গাইবান্ধায় দিনে হালকা গরম ও রাতে শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতের হিমেল হাওয়ার তীব্রতা যতই বেশী বাড়ছে পিঠা বিক্রি ততই বেড়ে যাচ্ছে। শীত মৌসুমের শুরুতেই গাইবান্ধা শহরের পৌর পার্কের সামনে, ১নং রেলগেট সংলগ্ন আসাদুজ্জামান মার্কেটের সামনে, দক্ষিন ধানঘড়া সার্কিট হাউজের পাশে, ষ্টেশন রোড সহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় পিঠা বিক্রির হিড়িক পরেছে পুরুষ ও মহিলা পিঠা ব্যবসায়ীদের। ক্রেতাদের সংখ্যা চোখে পরার মত। এ ব্যবসা চলে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত।
গাইবান্ধা শহরের রাস্তার মোড়ে এ মৌসুমী পিঠা ব্যবসায়ীদের পিঠা বিক্রি করতে দেখা যায়। এ ব্যবসায় ভাল আয় করছে বলে জানায় পিঠা ব্যবসায়ীরা। অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ী ভাপা পিঠা ছাড়াও চিতই পিঠা, ডিম চিতই, ডিম সিদ্ধ বানিয়েও বিক্রি করে। আবার চিতই পিঠার সাথে ধনিয়া পাতা, মরিচ, সরষে, শুঁটকি বাটা দিয়েও পিঠা বিক্রি করে। এসব পিঠার এক একটির দাম নেয়া হয় ৫ থেকে ১০টাকা। পিঠা তৈরীর বেশির ভাগ দোকানের ব্যবসায়ী হয় পুরুষ। পাশাপাশি মহিলারাও তৈরি করে এ পিঠা। এ ব্যবসায় তেমন বেশি পুঁজি লাগেনা। জ্বালানী হিসেবে লাকড়ি বা খড়ি, কিছু গুড়, নারকেল ও চাউলের গুড়া দিয়ে শুরু করা হয় এ ব্যবসা।
অন্যদিকে, গাইবান্ধা শহরের দক্ষিন ধানঘড়া গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ মিয়ার স্ত্রী ও রাশেদা বেগম পিঠা বিক্রি করে দুজনেই স্বচ্ছলতা আনছেন পরিবারে। প্রতি বছর শীত মওসুমে ভাপা, চিতই সহ বিভিন্ন প্রকার পিঠা বিক্রির অর্জিত মুনাফা দিয়ে সন্তান সহ পরিবারের ৬ জনের ভরনপোষন চালাচ্ছেন তারা।
" পিঠা বিক্রেতা রাশেদা'র সাথে কথা হলে তিনি জানান- প্রতিবছর শীত এলেই আমরা পিঠা বিক্রি শুরু করি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আগেই পিঠার ব্যবসা শুরু করেছি। অক্টোবর ২০ তারিখ থেকে পিঠার ব্যবসা শুরু করেছি এবং মার্চ মাস পর্যন্ত পিঠা বিক্রি চালিয়ে যাব। শীতের প্রকোপ যত বেশি থাকে পিঠা বিক্রিও তত বেড়ে যায়। অন্য সময় আমি মানুষের বাসায় কাজ করি ও হাস মুরগি পালন করি। আর আমার স্বামী রেষ্টুরেন্টে জব করে। দুই জনের আয় করা টাকা দিয়ে আমাদের পরিবারের ৬ জনের ভরণপোষণ চলে। সন্ধ্যায় পরে দোকানে ক্রেতাদের ভিড় থাকে অনেক বেশি। সমাজের সব শ্রেণীর লোকেই পিঠা খেতে আসে। কেউ টুলে বসে কেউ বা দাঁড়িয়ে পিঠা খায়। আবার অনেকে বাড়ির জন্য কাগজে করে নিয়ে যায় এসব পিঠা। প্রতি বছর আমি ভাপা ও চিতই পিঠা বিক্রি করি। এবছর এসবের পাশাপাশি ডিম চিতই, ডিম সিদ্ধ বিক্রি করছি। একটি চিতই পিঠা ৫ টাকা, ভাপা ৫ থেকে ১০ টাকা ও ডিম চিতই ২০ টাকা করে বিক্রি করা হয়।
প্রতিদিন বিকাল ৪ টা থেকে রাত ৯/টা ১০টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করে খরচ বাদে প্রতিদিন ৬ শ টাকা ইনকাম হয়। যে পিঠায় গুড় ও নারকেল দেয়া হয় সেসব পিঠার ক্রেতাও বেশী।
" রাশেদা'র দোকানে পিঠা খেতে আসা শাপলা মিল এর বাসিন্দা ফারহানা আক্তার" সাথে কথা হলে তিনি জানান, শীতের সময় ভাপা ও ডিম চিতই খাওয়ার মজাই অন্যরকম। গরম গরম ভাপা পিঠা দেখলে লোভ সামলানো দায়, তাই প্রতিদিন খেতে আসি ভাপা ও ডিম চিতই পিঠা।
তিনি আরো জানান, কর্মব্যস্ততার কারণে প্রতিদিন পিঠা খেতে আসা হয়না এবং বাসায় পিঠা তৈরি করে খাওয়া অধিকাংশ সময়ই সম্ভব হয় না। ফলে রাস্তার পাশের দোকান থেকে কিনে খেতে হয়।
"রবী চৌধুরী নামে আরেক পিঠা ক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি জানান" -সন্ধ্যার সময় আমি সহ অনেকেরই খিদে লাগে। আর খিদে নিবারণ করার জন্য অনেকেই আমরা পিঠা খাই। শীত মওসুমে ভাপা ও চিতই পিঠা খেতে খুবই মজা লাগে। বিশেষ করে সরষে বাটা দিয়ে চিতই পিঠা খেতে আরো বেশি মজা।
"তবে এই বিষয়ে গাইবান্ধা পরিবার পরিকল্পনার ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম" এর সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান- রাস্তার পাশে খোলা বাজারে তৈরি পিঠা গ্রহনযোগ্য নহে। রাস্তার পাশে খোলা খাবার পিঠাতে ধুলা-বালিসহ নানা রকম জীবাণু লেগে বিভিন্ন প্রকার অসুখ হতে পারে। তাই পিঠা তৈরি ও তা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।