ঢাকা, রবিবার ১৯ মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

চুনারুঘাটে লতিরাজ কচু ও তরমুজ চাষে সাফল্য

এম এস জিলানী আখনজী :: চুনারুঘাট : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২১ জুলাই ২০২৩ ০৯:৩৭:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে লতিরাজ কচু ও তরমুজ চাষে কৃষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশী ইউনিয়ন ও ঘনশ্যামপুর এলাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চুনারুঘাট এর আয়োজনে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ‘আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প’ এর আওতায় বাস্তবায়িত প্রদর্শনী লতিরাজ কচু ও সুইট গ্রীণ তরমুজের মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আদর্শ কৃষক ফারুক মোল্লার সভাপতিত্বে মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চুনারুঘাট উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মাহিদুল ইসলাম।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোঃ সজীব হোসেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ সাইদুর রহমান, আহম্মদাবাদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি সৈয়দ তানভীর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ছমির হোসেন সামি ও স্থানীয় কৃষক-কৃষাণীরা।

কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে বারি উদ্ভাবিত লতিরাজ কচু ফসলের জাত বিস্তার শীর্ষক মাঠ দিবসে বক্তারা বলেন, লতিরাজ কচু চাষ করে অল্প খরচে অনেক বেশি আয় করা সম্ভব। জলাবদ্ধ জমি কিংবা উচু উভয় ধরনের জমিতে লতিরাজ কচু উৎপাদন হয়। ফলে যেখানে অন্য কোন ফসল সহজে হয় না সেখানেও এই কচু চাষ করা সম্ভব। মূলত পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করতে মাঠ দিবস উদযাপন করা হয়।

মিরাশী ইউনিয়নরে আব্দাছালিয়া গ্রামের লতিরাজ কচুর ৫টি প্রদর্শনীতে বারি পানি কচু ১-জাতের কচু আবাদ করে প্রথম চার মাসে ৮ লক্ষ টাকার লতি বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন সেখানকার কৃষকরা। তারা প্রত্যেকেই ৩৩ শতাংশ করে লতিরাজ কচুর আবাদ করেছেন। মাঠ দিবসে লতিরাজ কচুর কৃষক হাবিবুর রহমান, মাহমদ আলী, আব্দুল মনাফ, পলি আক্তার ও অরুণ কুমার চৌধুরী বলেন, প্রথমবারের মতো চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে ৩৩ শতাংশ করে আমরা প্রায় ৫ বিঘা জমিতে (লতিরাজ কচু) আবাদ করেছি। ইনশাআল্লাহ কচুতে ভালো ফলন হবে। আমরা আগামীতে আরও অধিক জমিতে এ কচুর আবাদ করবো। তারা আরও বলেন, আমাদের কচু চাষ দেখে অন্য কৃষকেরাও কচু চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ‘লতিরাজ কচু আবাদ ধান চাষের চেয়েও অনেক লাভজনক। প্রকল্পের আওতায় এবং কৃষি বিভাগের পরামর্শে কচু চাষ করে লাভবান হবে। তারা আশা করছেন মোট প্রায় ১৬ লক্ষ টাকার লতি বিক্রি করতে পারবেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মাহিদুল ইসলাম বলেন, মৌসুমি পতিত জমিকে ফসলের আওতায় আনার জন্য এবং উচ্চমূল্যের ফসল বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করার জন্য এডিএসআরএমটিপি প্রকল্পের সহায়তায় কৃষি বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। লতিরাজ কচু, বারমাসি তরমুজ, চিনাবাদাম, অফসিজনাল সবজি এবং ফল বাগান সৃজনের মাধমে উপজেলার সাময়িক পতিত জমি ফসলের আওতায় আসছে, ফলে কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া যেসকল মাঠে সেচের সমস্যার কারনে ফসল ফলানো সম্ভব হত না, সেখানে কৃষক দলের মধ্যে এলএলপি মেশিন, ফিতা পাইপ সরবরাহ করা হয়েছে। কোথাও কোন প্রকার জমি ফেলে রাখা যাবে না। পরে কৃষকদের রোপনকৃত লতিরাজ কচুর প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন কৃষি কর্মকর্তাগণ। তিনি আরোও বলেন, আশা করা যায় এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কৃষকরা লাভবান হবে। তিনি বলেন, কচু চাষ কেবল আর্থিকভাবে লাভজনক নয়, এটি আয়রণ সমৃদ্ধ সবজি যা, শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টি নিরাপত্তায় দারুণ ভূমিকা রাখে।

“মুজিব বর্ষের অঙ্গিকার কৃষি হবে দুর্বার” এই স্লোগানে তরমুজের আধুনিক উৎপাদনের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হলো কৃষক মাঠ দিবস। নিরাপদ উচ্চ মূল্যের তরমুজ চাষ কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়েও উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের কৃষক ফারুক মোল্লার বাড়ীতে কৃষকদের নিয়ে কৃষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। শ’তাধিক প্রান্তিক কৃষকদের নিয়ে এ মাঠ দিবস হয়। কৃষক ফারুক মোল্লা গেল মৌসুমে সুইট গ্রীন জাতের প্রায় ৬ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের তরমুজ বিক্রি করেছেন। আগামীতে তরমুজ চাষের জন্য কৃষকেরা আগ্রহী হচ্ছেন ফলে পতিত জমির পরিমাণ দ্রুত কমে আসছে।