ঢাকা, শুক্রবার ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১লা অগ্রহায়ণ ১৪৩১

খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে, বোতলজাত তেলের দাম অপরিবর্তিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৫০:০০ পূর্বাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম নতুন করে আরো বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রায় ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে এখন খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা এবং প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে এবং তা ১৬৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে, কিছু বিক্রেতা তেলের দাম বাড়ানোর সুযোগে বোতলজাত সয়াবিন তেলের বোতল খুলে ড্রামে ঢেলে বিক্রি করছেন, ফলে বাজারে বোতলজাত তেলের সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

বিক্রেতারা জানান, খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে কম্পানিগুলো বোতলজাত তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। তারা বলেন, "আমরা অগ্রিম টাকা জমা দিয়েও তেল পাচ্ছি না, এর ফলে বাজারে বোতলজাত তেলের সংকট তৈরি হয়েছে।" একাধিক বিক্রেতার দাবি, এমন পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের জন্য খুবই অসুবিধাজনক, কারণ তারা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য তেল কিনতে পারছেন না। কারওয়ান বাজারের তেল কম্পানির ডিলাররা জানান, তাদের কাছে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এক ডিলারের চাহিদা ছিল ১০০ কার্টন, কিন্তু তারা ২০ থেকে ৩০ কার্টন সরবরাহ পেয়েছেন, যা বাজারে তেলের সংকটের অন্যতম কারণ।

খুচরা বিক্রেতারা জানান, এক মাস আগে তারা প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৫০ টাকায় বিক্রি করতেন, কিন্তু বর্তমানে তা ১৭২ থেকে ১৭৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে করে সাধারণ ক্রেতারা আরও বেশি সমস্যার মধ্যে পড়ছেন, বিশেষত রমজান মাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। বাজারে তেলের দাম বেড়েছে এমন সময়ে ক্রেতারা অভিযোগ করছেন যে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমজান মাস সামনে রেখে আগেভাগেই তেলের দাম বাড়িয়ে রেখেছেন, যার ফলে রমজান মাসে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে।

সরকারের পক্ষ থেকে ১৭ অক্টোবর সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে, কিন্তু এই পদক্ষেপের পরও বাজারে তেলের দাম কমেনি। এ নিয়ে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, “এই ধরনের সিন্ডিকেট প্রতিরোধে সরকারের উচিত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে রমজান মাসে বাজার আরও অস্থির না হয়ে যায়।”

এছাড়া, অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দামেও সাম্প্রতিক সময়ে উর্ধ্বগতি দেখা গেছে। পেঁয়াজের দাম ভারতের আমদানির পর কিছুটা কমলেও, রসুনের দাম চড়া রয়েছে। দেশি রসুন বর্তমানে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এবং আলুর দাম ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি। একইভাবে, ডিমের দাম ১৫০ টাকা (প্রতি ডজন), মুরগির দাম ১৯০ টাকা প্রতি কেজি এবং সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন সবজির দামও চড়া রয়েছে; ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শিম ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, টমেটো ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, এবং লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়। সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যাতে রমজান মাসে বাজার আরও অস্থির না হয়ে যায়। বিশেষ করে তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকি ব্যবস্থা কঠোর করতে হবে, অন্যথায় তেলের দাম আরো বৃদ্ধি পেতে পারে, যা ক্রেতাদের ওপর আরেকটি বড় চাপ ফেলবে।

এই বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাজারের নিয়ন্ত্রণ ও অস্থিরতা কমানোর চেষ্টা করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক মূল্যেই প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারেন।

 

বায়ান্ন/এএস