নোয়াখালীর চৌমুহনী পৌরসভার গনিপুর গালর্স হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী সামিয়া সুলতানা শান্তা (১৬)। চলতি বছর সে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। গত ৫দিন থেকে সে অসুস্থ্য। অসুস্থ্য শরীর নিয়েই সে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে আসছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল বেলা ছিল রসায়ন পরীক্ষা। পরীক্ষায় অংশ নিতে নির্ধারিত সময়ে মায়ের সঙ্গে পৌর সভার নরোত্তমপুর বাসা থেকে পরীক্ষার কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে বের ও হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ফেনী-চৌমুহনী আঞ্চলিক মহা সড়কে ছিল দীর্ঘ যানজট। ট্রাফিক জ্যামে পড়ে ১৫ মিনিট দেরিতে পরীক্ষার কেন্দ্রে ঢুকার অপরাধে ওই পরীক্ষার্থী ছাত্রীকে পরীক্ষা দিতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্র সচিবের বিরুদ্ধে। তার নাম আবদুল মান্নান। তিনি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কেন্দ্র সচিবের হাত পা ধরেও পরীক্ষা দিতে না পেরে গত দুইদিন যবত নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে শুধু কান্না কাটি করছে ছাত্রীটি। মঙ্গলবার সকালে এস.এস.সি পরীক্ষার বেগমগঞ্জ সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে। ছাত্রীটির অভিভাবক ও তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং শিক্ষার্থীর অভিবাবক এই ঘটনার জন্য কেন্দ্র সচিবকে দায়ি করে বিশেষ ব্যবস্থায় তার রসায়ন পরীক্ষা নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন। তবে কেন্দ্র সচিব এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পরীর্ক্ষীর মা রাবেয়া সুলতানা অভিযোগ করে বলেন আমার মেয়ে অনেক মেধাবী। পরীক্ষার আগে সে অনেক পড়াশোনা করছে। গত ৫দিন ধরে সে জ্বর সর্দি কাশি ও বমিতে আক্রান্ত হলে তাকে সোমবার বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করাই। অসুস্থ্য শরীর নিয়েই সে গত ১৪ নভেম্বর পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষায় সে সবগুলো উত্তর লিখেছে। অসুস্থ্য শরীর নিয়ে মঙ্গলবার সকালে তাকে নিয়ে রসায়ন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পরীক্ষার হলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হই। চৌমুহনীতে ব্যাপক ও দীর্ঘ যানজট থাকার কারণে পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছাতে ১৫ মিনিট দেরী হয়। কেন্দ্রে ঢুকার পর কেন্দ্র সচিব আবদুল মন্নান তাকে বিভিন্ন প্রশ্নবানে জর্জরিত করে একবার নিচতলা আরেক বার দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যায়। এভাবে আরো ১৫ মিনিট সময় নষ্ট করে আমার মেয়েকে পরীক্ষা দিতে দেবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন। এরপর আমি ও আমার মেয়ে কেন্দ্র সচিবের কাছে অনেক অনুনয় বিনয় করে তাকে পরীক্ষা দিতে দেওয়ার অনুরোধ করলেও তিনি কর্নপাত করেন নি। পরীক্ষা দিতে না পেরে এক পর্যায়ে আমার মেয়ে কান্না কাটি করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এদৃশ্য দেখে গনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন ও ওই বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম ফারুক ভূইয়া এগিয়ে এসে কেন্দ্র সচিবকে ছাত্রীটিকে পরীক্ষা দিতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি কারো কথাই রাখেননি। পরীক্ষা দিতে না পেরে গত দুই দিন যাবত সে শুধুই কান্না কাটি করছে। কোন কিছুই খাচ্ছে না। তিনি বলেন করোনার কারনে সরকার শিক্ষার্থীদের প্রতি উদার মানসিকতার পরিচয় দিলেও কেন্দ্র সচিব কি কারনে আমার মেয়ের প্রতি এত কঠোর হলেন তা আমার বোধগম্য নয়। আগামী ২২ তারিখ তার জীব বিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সে ওই পরীক্ষায় ও অংশ নেবে। তাই বিশেষ ব্যবস্থায় তার মেয়ের রসায়ন পরীক্ষা গ্রহণ করা জন্য তিনি শিক্ষামন্ত্রী ও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
গনিপুর গালর্স হাইস্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম ফারুক ভূইয়া বলেন দীর্ঘ যানজটে পড়ে ছাত্রীটি কেন্দ্রে পৌছাতে ১৫-২০ মিনিট দেরি হয়েছে। কিন্তু তার তো পরীক্ষা দেওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষককে আমি অনেক অনুরোধ করলেও তিনি আমার কথা রাখেন নি। ছাত্রীটি অনেক মেধাবী। সে ৩০ মিনিট লেখার সুযোগ পেলেও ভাল ফলাফল করত। কিন্তু কেন্দ্র সচিব প্রতিহিংসার ভসিভূত হয়ে ছাত্রীটিকে পরীক্ষা দিতে দেয়নি। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও ছাত্রীটিকে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এব্যাপারে কেন্দ্র সচিব আবদুল মান্নান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন মেয়েটি ৪০ মিনিট পর কেন্দ্রে প্রবেশ করেছে। তাই তাকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, মঙ্গলবার রাতে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি টেলিফোনে আমাকে অবগত করেছেন। ওই ছাত্রীটি নিধারিত সময়ের অনেক পরে কেন্দ্রে প্রবেশ করেছে। তাই তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।