প্রতি বছর এই সময়ে ৬ থেকে ৮ কোটি বই ছাপা হয়ে যায়। এর মধ্যে এগিয়ে থাকে প্রাথমিক স্তর। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত একটি বইও ছাপানো হয়নি। অন্যদিকে বই ছাপানোর প্রতিষ্ঠান নির্বাচন প্রক্রিয়া এখনও মাঝপথে আছে। ছয়টি টেন্ডারের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে মাত্র দুটির প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। বাকিগুলো মাঝপথে। ফলে সবমিলে আগামী বছর যথাসময়ে শিশুরা বই পাবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবার মোট ৩৩ কোটি ২৮ লাখ বই ছাপানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অবশ্য এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম দাবি করেছেন, যথা সময়েই নয়, ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। বছরের শুরুতে এ ব্যাপারে আমরা যে রুটিন তৈরি করেছি, তা এখন পর্যন্ত ঠিকঠাক মতোই অনুসৃত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আগামী শিক্ষাবর্ষে দুই কোটি পাঠ্যবই কম ছাপাবে এনসিটিবি
জানা গেছে, অন্যান্য বছর বই ছাপানোর জন্য প্রিন্টারদের সর্বোচ্চ ৯৮ দিন সময় দেওয়া হয়। এবার দেওয়া হয়েছে সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৭২ দিন। যে ছয় টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ চলছে, সেগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, প্রাক-প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের একটি অংশের বইয়ের জন্য টেন্ডারাকারীদের কাছে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) চাওয়া হয়েছে।
২৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিকের আরেক টেন্ডারের এনওএ দেওয়া শুরুর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের দুটি টেন্ডারের দলিলপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
অর্থাৎ, এবার এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানই নির্বাচনের প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, এনওএ দেওয়ার পরে চুক্তি করা, পাণ্ডুলিপিসহ আরও কিছু কাজ বাকি থাকে। এসব কাজ শেষ করতে আইন অনুযায়ী প্রায় দেড় মাস সময় লাগে। এই হিসাবে কবে বই মুদ্রণ শুরু হবে সেটি এখনও অনিশ্চিত।
প্রেসে এবার এমন ব্যস্ততা নেই-ফাইল ছবি
এ ব্যাপারে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক বলেন, অন্যান্য বছর এই সময়ে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ছাপা হয়ে যায়। কিন্তু এবার সরকার চুক্তিই করতে পারেনি। তাই বই নিয়ে যে সংকট অপেক্ষা করছে সেটি বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এনসিটিবির ধীরগতির টেন্ডার প্রক্রিয়া ও নতুন শিক্ষাক্রমের বই প্রণয়নে বিলম্ব টেন্ডার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। এর সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে বই ছাপানোর উপকরণের বর্ধিত মূল্য। যদিও এরপরও ছাপাখানার মালিকরা প্রাক্কলিত দরের তুলনায় গড়ে ২৫ শতাংশ কম টাকায় কাজ করার জন্য টেন্ডার দাখিল করেছেন। এ অবস্থায় আগামী বছর নিম্নমানের বই ছাপা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এদিকে অভিযোগ আছে, এনসিটিবির কারণে প্রাক-প্রাথমিক স্তরের কোমলমতি শিশুরা নিম্নমানের পাঠ্যবই ও অনুশীলন খাতা পাচ্ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের চেয়ে প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের বইয়ের আকার তুলনামূলক বড়। এটি ছাপতে তুলনামূলক বড় মেশিন প্রয়োজন হয়। এটিকে ২৩ বাই ৩৬ ইঞ্চি মেশিন বলা হয়। এবার যে ১২টি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে সেগুলোর মধ্যে মাত্র একটির ওই সাইজের মেশিন আছে। এর আগেও একইভাবে যাদের নির্দিষ্ট মেশিন নেই তাদের রহস্যজনক কারণে কাজ দিয়েছে এনসিটিবি।
ফলে কয়েক বছর ধরেই নির্দিষ্ট মডেলের বই ছাপা হচ্ছে না। কিন্তু জেনেশুনেই সংস্থাটির কর্মকর্তারা নিম্নমানের বই শিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।
মূলত এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক সাইদুর রহমানের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে সাইদুর রহমান বলেন, নির্দিষ্ট আকারের মেশিন বাংলাদেশে কম আছে। এ কারণেই সাইজ উল্লেখ করা হয় না।
এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম বলেন, আমাদের হাতে এখনো তিন মাস সময় আছে। এ সময়ের মধ্যে অধিকাংশ বই তৈরির কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। করোনা ও বিশ্ববাজারে ডলারের দাম ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় কাগজের দাম বেড়ে গেছে। সে কারণে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করতে দেরি হচ্ছে। প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। অন্যান্য বইয়ের কাজও দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে কেউ যাতে নিম্নমানের বই দিতে না পারে সেজন্য মনিটরিং বাড়ানো হবে বলেও জানান এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান।
বইয়ের সাইজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এটি নিয়ে এখানো কোনো অভিযোগ তোলা হয়নি। শুধু বড় প্রেসগুলোতে কাজ দেওয়া হলে বই তৈরিতে দর বাড়িয়ে দেওয়ার আংশকা থাকে।
এজন্য ছোট প্রেসগুলোতে কাজ দিতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।