ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১

ইবি'র টেন্ডার বানিজ্য করে কোটি টাকা আয়

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৫৬:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর


কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রলীগের নেতার বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মেগা প্রকল্পে কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে   একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগা প্রকল্পে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য আশ্বস্ত করে পরবর্তীতে ঐসব  ঠিকাদারী  প্রতিষ্ঠান থেকে নিজের ক্ষমতার দাপট ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতার বিরুদ্ধে।

তার   বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া  সদর থানায় একটি সাধারণ ডাইরি জমা হওয়ার পর থেকেই বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা লালনের  নানা অপকর্মের ফিরিস্তি ।
সম্প্রতি  আক্তার ফার্নিচারের এরিয়া ম্যানেজারকে ইবি গেটের সামনে থেকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ১০ লক্ষ টাকা  লালন দাবি করে বলে অভিযোগ করে প্রতিষ্ঠানটি।   এর পর থেকেই মানহানিকর তথ্য অপপ্রচারসহ আতংকগ্রস্থ হয়ে  একটি সাধারন ডায়েরী করেছে দেশের স্বনামধন্য এই শিল্প প্রতিষ্ঠানের এরিয়া ম্যানেজার।  যার জিডি নং- ৩২৮/২২ । আক্তার ফার্নিচারের এরিয়া ম্যানেজার  কে এম রোজাউল ইসলাম জানান,  ঢাকা অফিস খেকে লালন ১ লক্ষ টাকা নিয়ে আসে। বাকি ৯ লাখ টাকা লালন ও তার পেটুয়া বাহিনীর সদস্য  ফারুক (ওরফে ভেস্পা ফারুক) বিভিন্ন সময় মুঠোফেনে প্রাননাশের হুমকি দিয়ে টাকার জন্য  তাগিদ দিতে থাকে। এর মধ্যে  ফারুক (ওরফে ভেস্পা ফারুক) কয়েক দফা কুষ্টিয়া শহরস্থ ছয় রাস্তার মোড় এলাকায় অবস্থিত   আখতার ফার্নিচারের শো রূমে গিয়ে টাকার জন্য হুমকি দিয়ে আসে। যার সিসিটিভি ফুটেজ উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিকট সংরক্ষিত আছে। সোলার ইলেক্ট্রো (এ.সি. বিএল), আসিফ ইন্টারনেশনাল, মাইশা কনস্ট্রাকশন, মজিদ এন্ড সন্স, ও,এম,সিসহ বেশ কিছু ঠিকাদ্বার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভয়ভীতি ও জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছক দুজন ঠিকাদ্বার জানান, ইবি ক্যাম্পাসের ভেতরে টেন্ডার পেয়ে কাজ করতে গেলে লালন কে  কমিশন দিতে হয়। ১-৫% কমিশন দিয়েক হবে,  টাকা না দিলে সাইডের কাজ বন্ধ করে দিতো লালন। আবার টাকা দিয়েও তার হাত থেকে রেহায় পাওয়া যায় না। বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় ভিন্ন ভিন্ন অজুহাতে লাখ লাখ টাকা দাবি করতো। । অনেক সময় প্রাইভেট কার ও মাইক্রো থামিয়ে টাকা  আদায় করতো সে । অপরদিকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপন নথী টেন্ডারের আগেই ফাঁস করতো এক  কর্মকর্তা। তার দেওয়া নথি ধরে টেন্ডারের কাজ পাইয়ে দেবে বলেও অনেকের নিকট থেকে টেন্ডারের আগেই টাকা হাতিয়ে নিতো এই লালন।  এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষক নাম পরিচয় গোপন রেখে জানান, লালনের কাছে সবাই জিম্মি। বিভিন্ন কৌশলে গোপন কথাপোকথন রেকর্ড করতো। পরে তা এডিট করে ব্লাক মেইলের মাধ্যমে টাকা দাবি করতো। টাকা না দিলে অডিওসহ নানান বিষয়ে কুৎসা রটিয়ে ভাইরাল করার হুমকিও দিতো সে। আমরা শুনেছি তার এই অর্থ আদায়ের সাথে ইবির  প্রশাসনিক ভবনের কিছু  অসাধু কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে। তাদের অনৈতিক চাহিদা পুরন এবং অর্থনৈতিকসহ সুবিধা প্রদান করেই লালন এই চক্র গড়ে তোলে। 
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়,কুষ্টিয়ার পার্শবর্তী জেলা মেহেরপুরের গাংনীর ছেলে মিজানুর রহমান লালন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাত্তক ভর্তি হওয়ার পরই ভাগ্য খুলে যায় লালনের। ছাত্রলীগের ছায়াতলে এসে নিজেকে বড় মাপের নেতা পরিচয় দিয়ে এবং প্রভাবশালী নেতাদের নাম ভাঙিয়ে  ঠিকাদার ও ঠিকাদারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে নানা রকম ভয় ভীতি ও ক্ষমতা প্রদর্শনের হুমকি দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। কখনও প্রভাবশালী নেতার আত্মীয়র পরিচয়ে আবার কখনো দুদকের ভয় ভীতি দেখিয়ে আদায় করেছে এইসব  টাকা।  দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তার কাছে জিম্মি ও নিরুপায়। অসৎ উদ্দেশ্যে অডিও রেকর্ড , কল রেকর্ডসহ ব্যাক্তিগত খুটি নাটি বিষয় গোপন ধারন করে ব্লাকমেইল করতেও পটু এই লালন। এমনই  অভিযোগ করেন  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী শিক্ষকদের একজন।
এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রধান প্রোকৌশলী মন্সুী তরিকুল বলেন, আমি লোকমুখে এমনটি শুনেছি। সাবেক পিডি আলী হাসান জানান, আমি এসব বিষয়ে জানিনা। ভাইচ চ্যান্সেলরের পিএস আইয়ুব আলীর সাথে কথা হলে তিনি ব্যাস্ত আছে বলে ফোনটি কেটে দেয়। ইবি শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল আরাফাত বলেন, ব্যাক্তি দায় কোন সংগঠন নিতে পারে না। সে ইবির বৈধ ছাত্রও নয়। আমিও লোক মুখে তার এই টাকা নেয়ার বিষটি শুনেছি। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি আতাউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি লালনের বিরুদ্ধে জিডির বিষয়ে শুনেছি। তদন্তে ঘটনা সত্য হলে তার বিরুদ্ধে আইগত ব্যাবস্থা নেয়া উচিৎ। জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমজাদ হোসেন রাজু সাংবাদিকদের বলেন, লালন আমার দুর সম্পর্কের আত্মীয়। আমার নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু করলে আমার কি করার আছে, যেহুতু রাজনীতি করি। এ ঘটনায় ইবির ভাইচ চ্যান্সেলর শেখ আব্দুস সালামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে তেমন কিছু জানিনা। তবে  ঐসব প্রতিষ্ঠান কেন টাকা দেবে। যদি ঘটনা সত্য হয়ে থাকে তাহলে জিডি কেন সরাসরি মামলা করা উচিৎ।
এ বিষয়ে মিজানুর রহমান লালন বলেন, আমি কোন টাকা নেইনি। সামাজিক ভাবে আক্তার ফানির্চারের বিষয়টা মিমাংসা করা হয়েছে। কেন পরে জিডি করলো আমি সেটা জানিনা। আপনার সাথে দেখা হলে সব বলবো।