ঢাকা, রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪শে ভাদ্র ১৪৩১

উপজেলা সভাপতি পদে এগিয়ে মিজান - মামুন, সম্পাদক পদে মেয়র - বাবুল - মারুফ এগিয়ে

মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ, করেসপন্ডেন্ট : | প্রকাশের সময় : সোমবার ৩০ মে ২০২২ ০৭:২৫:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

১৯ বছর পর মঙ্গলবার ৩১ই মে সকাল ১০টায় লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২টি অধিবেশন ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে রায়পুর সরকারি মার্চেন্টস একাডেমী মাঠে।  অনুষ্ঠিত  এ সম্মেলনকে ঘিরে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরগণ। উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সম্মেলন সফল করার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।যদিও ১০ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার কাউন্সিলর তালিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ নেতা -কর্মী সমর্থকরা। 

 

২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ০৩ বছরের জন্য নির্বাচনের মাধ্যমে উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছিল।  ২০১৩ সালে চার বার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও দলীয় কোন্দলের কারণে শেষ পর্যন্ত সম্মেলন করা যায়নি। সর্বশেষ ২০২২ সালের বর্ধিত সভায় জেলা আওয়ামীলীগের সভায় বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচনায় উঠে আসে।  

 

পুরো উপজেলা জুড়ে বিরাজ করছে সাঁজ সাঁজ রব। মঙ্গলবার রায়পুর সরকারি মার্চ্চেন্টস একাডেমীর মাঠে সকাল ১০টায় এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।   

 

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের চেয়ে কাউন্সিল, কর্মী সমর্থকদের মাঝে হিসাব নিকাশ বেশি চলছে। চায়ের দোকান, দলীয় কার্যালয় ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিজ নিজ নেতাদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা । 

 

রায়পুর পৌর মেয়র ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মেয়র গিয়াসউদ্দীন রুবেল ভাট সম্মেলন নিয়ে বলেন, ১৯ বছর পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নেতা - কর্মীরা উজ্জীবিত। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পদচারণায় মুখরিত হবে উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সম্মেলন। 

 

 

সভাপতি পদে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী এডভোকেট মিজানুর রহমান  মুন্সী এবং মামুনুর রশিদ আলোচনায় রয়েছেন।সাধারণ সম্পাদক পদে পদে প্রবীণদের সাথে ভোটযুদ্ধে নবীনরাও। 

 

রায়পুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মারুফ বিন জাকারিয়া বলেন, ১৯ বছর ধরে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের দিয়ে আওয়ামীলীগ এর কর্মকাণ্ডের পরিধি ও ভোট বাড়েনি। তাই নতুন নেতৃত্বের আবির্ভাব জরুরী। নবীন ও শেখ হাসিনা বান্ধব নেতা তৈরিতে কাউন্সিলররা অর্থ নয় বিবেক দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। 

 

উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সভাপতি পদে যারা প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তারা হলেন, 

মামুনুর রশীদ(এম,এ) বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, উপজেলা আওয়ামীলীগ। এড. মিজানুর রহমান মুন্সী(এম,এস,সি), সদস্য, উপজেলা ও জেলা আওয়ামীলীগ তিনি সাবেক সাঃ সম্পাদক, জেলা আইনজীবী সমিতি। যিনি আগের সম্মেলনে সভাপতি পদে মরহুম দুলাল চৌধুরীর সাথে ৩ ভোটে হেরেছেন।

সাইয়েদুল বাকিন ভূইয়া(এম,এ), সাবেক ছাত্রনেতা। বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী, শিক্ষানুরাগী তিনি সাবেক বিমানমন্ত্রী শাহজাহান কামাল এমপির জামাতা।মামুনুর রশীদ(বি,এ), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি (১৯৮৯-১৯৯১)। নবী মাহেনুর করিম মান্নু চৌধুরী(বি,এ)  কেন্দ্রীয় হকার্স লীগের নেতা। রায়পুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাঃ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা বকুল চৌধুরীর সহোদর।

 

আলতাফ হোসেন হাওলাদার (বিএসসি), সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। সাবেক সভাপতি, ২ নং চরবংশী ইউনিয়ন।তবে বিদ্রোহী করে ক্ষমা পেলেও কাউন্সিলর করেনি নিজ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ কমিটি উপজেলা আওয়ামীলীগ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাষ্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদেরকে।তার প্রার্থীতা ঘোষণা করলেও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নতুন নির্দেশনার পরে নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন রায়পুর আওয়ামীলীগ এর ভোটব্যাংক খ্যাত আলতাফ মাষ্টার।

 

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন,  উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাজী ইসমাইল খোকন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজি নাজমুল কাদের গুলজার,যুগ্ম সাধারণ  সম্পাদক হারুনুর রশিদ,  বর্তমান মেয়র গিয়াস উদ্দীন রুবেল ভাট, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মারুফ বিন জাকারিয়া,যুবলীগের সাবেক আহবায়ক কামরুল হাসান রাসেল,  সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শফিক খান ,ইউছুপ আজম সিদ্দিকী এবং সাজ্জাদুল ইসলাম তুষার  ১০ জন  মাঠে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন।

 

সভাপতি পদে প্রার্থী এডভোকেট মিজানুর রহমান মুন্সী বলেন, ২০০১ সালের লক্ষীপুরের রাজনীতির মহাসংকট কালীন সময়ে সকল নেতা কর্মীকে আইনী সহয়তা দিয়েছি। হাজার হাজার নেতা কর্মীকে জেলখানা থেকে আইনী লড়াই করে মুক্ত করেছি। তৃনমূলের সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য আমি প্রতিটি ওয়ার্ড সম্মেলন করেছি। ক্ষমতাসীন দলের একজন কর্মী হিসাবে আমি রাজনৈতিক জীবনে, ব্যক্তি জীবনে এবং পেশাগত জীবনে কোন দুর্নীতি অনিয়ম আর্থিকভাবে অনৈতিক কোন সুবিধা আমাকে স্পর্শ করতে পারে নাই।তাই কাউন্সিলর লিষ্ট যতই মনগড়া হোক ভোট হলে জয় নিশ্চিত আমার। 

 

সাধারণ সম্পাদক পদে রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান বলেন, ভোট অনুষ্ঠিত হলে জয় আমারই হবে, যদি সুষ্ঠু ভোট হয় তবে পরাজয় হলেও ফলাফল মেনে নিবো, আওয়ামীলীগের জন্যই কাজ করে যাবো।

 

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক  এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান মুন্সি বলেন, সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।বিভিন্ন সেক্টরে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নেতাকর্মীদের। সম্মেলনকে ঘিরে একটি নতুন আবহ তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হওয়ায় নেতাকর্মীরা চাঙ্গা রয়েছেন।   

 

উল্লেখ্য ,১৯ বছর পর মঙ্গলবার (৩১ মে) রায়পুর শহরের সরকারি মাচ্চেন্টস একাডেমির মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

 

নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জেলাজুড়ে ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণ নির্মাণ করে নিজ নিজ নেতাদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্যান্ডেল নির্মাণসহ মাচ্চেন্টস একাডেমির মাঠজুড়ে সামিয়ানা টানানো হয়েছে।

 

সম্মেলন উপলক্ষে রায়পুর ও সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী রবিদাসের পুল থেকে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ-রায়পুর উপজেলার বোর্ডারবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কে ১০ কিলোমিটার সড়কের ওপরে স্থাপন করা হয়েছে তোরণ। সড়কের দুই পাশে শত শত ব্যানার ও ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে।

 

সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিন বছরের জন্য নির্বাচনের মাধ্যমে উপজেলা কমিটি গঠন হয়েছিল। ২০০৩ সালে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হোসেন (দুলাল) চৌধুরী সভাপতি এবং রায়পুর পৌরসভার মেয়র হাজী ইসমাইল খোকন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ৬৭ সদস্যের এই কমিটির সভাপতিসহ ইতিমধ্যে ২১ নেতাই মারা গেছেন।বর্তামানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন  মামুনুর রশিদ।