আদায়ে গত তিন দিন ধরে তারা সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিকদের একটি অংশ রাতেও মহাসড়কে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। খবর পেয়ে কয়েক দফা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। তবে এখনও সড়কে অবস্থান করছেন আন্দোলন করা শ্রমিকেরা।

ইকবাল হোসেন নামে মোগরখাল এলাকার স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, গত ৫০ বছরেও গাজীপুরে এত দীর্ঘ সময় ধরে সড়ক অবরোধের রেকর্ড নেই। ব্যস্ততম এই মহাসড়ক দিয়ে দেশের প্রায় অর্ধেক অঞ্চলের মানুষ চলাচল করে। গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি তিনদিন ধরে অবরোধ করে রাখলেও সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, গত তিনদিন ধরে অনেক বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক এবং কাভার্ডভ্যান চালক- হেলপাররা চরম বিপাকে পড়েছেন। তারা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে আশপাশের বাড়িঘরগুলোতে ভিড় করছেন। তিনদিন ধরে অনেকে গোসল করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে বিক্ষুব্ধ কিছু পোশাক শ্রমিক গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া, বাসন সড়ক, চৌধুরী বাড়ি, ভোগড়া বাইপাস, চান্দপাড়া, মোগরখাল, ছয়দানা, মালেকের বাড়ি, ডেকেরচালা, সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন পোশাক কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের তাদের আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাতে থাকে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এসব এলাকার অন্তত ১৫টি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, মালিকপক্ষকে একাধিকার সময় দেওয়া হয়েছিল, ওনারা বারবার বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণে শ্রমিকেরা এখন আর আমাদের কথা বিশ্বাস করছে না।

বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে