ঝিনাইদহে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরের দিকে আন্দোলনকারীরা সদর থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পোস্ট অফিসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পৌরসভায় হামলা করে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ প্রায় দুই শতাধিক রাউন্ড গুলি, সাউন্ড গেনেড ও টিয়ারশেল ছুড়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় জনগণ। এক পর্যায়ে শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে ১১ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সংঘর্ষের ফলে পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে দোকানপাট, আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ থেকে ঢাকা, যশোর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গাসহ সব রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রায় দুই ঘন্টা ধরে চলে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আন্দোলনকারীরা বেলা ১১টায় শহরের প্রেরণা একাত্তর চত্বর থেকে বিশাল মিছিল বের করে মূল শহরে প্রবেশ করেন। এসময় তাদের হাতে ব্যানারের পাশাপাশি ছিল বিভিন্ন ধরনের ফেস্টুনসহ লাঠিসোঁটা। এরপর তারা পায়রা চত্বরে এসে সমাবেশ করেন। এসময় শহরে ব্যানার-পোস্টার ভাঙচুর শুরু হয়। একপর্যায়ে তারা ঝিনাইদহ বাস-টার্মিনাল এলাকায় মিছিল নিয়ে গিয়ে আবারও সমাবেশ করেন।
পরে তারা আবার ঝিনাইদহ মূল শহরে মিছিল নিয়ে প্রবেশ করেন। এসময় ছাত্ররা জানান তাদের দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। এরপর মিছিলটি পুনরায় শহরের প্রবেশ করে সদর থানার সামনে এলে থানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। তখন পুলিশও পাল্টা আক্রমণ চালায়। দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা চলতে থাকে।
একদিক থেকে আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। অন্যদিক থেকে থানার প্রধান ফটক লাগিয়ে পুলিশ থানার ভেতর থেকে বিভিন্ন ধরনের সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ থানা থেকে বের হয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করতে করতে গুলি চালায়। এসময় আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রায় দুই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর পরিবেশ একটু স্বাভাবিক হলে আন্দোলনকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে বের হয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংঘর্ষে পুলিশসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ১১ জন।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে ২৪ জন শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আসে। তারা চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নুসরাত জানান, যে ছাত্ররা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছে তাদের শরীরে ইটপাটকেলের আঘাত, ছররা গুলির চিহ্নসহ বিভিন্ন ধরনের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান বলেন, শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ। বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে তিনি জানান।