ঢাকা, রবিবার ১২ মে ২০২৪, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুর বিমানবন্দর পথের সাতটি উড়াল সেতু উন্মুক্ত

মোঃ রেজাউল করিম মজুমদার, গাজীপুর : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৫ মার্চ ২০২৪ ০২:৫৯:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর

দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে বাস রেপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের সাতটি উড়াল সড়ক।ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে ঘরমুখী মানুষের জন্য ঈদ উপহার বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ রবিবার মন্ত্রণালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব উড়ালসড়ক উন্মুক্ত করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী। এসময় সাত উড়ালসড়কে আনুষ্ঠানিক যান চলাচল উন্মুক্ত করেন তিনি।

 

ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদের যাত্রীদের জন্য এটা ঈদ উপহার। প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে এসব ফ্লাইওভার উন্মুক্ত করায় বিশেষ করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে যাত্রা আরো সহজ ও স্বস্তিদায়ক হবে। সময়মতো নির্মাণ কাজ সম্ভব হয়নি। এটি একটি প্রলম্বিত প্রকল্প।

 

সময়মতো নির্ধারিত কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি। এই প্রকল্পে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটেছে।

 

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেন, শেষ পর্যন্ত আমরা প্রকল্পটিকে শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসতে পেরেছি।

 

আশা করছি এ বছরই বিআরটি এর রাস্তায় বিআরটিসি বাসসহ সব ধরনের পরিবহন চলাচল করতে পারবে।

 

এ সময় বিএনপির ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ভারতীয় পণ্য বর্জনের নামে বিএনপি এখন দেশের অর্জনকে ধ্বংস করতে চায়। এখনো নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের যে লেনদেন, আমদানি রপ্তানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে এই ধরনের বিষয় কি বাস্তবসম্মত?

 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নেতারা ব্যর্থতার জন্য তারা নিজেরাই ক্লান্ত, তাদের কর্মীরা হতাশ। নেতাদের কারো সাথে কারো কথার মিল আমরা দেখি না।

 

মঈন খান ভারতের সহযোগিতা চান, রিজভী আবার ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেন।

 

বিএনপি নেতা হাফিজের দেশের তরুণ প্রজন্মকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আন্দোলন করার লোক পায় না, সামরিক প্রশিক্ষণ কাকে দিবে। এটি প্রতারণাপূর্ণ একটি কৌশল, আসলে দলটির নেতারা একেকজনে একেক কথা বলেন। এখন আমরা শুনতে চাই দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কি বলেন? তিনিই দলের মুখপাত্র।

 

মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র দাবির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি প্রশ্ন রাখেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের চিন্তা সরকার কেন করবে? এর কোনো যুক্তিও নেই, বাস্তবতাও নেই। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে হবে। আমাদের সংবিধানে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো কথা বলা নেই।

 

সাতটি ফ্লাইওভার যান চলাচলে উন্মুক্তকরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা প্রান্তে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিনুল্লাহ নূরী, সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন ও গাজীপুর প্রান্তে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 

রাজধানী ঢাকা থেকে গাজীপুর যেতে দ্রুতগতিতে বাস চালানোর জন্য ২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। এরপর চার দফায় সময় বাড়িয়েও প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। একই সঙ্গে দুই দফায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার যখন অন্য অনেক প্রকল্প চালু করছিলো, তখন বিআরটি চালু হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় ছিলো, কিন্তুু তা হয়নি।

 

জানতে চাইলে বিআরটি কোম্পানির চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে অবকাঠামোর কাজ শেষ হতে পারে। তবে অপারেশনের কাজ শুরু করার জন্য আরো অনেক কাজ বাকি থাকবে। শুধু সড়কের কাজ শেষ করলেই তো হবে না, বাস চালানো হচ্ছে মূল লক্ষ্য। এ বছর বাস চালানো সম্ভব নাও হতে পারে। এখনো কোনো কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়নি।

সময় খরচ দুই বাড়ে, কাজ শেষ হয় না

একনেকে দুই হাজার ৪০ কোটি টাকায় অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটির কাজ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। পরে প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

 

পরে আবার ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ওই বাড়তি মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ায় আবার সময় বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। এ সময় ব্যয় বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকায়। বারবার সময় ও খরচ বাড়লেও কাজ আর শেষ হয় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না, অর্থায়নও স্বাভাবিক না। আবার ব্যস্ত সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় কাজে ধীরগতি তৈরি হয়েছিলো।

 

তিন সংস্থার কাজ, সড়কের গতি সবচেয়ে কম বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সমন্বয়ে চারটি প্যাকেজে প্রকল্পটির কাজ চলছে। এর মধ্যে সবার আগে নিজেদের কাজ শেষ করেছে এলজিইডি। সবচেয়ে ধীরগতি সড়কের অংশে।

 

সড়কের অংশের কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত বছরের আগস্টের দিকে প্রকল্পের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে টঙ্গীমুখী সড়কের তিন জায়গায় স্প্যানের সংযোগস্থলের পিচ ঢালাই উঠে যায়। এতে সংযোগস্থলের যে পাত ছিলো, তা বেরিয়ে আসে। এমনকি উড়ালপথের একাধিক সংযোগস্থলের পিচ ঢালাইয়ে ফাটল ধরে। ঢালাই উঠে যাওয়ায় স্টিলের দুই পাতের মাঝে গর্ত তৈরি হয়েছিলো।

 

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোঃ হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রকল্পটি শুরু থেকেই পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এখনো শেষ হচ্ছে না কাজ। এই বিশেষায়িত পথের মূল লক্ষ্য তো বাস চালানো। এখনো সেই বিষয়েই কোনো কার্যক্রম নেই।

 

এখনো বাস চালানোর চুক্তি হয়নি

বিআরটি সূত্রে জানা যায়, বাস চালাতে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়েছে। নাম ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লিমিটেড কোম্পানি। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে শুরুতে ৭৫টি বাস চলানোর পরিকল্পনা ছিলো। কোম্পানির বাণিজ্যিক কাজের ধরন কেমন হবে, সেটি নির্ধারণে ২০১৯ সাল থেকে বিজনেস মডেল তৈরির কাজ করা হয়।

কিন্তুু কাদের বাস চালাবে, বিআরটি কোম্পানি এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হয়নি। এই পথের জন্য নতুন বাস আমদানির কথা থাকলেও তাতে ভাটা পড়েছে। দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাস চালানো হবে কি না, সেটিও চূড়ান্ত হচ্ছে না। শেষ মুহূর্তে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় না হলে শুরুতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) বাস দিয়ে চলা চল শুরু হতে পারে।

 

বিআরটি পথ চালু হওয়ার পর রাজধানী ঢাকা থেকে গাজীপুরে নিয়মিত চলাচল করে, এমন আটটি রুটের বাস বন্ধ করে দেওয়া হবে। তখন ঢাকা থেকে সর্বোচ্চ আবদুল্লাপুর পর্যন্ত সিটি বাসগুলো চলাচল করতে পারবে। তবে গাজীপুর থেকে আবদুল্লাপুর পর্যন্ত চলাচল করে এমন ১০টি রুটের বাস আগের মতোই চলতে পারবে। আবার বিআরটি লেনের দুই পাশের লেনে সিটি বাস চলাচল করার সুযোগ থাকছে।

পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, এটি অবকাঠামো ভিত্তিক প্রকল্প নয়। গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন ভিত্তিক প্রকল্প। এমন প্রকল্প তাদেরই বাস্তবায়ন করা উচিত, যারা পরবর্তী সময়ে পরিচালনার সঙ্গে জড়িত থাকবে।

 

বিশেষায়িত বাসের পথ তৈরিতে যা যা হয়েছে বিআরটি লেনের পাশাপাশি পথটিতে দুই দিকে দুটি করে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক হালকা যান চলার পথ, একটি করে অযান্ত্রিক যান চলাচলের পথ এবং দুই পাশে ফুটপাত থাকছে।

 

প্রকল্পে উড়ালপথে থাকবে ছয়টি স্টেশন এবং ১০ লেনবিশিষ্ট টঙ্গী সেতু। ছয়টি উড়াল সেতু থাকছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১৬ কিলোমিটার সমতলে এবং সাড়ে চার কিলোমিটার উড়ালপথ নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া ৫৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ১১৩টি সংযোগ সড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে। জলজট নিরসনে প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার নালা থাকছে।