ঢাকা, মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১লা আশ্বিন ১৪৩১
নির্বাচনে দিশাহারা ইসি

ইউপি ভোট: সংঘাতে প্রাণ গেছে ৮৪ জনের

Author Dainik Bayanno | প্রকাশের সময় : বুধবার ২২ ডিসেম্বর ২০২১ ০১:৩৪:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর

ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়ে দিশাহারা নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। প্রতিদিনই সংঘাত-সহিংসতা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ইউপি নির্বাচনে এ পর্যন্ত ৮৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। আসন্ন ইউপি ভোট নিয়ে আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছেন ভোটাররা। ভোটের কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন তারা। এদিকে আগামী ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ও ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, ইউপি ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশন দিশাহারা হয়েছে। নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ইসি। প্রশাসন তাদের কথা শুনছে না। ইউপি ভোটে প্রথম থেকেই ইসি কঠোর হলে সংঘাত-সহিংসতা কম হতো। সদ্য সমাপ্ত তিন ধাপের নির্বাচনে জাল ভোট, ব্যালট পেপার ছিনতাই, বোমা হামলা ও গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। অন্যান্য ধাপের নির্বাচন নিয়ে প্রতিদিনই সংঘর্ষ হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। ভাঙচুর চলছে বাড়িঘরে, নির্বাচনী ক্যাম্পে। হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন আওয়ামী লীগ ও দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। মেম্বার প্রার্থীরাও নিজ নিজ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে সংঘাত করছেন। তাই ভোট নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বিনা ভোটে নির্বাচিতের সংখ্যাও নির্বাচনী রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। পাঁচ ধাপে ৩৭৪৪ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৫৫৫ জন জনপ্রতিনিধি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম ধাপের ১৪১ জন, দ্বিতীয় ধাপে দ্বিতীয় ধাপে ৩৫৭ জন, তৃতীয় ধাপে ৫৬৯ জন, চতুর্থ ধাপে ২৯৫ জন ও পঞ্চম ধাপে ১৯৩ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। সব মিলিয়ে ইউপি ভোট নিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে রয়েছে ইসি।

 

এ বিষয়ে নির্বাচন বিশ্লেষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার  বলেন, নির্বাচন কমিশন আসলে নির্বাসনে রয়েছে। তারা দিশাহারা হয়েছে। সঠিকভাবে ইসি দায়িত্ব পালন করছে না। ইসি যদি সংঘাত-সহিংসতার বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিত তবে সংঘাত কম হতো।

 

তিনি বলেন, ইসির কঠোর অবস্থানের পরও যদি প্রার্থীরা সংঘাত-সহিংসতা করতেন, তবে কমিশন নির্বাচন স্থগিত করে দিত। সংঘাতকারী প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল করত। এ ছাড়া সংঘাত-সংঘর্ষের বিষয়ে তদন্ত করে নির্বাচনী ফলাফল বাতিল করত। ইসির এসব বিষয় করার ক্ষমতা রয়েছে। ইসি তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করলেই নির্বাচনী সংঘাত কমে যেত। আসলে সবকিছুর মূল কারণ হচ্ছে রাজনীতির ব্যবসায়ীকরণ। র্প্রার্থীরা টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনছেন। তাই তারা সংঘাত-সহিংসতা করে বিজয়ী হতে চান।

বিদায়ের আগে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভালো নির্বাচন করার চেষ্টা করছে। নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে নির্বাচন কমিশনাররা জেলায় জেলায় সফর করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কর্মকর্তাদের। তবু কোনো কাজ হচ্ছে না। নির্বাচনী পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। গতকাল চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। বৈঠক শেষে তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন কমিশনের আয়ুষ্কাল আর মাত্র ৫৫ দিন। এর আগে তারা তাদের দায়িত্ব সুসম্পন্ন করতে চান। তিনি বলেন, ‘বাংলায় প্রবাদ আছে, যার শেষ ভালো, তার সব ভালো। কাজেই এই শেষ ভালোটাকে আমরা সব ভালোর মধ্যে নিয়ে আসতে চাই।’ ইসি জানিয়েছে, সারা দেশে মোট ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ৪ হাজার ৫৭৮টি। আগামী ৩১ জানুয়ারি ষষ্ঠ ধাপের ২১৯টিসহ এ পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৯৯২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করল তারা।

 

ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে ডিসিদের চিঠি : আসন্ন চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সম্প্রতি দেশের সব ডিসিকে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ‘আসন্ন চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটদানে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জাতিকে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের কার্যকর ভূমিকা পালন ও প্রতিটি উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, প্রার্থী, সুশীল সমাজের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করে আচরণবিধি প্রতিপালনে সবাইকে উদ্বুদ্ধকরণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

 

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

 

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে নৌকার কর্মী রাজু আহমেদ (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

 

বৃহস্পতিবার বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে তিনি ও তার বড় ভাই আমজাদ হোসেন ছুরিকাহত হন। এরপর তাদের শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গুরুতর জখম আমজাদ হোসেন এখনো চিকিৎসাধীন। হতাহত দুই ভাই ও হামলাকারীরা প্রতিবেশী এবং উভয় পক্ষই নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের কর্মী। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মনসুর আহমেদের প্রচারক্যাম্প দখলের অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থী হাফিজুজ্জামান খানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ সময় ক্যাম্পের তত্ত্বাবধায়ককে মারধর করা হয়।

 

ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বসির আহম্মেদের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে। সোমবার ইউনিয়নের মাদরাসাবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

 

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিম হোসেনের সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। চতুর্থ ধাপে খুলনার বটিয়াঘাটা জলমা ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি এ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রার্থী না দিলেও ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ আশিকুজ্জামানের পক্ষে দলের নেতা-কর্মীরা মাঠে রয়েছেন। তবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, বটিয়াঘাটা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার ফারুক হোসেনসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

 

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মিন্টু ফকিরের ওপর হামলা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা। হামলায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মিন্টু ফকিরসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য প্রার্থী আবদুল মালেকের নির্বাচনী প্রচারণার সময় হাতবোমা হামলার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার রাত ৯টার দিকে বাদুড়িয়ে মধ্যপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পাবনা সদর উপজেলা মালিগাছা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মুনতাজ আলীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী উম্মাত আলীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। গতকাল পাবনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন সৈয়দ মুনতাজ আলী।

 

নাটোর সিংড়ার চৌগ্রাম ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলতাফ হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণা ঠেকাতে বাড়ি ঘেরাও করে পাহারা বসিয়েছেন নৌকা প্রার্থীর সমর্থক ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

 

আগামী ৫ জানুয়ারির ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যশোর সদর উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ায় ২৮ নেতাকে বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ১৫ প্রার্থীকেও বহিষ্কার করেছে দলটির জেলা কমিটি।

 

চতুর্থ ধাপে ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল উপজেলা পরিষদের হলরুমে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ।

 

মাদারীপুরের রাজৈরে ইউপি নির্বাচনে বাজিতপুর ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলাম হাওলাদারের প্রচারণায় বাধা ও কর্মীদের হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রাজৈর উপজেলা ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।