ঢাকা, শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১

ঝিনাইদহে জি.কে সেচ প্রকল্পের খাল সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, উচ্ছেদ হয়না উল্টো নতুন নতুন দখল চলে

বসির আহাম্মেদ, ঝিনাইদহ : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:১৩:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডুু উপজেলার শাখারিদহ বাজার এলাকার জি.কে সেচ প্রকল্পের খালটি বন্ধ হতে চলেছে। উচ্ছেদ হয়না উল্টো নতুন নতুন দখল চলে এরই ফলে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে খালটি। এভাবেই খালটি বন্ধ হতে চলেছে। বছর বছর নোটিশ যায়, উচ্ছেদ হয় না। উল্টো দখলদাররা খালের জায়গা দখল করে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মাঝে মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের এই বাজারে দেখা গেলেও উচ্ছেদের কোনো ভুমিকা দেখা যায় না। গত ২৫ বছরে এভাবে খালের জায়গা দখল হতে হতে জিকে সেচ প্রকল্পের ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডুু উপজেলার শাখারিদহ বাজার এলাকার খালটি বন্ধ হতে চলেছে।

সর্বশেষ এক সপ্তাহের মধ্যে উঠে যাওয়ার নোটিশ দেওয়া ও উচ্ছেদ কাজের জন্য ঠিকাদার নির্বাচন করেও উচ্ছেদ অভিযান থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে। এতে দখলদারদের মাঝে দখলের উৎসাহ বাড়বে বলে স্থানীয়রা মনে করেন। তারা এলাকার কৃষি কাজ সচল রাখতে ও জলাবদ্ধতা দূর করতে খালের পাড় দখলমুক্ত করার দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহ-হরিনাকু-ু সড়কের ধারে হরিনাকু-ু উপজেলার শাখারিদহ এলাকায় শতবছরের একটি বাজার রয়েছে। বাজার কমিটির সভাপতি খায়রুল ইসলাম জানান, এই বাজারটি শতবছরের হলেও দোকানপাট তেমন একটি গড়ে ওঠেনি। তবে গত দুই দশকে অনেকগুলো ভালো ভালো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এই বাজারে বর্তমানে ছোট-বড় ২৬৫ টি দোকান রয়েছে। এছাড়া বাজারের সঙ্গে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বাজারে সরকারি ভাবে দুইতলা বাজার চাঁদনী নির্মানের কাজ চলছে।

স্থানীয় আজিজ খান জানান, বাজারের মাঝ দিয়ে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকলের একটি খাল বয়ে গেছে। এই খালের দক্ষিণে বাজারটির অবস্থান থাকলেও রাস্তার কারনে বাজারটি উত্তরে সরে এসেছে। এছাড়া এক শ্রেণীর দখলদার বাজারের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া সেচ খালের পাড় দখল করে দোকান নির্মান শুরু করেন। এভাবে একের পর এক দখল হওয়া খালের জায়গায় দোকান গড়ে উঠায় বাজারটি উত্তরে সরে এসেছে। বাজারের একাধিক দোকানী নাম প্রকাশ না করে জানান, খালের দুই পাড় দখল করে একের পর এক ভবন হওয়ায় বাজারটির সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে। বাজারের মূল জমি ফেলে রেখে দখল করা জমিতে বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে। এখন আর মূল জায়গায় ব্যবসায়ীরা ফিরতে পারছেন না। উল্টো খালের জায়গা দখল করায় ঝিনাইদহ-হরিনাকু-ু রাস্তাটিও সংকোচিত হয়ে গেছে।

বাজারের দোকানী নাম প্রকাশ না করে জানান, গত ২৫ থেকে ৩০ বছর বেশি দখল হয়েছে। বর্তমানে শতাধিক দখলদার রয়েছে বলে তারা জানান।

ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের জানান, এই দখল উচ্ছেদের জন্য প্রায় প্রতিবছরই দখলদারদের নোটিশ দেওয়া হয়। সবগুলো নোটিশে এক সপ্তাহের মধ্যে উঠে যেতে বলা হয়, অন্যথায় দোকানপাট ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ার হুমকী দেওয়া হয়। এভাবে একের পর এক নোটিশ পায় ব্যবসায়ীরা। নোটিশ দেওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও কয়েকদিন ঘোরাঘুরি করেন। পরে আর উচ্ছেন হয় না। এতে দখলদাররা অবৈধ দখলে উৎসাহিত হন, বছরের পর বছর দখল অব্যহত থাকে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২২ মে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এক সপ্তাহের নোটিশ দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে ঘরগুলো ভেঙ্গে নিতে বলা হয়েছে। না হলে উচ্ছেদ করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আজো এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ তারা দেখেননি। তারা অবৈধ দোকান উচ্ছেদ চান।  

বাজারের দখলদার লিটন মিয়া জানান, খালের জায়গাগুলো বেশির ভাগ স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করেছেন। তারা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করেন। তিনিও একজনের নিকট থেকে ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন। খালের জায়গা দখলের কথা স্বীকার করে জানান, সবাই দখল করেই ব্যবসা করছেন। অন্যরা উঠে গেলে তিনিও যাবেন। নোটিশের বিষয়ে বলেন, মাঝে মধ্যেই নোটিশ দেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করতে হয়। এভাবে কেটে যাচ্ছে বছরের পর বছর।

আরেক ব্যবাসয়ী তুষার পারভেজ জানান, অন্যরা দখল করেছে দেখে তিনিও একটি ছোট দোকান করেছেন। উচ্ছেদ করলে চলে যাবেন বলে জানান। আরেক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমঝোতা করেই তাদের চলতে হয়।

শাখারিদহ বাজার কমিটির সভাপতি খায়রুল ইসলাম বলেন, মাঝে মধ্যেই ব্যবসায়ীরা নোটিশ পান। কিছুদিন এ নিয়ে বাজার গরম থাকে, আবার সব ঠিক হয়ে যায়। তিনি বলেন, খালের জায়গা দখলমুক্ত করার বিষয়ে তাদের সঙ্গে কখনও কোনো কর্তৃপক্ষ আলাপ করেননি। দখলদার ব্যবসায়ীরা আর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ চিঠি দেওয়া না দেওয়া নিয়ে কাজ করেন। তারা এর বেশি কিছু বলতে পারেন না।

বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর ঝিনাইদহ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সুনীল কুমার ভদ্র জানান, তারা উচ্ছেদের সকল প্রত্রিয়া নিয়েছিলেন। ঠিকাদারও নির্বাচন করা হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কারনে উচ্ছেদ করতে পারছেন না। বিশেষ কারনে চিঠি দেন আবার উচ্ছেদ না করে ফিরে আসেন বলে যে অভিযোগ করেছেন সে বিষয়ে ওই কর্মকর্তা জানান, এটা ঠিক নয়। উচ্ছেদ করতে গেলে নানা প্রতিবন্ধকতা এসে যায়। যে কারনে তারা চেষ্টা করেও সফল হন না। তবে এই সব দখলদার অবশ্যই উচ্ছেদ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।