টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পৌলী নদীতে ভেকু বসিয়ে মাটি উত্তোলন ও বিক্রি করায় চরম হুমকির মুখে পড়েছে নদীর ওপর নির্মিত ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে নির্মিত পৌলী সেতু ও টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ। মাটি উত্তোলনের ফলে সেতুর দু’পাশ থেকে মাটি ধসে গিয়ে বড় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকাবাসী উপজেলা প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার না পাচ্ছে না। এদিকে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল ইউনিয়নের পড়াইখালি বিলে থেকে দু-ফসলি জমির ২০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে ট্রাক্টর (ট্রফি) গাড়ি দিয়ে দেদারছে বিক্রি করছে ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আতোয়ার রহমান খান। ফলে নষ্ট হচ্ছে কোপাখি ডুবাইল ও নাটিয়াপাড়া দেলদুয়ার পাকা সড়ক। ভোগান্তিতে পড়েছেন স্কুলে আসা শত-শত কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা। অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন জনজীবন। ভুক্তভোগিরা স্থানীয় প্রশাসনের নিকট মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না।
জানা যায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় পৌলীসহ আশপাশের এলাকায় বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ভাঙন হয়। ইতোপূর্বে ভাঙ্গনে শতাধিক পরিবারের ভিটে-বাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে। দুই বছর আগে রেলসেতুর দু’পাশের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তির শিকার হন হাজার হাজার মানুষ। বালু উত্তোলনের ফলে গত বর্ষা মৌসুমেও মহাসড়কের উপর নির্মিত পৌলী সেতুর দক্ষিণের অ্যাপ্রোসে ধ্বসের ঘটনা ঘটেছিল। বালু উত্তোলনের ফলে গ্যাস পাইপ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বেশকয়েকবার।
সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার পৌলী নদীর ওপর কোটি কোটি টাকা ব্যয় নির্মিত মহাসড়ক ও রেল সেতুর অদূরে ভেকু বসিয়ে বালু কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ট্রাক ভর্তি মাটি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাইড রক্ষা বাঁধটিও রয়েছে হুমকির মুখে। ভেকু দিয়ে ও ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে বেশকয়েকবার তিতাস গ্যাসের মূল পাইপলাইন ফেটে ভেসে উঠে। এতে টাঙ্গাইল, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ওই সময় নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে কিছুদিন বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ থাকে। পরে পাইপলাইন মেরামত করা হলে পুণরায় বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে চলেছে প্রভাবশালীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান, সরকার দলীয় লোকজনের সহযোগিতা নিয়ে উজ্জ্বল মিয়া বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। এই বালু উত্তোলনের ফলে এর আগে কয়েকবার গ্যাস পাইপে ফাটল ধরে এবং পৌলী সেতু অ্যাপ্রোচ ধ্বসে যায় এতে সরকারকে প্রতিনিয়ত ভর্তুকি দিতে হয়েছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় বালু উত্তোলনের মহোৎসব কিভাবে চলে এতে হতবাক স্থানীয়রা। বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে মহাসড়কে পৌলী সেতু, রেল সেতু, গ্যাস পাইপ লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হবে। নদীগর্ভে চলে যাবে শত শত বসতবাড়ী। বালু ব্যবসায়ী উজ্জ্বল মিয়া বলেন, এটা আমার নিজস্ব জায়গা। উপজেলা ভূমি অফিস, ইউএনও ও জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদনের মাধ্যমে তাদের অবগত করেই মাটি কাটা হচ্ছে। আর হাইকোর্ট থেকে রুল জারি করে দিয়েছে। আমার জমিতে যা খুশি তাই করতে পাড়বো এতে প্রশাসন বাধা দিতে পাড়বে না।
এদিকে দেলদুয়ার উপজেলার পড়াইখালী বিলে (নাসির গ্রুপের) পিছন থেকে দুই ফসলি জমির মাটি কেটে মেসার্স ফাহিম এন্টার প্রাইজের নামে রশিদের মাধ্যমে বিক্রি করছেন ডুবাইল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য (মেম্বার) আতোয়ার রহমান খান। দিন-রাত মাটি ভর্তি ট্রাক্টর চলায় বিপাকে পড়েছে পড়াইখালি স্কুলের, মদিনাতুল উলম মডেল ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও পড়াইখালি ক্যাডেট মাদ্রাসার শত-শত শিক্ষাথীরা। পড়াইখালি স্কুলের শামিমা, নাসরিন, মমতা, আসমা খাতুনসহ একাধিক ছাত্রী জানান, বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার একমাত্র সড়কে মাটি ভর্তি ট্রাক্টর চলাচলের কারণে স্কুলে আসা-যাওয়ার খুবই কষ্টকর। ট্রাক্টর যখন আসে আমরা সড়কের নিচে দাঁড়াতে হয়। ট্রাক্টর যাওয়ার পর আবার সড়কে উঠে স্কুলের দিকে রওনা হই। কোপাখি মদীনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসার একাধিক ছাত্র জানান, মাটি ভর্তি ট্রাক্টরের দাপটে মাদ্রাসায় পড়ালেখা, নামাজ আদায় করা এবং থাকা খাওয়ার খুবই অসুবিদে হচ্ছে। খাবার যতই ঢেকে রাখি ধুলো গিয়ে খাবার নষ্ট হয়ে যায়। মাদ্রসা শিক্ষকরা বলেন, অসুবিধার বিষয়টি মেম্বারকে বলমু সেই মেম্বারই মাটি ব্যবসায়ী কার কাছে বিচার দিমু। নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, প্রশাসনের সাথে আতাত করেই দিনরাত দু-ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন আতোয়ার মেম্বার। একাধিক দোকানদার ও রাস্তার প¦ার্শের বাড়ির কয়েকজন নারী বলেন, মাটি ভর্তি ট্রাক্টর চলাচলের কারনে বাড়িতে বসবাস করাই দায় হয়ে পরেছে। কার কাছে আমরা বিচার দিবো। আমাদের মেম্বার নিজেই মাটির ব্যবসা করেন।
এ ব্যাপারে মাটি ব্যবসায়ী ইউপি সদস্য অতোয়ার রহমান খান বলেন, আমি দু-ফসলির জমি কেটে বিক্রি করছি তা চেয়ারম্যান জানে। রাস্তা দিয়ে ধুলা যাতে না উড়ে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিবো।
স্থানীয় ভুমি সহকারী কর্মকর্তা আবু সাদেক জানান, মাটি কাটার বিষটি আমার জানা নেই খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা আলী জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম জানায়, বিষয়টি আমি অবগত আছি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।