ঢাকা, বুধবার ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ই পৌষ ১৪৩১

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে দ্বিকক্ষ সংসদ: সংস্কার কমিশনের ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:৪৭:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ ঠেকানো এবং গণতান্ত্রিক চর্চার উন্নয়ন ঘটানোর লক্ষ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এককভাবে কোনো ব্যক্তি বা দলের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার পথ রুদ্ধ করতেই এমন প্রস্তাবনা বিবেচনায় আনা হয়েছে। একই সঙ্গে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল এবং প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিত করার প্রস্তাবের দিকেও মনোযোগ দিয়েছে কমিশন।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, এককক্ষবিশিষ্ট সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, "দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের ক্ষেত্রে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনাগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে, যা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করতে পারে।"

কমিশনের সূত্র মতে, এককক্ষবিশিষ্ট সংসদে একটি দল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগে মানুষের অধিকারবিরোধী আইন পাস করতে পারে বা সংবিধান সংশোধন করতে পারে। এই পরিস্থিতি এড়াতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাবনা সামনে আনা হয়েছে।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সাংসদদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার হরণ করে বলে মতামত দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনেরা। অধ্যাপক রীয়াজ এ প্রসঙ্গে বলেন, "এই অনুচ্ছেদ সংসদ সদস্যদের হাত-পা বেঁধে দেয়, যা একদলীয় আধিপত্যকে আরও দৃঢ় করে। এটি পরিবর্তন না করলে সংসদে গণতন্ত্র চর্চা অসম্ভব।"

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিত করার বিষয়ে বেশিরভাগ অংশীজন ও নাগরিক মতামতে একমত হয়েছেন। কমিশনও এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি সংসদ নেতা এবং দলের প্রধান হওয়ার নিয়ম পরিবর্তনের প্রস্তাবও বিবেচনায় রয়েছে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার জন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দিতে পারে কমিশন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংবিধান পুনর্লিখনের প্রস্তাব উঠে আসে। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবে কমিশন বিদ্যমান সংবিধানের সংশোধনের দিকেই বেশি জোর দিচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধান ছাড়াও ১২০টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে সংশোধনের জন্য সুপারিশ তৈরি করছে কমিশন।

সংবিধান সংস্কার কমিশন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের মতামত সংগ্রহ করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে জরিপ চালিয়ে সাধারণ মানুষের মতামত পর্যালোচনা করা হয়েছে। কমিশনের লক্ষ্য, এসব প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে আগামী ৬ জানুয়ারির মধ্যে সুপারিশ চূড়ান্ত করা।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, "আমাদের লক্ষ্য এমন একটি প্রস্তাবনা দেওয়া, যা গণতান্ত্রিক চর্চাকে শক্তিশালী করবে এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করবে।"

সংবিধান সংস্কার কমিশনের এই উদ্যোগ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং গণতন্ত্রের শিকড় মজবুত করার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে এটি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও জনগণের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

বায়ান্ন/এএস