গাজীপুরে বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধের দাবিতে কে এফ এল গ্রুপের খানটেক্স ফ্যাশন কারখানায় শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ দুপুরে আজকের জন্য কারখানা ছুটি ঘোষনা করছে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বারতোপা গ্রামে খানটেক্স ফ্যাশন কারখানার সামনে শতাধিক শ্রমিক বিক্ষোভ করতে থাকে।
ফিনিশিং সেকশনের প্যাকিংম্যান এমদাদ হোসেন বলেন, নভেম্বর মাসের হাফ এবং চলতি (ডিসেম্বর) মাসের বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে তারা শনিবার থেকে কারখানা অভ্যন্তরে শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করছে। অন্যান্য বকেয়ার মধ্য রয়েছে নাইট বিল, টিফিন বিল, ইনসেনটিভ বোনাস, শুক্রবারের ডিউটির টাকা, অর্জিত ছুটির টাকা, উৎপাদন (প্রোডাকশন) বোনাস, মাতৃত্বকালীন ছুটির টাকা গত প্রায় ৪ বছর যাবৎ বকেয়া রয়েছে।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, বেতন ছাড়া কবে যে ওই সব সুবিধার টাকা পেয়েছি এখন মনেও নাই। নাইট বিল, টিফিন বিল, ছুটির টাকাসহ অন্যান্য সুবিধার টাকা না দেওয়ায় এখন ভুলেই গেছি কবে ওইসব সুবিধার টাকা পেয়েছিলাম। আমরা নভেম্বর মাসের অর্ধেক এবং চলতি (ডিসেম্বর) মাসের বেতনের দাবীতে আন্দোলন করছি। কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে গত ৪ দিন যাবত বকেয়া সকল পাওনা পরিশোধ করার আশ্বাস দিলেও বকেয়া কোন পাওনা’ই পরিশোধ করছে না। বকেয়া পরিশোধের দাবিতে আমরা ৪ দিন যাবত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি।
শ্রমিকরা আরও জানায়, প্রতি মাসের ৮ম কর্ম দিবসে প্রতি মাসের নিয়মিত বেতন পরিশোধের কথা থাকলেও গত দুই বছর যাবৎ অনিয়মিতভাবে (কোন সময় মাসের ১৫ তারিখ, ১৮ তারিখ, ২৫ তারিখ) বেতন পরিশোধ করে আসছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উৎপাদন শাখার (কোয়ালিটি বিভাগ) ম্যানেজার জানান, ম্যানেজমেন্ট স্টাফদের (এক্সিকিউটিভ, ম্যানেজার, এজিএম, জিএম) কর্মকর্তাদের ৩ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। অনেক কর্মকর্তাকে চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারী মাসের বেতন না দিয়ে কারখানা থেকে বের করে দিয়েছে। ওইসব কর্মকর্তারা কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের ওই দুই মাসের বকেয়া বেতনের জন্য যোগাযোগ করলে তাদেরকে হিসাব বিভাগে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয় কারখানার মানব সম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক (এজিএম) হুমায়ুন কবির। হিসাব বিভাগে যোগ করা হলে ওই শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম তাদেরকে জানায় মানব সম্পদ বিভাগ থেকে তার কাছে কোন বিল জমা দেয়নি। শ্রমিকসহ কর্মকর্তাদের সাথে কারখানা কর্তৃপক্ষের এরকম আচরণে ক্ষুদ্ধ তারা।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক (শ্রীপুর জোন) আব্দুল লতিফ খান জানান, বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে গত কয়েকদিন যাবৎ শ্রমিকরা কারখানা অভ্যন্তরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও বিক্ষোভ করে আসছে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে কারখানার প্রধান ফটকে চলে আসলে কর্তৃপক্ষ আজকের জন্য কারখানা ছুটি ঘোষনা করছে। অনেক শ্রমিক এখনও কারখানার সামনে বসে আছেন।
শ্রমিকরা বলেছেন, বেতন না পাওয়া পর্যন্ত তারা বাড়ি ফিরে যাবেন না।
কারখানার মানব সম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক (এজিএম) হুমায়ুন কবির তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বর্তমানে ব্যাংক এলসি না দেওয়ায় দুই মাস যাবৎ বেতন পরিশোধ করা সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। দুই মাস ধরেই এ সমস্যা চলমান রয়েছে। তবে আমরা শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছি। চলতি মাসের ৩০ তারিখ আমরা বকেয়া বেতনসহ সকল পাওনা পরিশোধ করে দিব।
তিনি আরও বলেন, বেশির ভাগ শ্রমিক আমাদের সিদ্ধান্ত মানলেও কিছু শ্রমিক মানছেন না। এ বিষয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম বলেন, খানটেক্স কারখানা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মরত শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধ না করে টালবাহানা করছে। আমরা শ্রমিকদের যাবতীয় বকেয়া পরিশোধের দাবি জানাচ্ছি।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে