ঢাকা, শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আসবাবপত্র পাইনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঠিকাদারকে বিল বুঝিয়ে দিয়েছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৯ অগাস্ট ২০২২ ১২:১২:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ম্যানুফ্যাকচারিং সাপ্লায়িং অফ ফার্নিচার নামে একটি কাজের অনুমোদন হয় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গিলাবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে৷ তবে  বাজেটে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানটি কোন ধরনের আসবাবপত্র না পেলেও ঠিকাদারকে কাজটি সম্পন্ন করা বাবদ বিল বুঝিয়ে দিয়েছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও। 

 

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ইইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের নতুন ভবনটির উদ্বোধন করেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের আওতায় ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পর ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি নতুন ভবনে আসবাব সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রাক্কলিত খরচ ধরা হয়েছিল ১২ লাখ ৩৬ হাজার ১২৬ টাকা। ঠিকাদার সেই মূল্যের ৩৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম দর দেন। ফলে কাজ বাস্তবায়নে অনুমোদিত মূল্য দাঁড়ায় ৭ লাখ ৮১ হাজার ৮৩৯ টাকা। ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানের নামে কার্যাদেশ দেন ইইডি পঞ্চগড় কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক কুমার মণ্ডল।

 

২৮ আগস্ট সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ঝকঝকে তিনতলা ভবন। উদ্বোধনের প্রায় দুই বছর পার হলেও সেখানে বসার নতুন বেঞ্চ পায়নি শিক্ষার্থীরা। পুরোনো বেঞ্চ দিয়ে ভবনের নিচতলার কয়েকটি কক্ষে শ্রেণিকার্যক্রম চলছে। বাকি কক্ষগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।

 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান ই হাবিব বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যালয়ে কোনো আসবাবই সরবরাহ করেনি। ঠিকাদারি কাজের বিল উত্তোলন করতে হলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যয়ন লাগে। সেই প্রত্যয়ন ছাড়াই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে বিল পেল, তিনি বুঝতে পারছেন না।

 

আসবাব সরবরাহ না করলেও সাদমান এন্টারপ্রাইজের নামে ২০২১ সালের ২০ জুন ৫ লাখ ৪৭ হাজার ২৬০ টাকার বিল ছাড় করেছে ইইডি। বিষয়টি সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো.আমানুল্লাহ নিশ্চিত করেছেন।

 

ইইডি ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মফিজুল ইসলাম বলেন , মেসার্স সাদমান এন্টারপ্রাইজ হরিপুর উপজেলার একটি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। ওই কাজের বিপরীতে তাঁর প্রায় ১৪ লাখ টাকা জামানত রয়েছে। এ ছাড়া গিলাবাড়ি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে আসবাব সরবরাহ কাজের বিপরীতে প্রায় পৌনে দুই লাখ টাকা জামানত রয়েছে। তাই ঠিকাদারের অনুরোধে বিলটি ছাড় করা হয়েছে। এ মাসের মধ্যেই বিদ্যালয়ে আসবাব সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।

 

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মেহেদী ইকবাল বলেন, বিলটি তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলীর সময় ছাড় করা হয়েছে। জুন সমাপনীর সময় কাজের চাপের কারণে হয়তো তিনি সেটি খেয়াল করেননি। এ মাসের মধ্যে সে প্রতিষ্ঠানে আসবাব সরবরাহ করা হবে। 

 

মেসার্স সাদমান এন্টারপ্রাইজ মালিক মো. রাসেদ বলেন, ‘ইইডিতে বিভিন্ন কাজের বিপরীতে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। তাই অগ্রিম বিল পেতে অনুরোধ করেছিলাম। প্রকৌশল বিভাগও সেই অনুরোধে সাড়া দিয়েছে।’

 

ঠিকাদারকে বিল ছাড়ের সময় ঠাকুরগাঁওয়ের দায়িত্বে ছিলেন ইইডি পঞ্চগড়ের কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক কুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, এমন ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই। আসবাব সরবরাহের আগে ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হয়েছিল কি না, এত দিন পর তা কাগজপত্র যাচাই না করে বলা ঠিক হবে না।