ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ইউটিউব দেখে কুল চাষে স্বাবলম্বী আব্দুর রাহিম, বছরে আয় ১০ লাখ টাকা।
স্বাদ ও পুষ্টিতে মৌসুমি ফল বরই একটি উৎকৃষ্ট মানের ফল, মানব দেহের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য ও ভিটামিনের উৎস হচ্ছে কুল। কুল শুধু ফল হিসেবেই নয় এ থেকে আচার, চাটনি তৈরি করা হয়। সফল কুল চাষিদের মধ্যে একজন হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কাইতলা উত্তর ইউনিয়নের নারুই (ব্রাহ্মণহাতা) গ্রামের যুবক আব্দুর রাহিম ।
বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে কৃষি ক্ষেত্রে কিছু করা যায় কিনা ভাবতে থাকেন তিনি। ইউটিউব দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে নেমে পড়েন কৃষি কাজে। নিজেদের পর্যাপ্ত জমি না থাকায় পাশের নাটঘর ইউনিয়নের নাটঘর সড়কপাড়া পূর্বপাশে পাঁচবিঘা জমি ইজারা নিয়ে ২০২১ সালের শুরুতে ইন্ডিয়া থেকে সংগ্রহ করেন ৪ প্রজাতির কুল গাছ। সেই গাছগুলোতে দুলছে থোকায় থোকায় কুল।
আকার ও স্বাদে ভালো হওয়ায় বাজারে চাহিদাও বেশ। প্রথম বছর ৩২০ টাকা কেজি করে বাজারে বিক্রি শুরু করেন। এখন খুচরা বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। বছরে অন্তত ১০ টন কুল উৎপাদন হয় তার বাগানে, বছরে তিনি আয় করছেন প্রায় ১০ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ১৫০ শতক জায়গায় গড়ে তোলা কুল বাগান পুরোটা নেট দিয়ে ঘেরা। ভেতরে প্রবেশ করে গাছে ঝুলতে দেখা যায় সবুজ-হলুদ ও লালচে বলসুন্দরী কুল। বিক্রির জন্য আব্দুর রাহিমসহ কয়েকজন গাছ থেকে বরই তুলে ব্যাগে বা ঝুড়িতে রাখছেন। সাধারণত সেপ্টেম্বর মাসে গাছে ফুল আসে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে পাকতে শুরু করে। আকারে বড় ও স্বাদে সুমিষ্ট হওয়ায় বাগানেই বিক্রি হয়ে যায় সব বরই।
আব্দুর রাহিম বলেন, ২০২১ সালে ইউটিউব দেখে কুল চাষে আগ্রহী হয়। নিজেদের জমি না থাকায় নাটঘর গ্রামে ৫ বিঘা জমি প্রতি বছর ১৫ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে কুল চাষ করি। কুল চাষে প্রথম বছর খরচ হয়েছে বেশি, তারপরও আলহামদুলিল্লাহ লাভ হয়েছে৷ এখন আর বেশি খরচ হয়না, ৪ বছর পূর্বে যে গাছ লাগানো হয়েছে সেই গাছ গুলো থেকে প্রতি বছর কুল আসে। বর্তমানে আমার বাগানে ৪ ধরনের কুল রয়েছে—আপেল কুল, কাশ্মীরি কুল, বনসুন্দরী কুল ও বাউকুল আছে। ফলন দেখে আমি খুব খুশি। প্রত্যেক দিন বাগান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাগান থেকেই কুল কিনে নিয়ে যান ৮০ টাকা ধরে। আর খুচরা বিক্রি করছি ১২০ টাকা ধরে। এ বছর সিজনের শুরুতেই আমি ৫০ হাজার টাকার কুল বিক্রি করেছি।
আব্দুর রাহিম আরও বলেন, প্রথমে ৩ বিঘা জমিতে কুলবাগান শুরু করলেও এ বছর তিনি আরও সাড়ে ২ বিঘা জায়গায় বাগান সম্প্রসারণ করেছেন। এ বাগানে আগামী বছর থেকে তিনি কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকার কুল বিক্রির আশা করছেন, আব্দুর রাহিমের ৪জন শ্রমিক নিয়ে পুরো বাগানের কুল সংগ্রহ করা সহ পরিচর্যা করেন। প্রথমে ওই এলাকায় আব্দুর রাহিম বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ শুরু করেছেন। তার সাফল্য দেখে কয়েকজনকে কুল চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে।
কুল চাষি আব্দুর রাহিমের দাবি এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোন আর্থিক সহযোগিতা পাইনি৷ উপজেলা কৃষি অফিসে ও ইউনিয়ন কৃষি অফিসে যোগাযোগ করেও কোন সহযোগিতা পাইনি। উপজেলা কৃষি অফিসারদের সহযোগিতা পেলে কুল চাষে আরও এগিয়ে যেতাম।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, নাটঘরের বাগান সম্পর্কে সাংবাদিকদের মাধ্যমে অবগত হয়েছি। আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার ফাস্ট প্রায়োরিটি হচ্ছে সকল কৃষককে পরামর্শ দেওয়া। আর উপযোগী সহযোগিতা হলো প্রকল্প ভিত্তিক, প্রকল্প যদি আর্থিক জোগান থাকে সেক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই পৌছে দিব। যেহেতু আমাদের পূর্বে প্রকল্প ছিলনা, এখন প্রকল্প আছে, তাহলে আমরা তাকে আন্তপরিচর্যা আওতায় আনার সুযোগ আছে এবং আমার সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আছে তাকে আমি অবগত করে দিব সে যেন অবশ্যই কৃষকের যে চাহিদা সেই চাহিদা মত পরামর্শ প্রদান করে।
বায়ান্ন/পিএইচ