ঢাকা, শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ই আশ্বিন ১৪৩১
*বেসরকারি ক্লিনিকের অর্থলিপ্সা-ডাক্তারদের নৈতিকতার অভাবই এর জন্য দায়ী

কিশোরগঞ্জে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে সিজার

আশরাফুল ইসলাম তুষার,কিশোরগঞ্জ: | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২ মার্চ ২০২৩ ০২:১৫:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

কিশোরগঞ্জে সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। প্রয়োজন ছাড়াই কতিপয় চিকিৎসক ও পরিবার বেছে নিচ্ছেন এ পদ্ধতি।এখন শতকরা প্রায় ৮০ ভাগেরও বেশি শিশু সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে বলে জানা যায়। সিজারিয়ান বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বেসরকারি ক্লিনিকের অর্থলিপ্সা, সরকারি ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু না হওয়া এবং ডাক্তারদের নৈতিকতার ঘাটতি ছাড়াও মা ও তার পরিবারের অসচেতনতাকে দায়ী বিশেষজ্ঞজনেরা। এতে যেমন বাড়ে প্রসূতির স্বাস্থ্য ঝুঁকি, তেমনি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর বড় রকমের অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করছে।

 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা সরকারি হাসপাতাল গুলিতে কোন সিজারিয়ানের ঘটনা না থাকলেও ক্লিনিকগুলোতে এসব সিজারিয়ান করা হয়। সিজারিয়ারিয়ানের পর প্রসূতি মায়েদের শরীরে দেখা দেয় নানা জটিলতা।পরবর্তী সন্তান ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। তারপরও মা যদি সুস্থও হয়ে উঠে সার্জারির পরে তাও পরবর্তী সন্তান ধারণে যথেষ্ট ঝুঁকি থেকে যায়। এই ধরনের সার্জারি ইউটেরাস বা জরায়ুকে দুর্বল করে ফেলে। একবার সিজার করলে পরবর্তীতেও সিজার করতে হয়। অনেক সময় জরায়ু কেটে ফেলে দিতে হয়। প্রস্রাবের থলিও ফেটে যায়। অনেক সময় এত রক্তপাত হয় যে মাকে আর রক্ষা করা যায় না।

একবার সিজার করলে পরবর্তীতেও সিজার করতে হয়। অনেক সময় জরায়ু কেটে ফেলে দিতে হয়, এত রক্তপাত হয় যে মাকে আর রক্ষা করা যায় না, প্রস্রাবের থলিও ফেটে যায়।

কী কারণে সিজারিয়ানের সংখ্যা বাড়ছে এ ব্যাপারে পাওয়া গেছে কয়েকটি কারণ। প্রথমতঃ বেশি বয়সে বিয়ে, গর্ভবতী মায়েরা বা তার পরিবারের ইচ্ছা, বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের প্রবণতা। অনেক পরিবার বা মা আছেন তারা সন্তান প্রসবের জন্য কষ্ট করতে চান না। কোনো কারণ ছাড়াই সিজারিয়ান করাতে চান। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকদের কিছু করার থাকে না। অন্যদিকে বহু বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের একমাত্র অর্থ উপার্জনের উপায় হচ্ছে সিজারিয়ান ।

 

গত রবিবার যশোদল এলাকার অনুমোদনহীন একটি ক্লিনিকে ডাক্তারের ভূল চিকিৎসায় সিজারিয়ান অপারেশন করার সময় প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।এ ঘটনার পর পরই ঘা ঢাকা দেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তার।পাশ্ববর্তী শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রসূতির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।এজাহার নামীয় ২ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, সন্তান প্রসবে অনেক কষ্ট হয় বলে সিজারিয়ান করানো হয়।সিজারিয়ান অপারেশন করার পর মাসখানেক ভাল থাকলেও এখন নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এখন কোন কাজ করতে পারছি না। নিজের কাজ করতে পারছি না সন্তানের কোন যত্নও নিতে পারছি না।

 

কিশোরগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সদ্য বিদায়ী উপ-পরিচালক এস এম খাইরুল আমিন জানান,আমরা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে শতভাগ নরমাল ডেলিভারি করে থাকি।

এখন প্রায় ৮০ ভাগ সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান করানো হচ্ছে।কিন্তু সরকার চাচ্ছে শতভাগ নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের ব্যাবস্থা করতে।আমরা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে আমরা প্রতি মাসে ৭০-৮০ জনের নরমাল ডেলিভারির ব্যাবস্থা করছি।তাই সবাইকে অনুরোধ করবো গর্ভবতী বা প্রসূতী মায়েদের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে পাঠানোর।তাহলে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান জন্মদান করানো হলে সন্তান ও মায়েদের স্বাস্থ্যঝুকি কমে।

পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ প্রসূতিদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে।