টাঙ্গাইল শহর থেকে পশ্চিমাঞ্চলের বৃহৎ চরাঞ্চলের কয়েক ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগের অন্যতম ব্যস্ততম সড়কে লৌহজং নদীর উপর নির্মানাধীন সেতুর একাংশ ডেবে গেছে। কলেজ পাড়া-বাঘিল সড়কের প্যাড়াডাইস পাড়া ও বেড়াডোমা এলাকায় ব্রীজটি বৃহস্পতিবার রাতে পানির স্রোতে নির্মানাধীন সেতুর পশ্চিমপাশের বাঁশ ও কাঠের খুঁটিগুলো সরে যায়। এ সময় সেতুর ঢালাই কাজে ব্যবহৃত কাঠগুলো খুলে গেছে। এতে করে সেতুর মাঝের কিছু অংশ ডেবে যায়।
জানা যায়, এলজিইডির অর্থায়নে নির্মানাধীন এ সেতুটি বাস্তবায়ন করছিল টাঙ্গাইল পৌরসভা। ব্রীজের নির্মান ব্যায় তিন কোটি ৬০ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য আর ৮ মিটার প্রস্থের ব্রীজটি সেতুটি বিগত ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ব্রীজটির নির্মান কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী সেতুটির নির্মান কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ১১ মে। মেয়াদ শেষ হলেও সেতুটির নির্মান কাজ এখনও শেষ হয়নি। গত ১৬ মে এই সেতুর ঢালাই কাজ সম্পন্ন করা হয়।
এদিকে নির্মানাধীন সেতুর কাজ শেষ হবার আগেই সেতুটি ডেবে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ সড়কে চলাচলকারী ও এলাকাবাসী। তারা বলেন, প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির বন্ধুবান্ধব এই সেতুর কতিথ ঠিকাদার। এরা ঢাকার মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে এই সেতু নির্মানে বাধা দিয়েছে। তাদেরকে বাধ্য করে এই সেতুর কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। যার ফলে নিম্নমানের জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে এই সেতু নির্মাণে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান ভূক্তভোগীরা। তারা আরও বলেন, এমনিতেই এই ছোট সেতু নির্মাণে আড়াই বছর পার করে দিয়েছে। এখন এই সেতু ভেঙে আবার নতুন করে নির্মানে সময় লেগে যাবে আরও ৫ বছর। এতে করে এই সড়কে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারের গাফিলতিতে ব্রীজটি নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই ঢেবে গেছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টায় টাঙ্গাইল-বেড়াডোমা-ওমরপুর সড়কের বেড়ডোমা এলাকার লৌহজং নদীর উপর নির্মিত ব্রীজটি দেবে যায়। নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই ব্রীজটি দেবে যাওয়ায় ওই সড়ক ব্যবহারকারীদের আরও দুর্ভোগ বাড়লো বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রীজটি নির্মাণ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। বেড়াডোমা এলাকার বাসিন্দা মাসুদ পারভেজ বলেন, ইতিপূর্বে এখানে যে বেইলি ব্রীজ ছিলো। ওই ব্রীজটি পরপর দুইবার ভেঙে কয়েক বছর আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এবার স্থায়ী ব্রীজ নির্মাণ হচ্ছে জেনে আনন্দিত হয়েছিলাম। এখন দেখছি নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই হেলে পরেছে ব্রীজ। স্থানীয় নুরু মিয়া বলেন, প্রায় ৫ বছর যাবৎ আমরা ব্রীজের কষ্টে আছি। পরপর দুইবার বেইলী ব্রীজ ভেঙে দুর্ভোগে ছিলাম। এরপর স্থায়ী নির্মাণের সময় শেষেও কাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। এবার সেই নির্মাণাধীন ব্রীজটিই হেলে পরেছে। ব্রীজ না থাকার কারণে এলাকায় কেউ বাসা ভাড়া নিতে চায় না। এছাড়াও যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে কমেছে জমির দামও।
জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সোলায়মান হাসানের অভিযোগ, ব্রীজটির নির্মাণ কাজ পেয়েছিলেন এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় এমপি তার কাজ থেকে প্রভাব খাটিয়ে কাজটি হাতিয়ে নেয়। পরে তার কর্মী আমিরুলসহ তার অনুসারীদের কাজটি দিয়েছে। যারা কখনও ব্রীজ নির্মাণ করা দেখেই নাই, তারা ব্রীজ নির্মাণ করতে এসেছেন। এটা দুঃখজনক। নদীতে তেমন পানি ও স্রোত না থাকলেও সেতুটি ঢেবে গেছে। দফায় দফায় সঠিক পদ্ধতিতে আর মানসম্মতভাবে ব্রীজটি নির্মাণ করার দাবি জানালেও তারা এমপি’র দোহাই ও ক্ষমতা দেখিয়েছেন। নদীতে পানি বা স্রোত না থাকা সত্ত্বেও ব্রীজটি কেন হেলে পড়লো এমন প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। সরকারের অর্থের অপচয় করার জন্য ব্রীজ নির্মাণে জড়িত সকলের বিচার দাবি করেছেন তিনি। ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুর্ভোগ লাঘবে কাজটি শেষ করার জন্য বার বার তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কোন কথাই শুনেন না। এই মুহুর্তে ব্রীজটি দেবে যাওয়ায় স্থানীয়সহ আশপাশের এলাকার প্রায় কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগ আবার বেড়ে গেলো।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্তা ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিরুল ইসলাম খান বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠাটি ঢাকার। তবে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন জামিল ভাইসহ কয়েকজন। আমার নেতৃত্বে কোন কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
এই সেতুর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিক্সস এন্ড বিক্স এর সাইট ঠিকাদার মোহাম্মদ জামিল খান জানান, বৃহস্পতিবার রাতে পানির প্রবল স্রোতে নির্মানাধীন সেতুর পশ্চিমপাশের বাঁশ ও কাঠের খুঁটিগুলো সরে যায়। সেতুর ঢালাই কাজে ব্যবহৃত কাঠগুলোও খুলে গেছে। এতে করে সেতুর মাঝের কিছু অংশ ডেবে যায়। এ পর্যন্ত সেতুর ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা এসে পরিদর্শন করবেন, তারপর কি সিদ্ধান্ত হয় তখন জানা যাবে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অবগত করা হয়েছে। তারা এসে পরিদর্শন করবেন, তারপর তারা যে সিদ্ধান্ত দিবেন তখন সেতুর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়া এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করে মূল রহস্য উদঘাটন করা হবে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মহিরুল ইসলাম খান জানান, গত বছর আমি অবসরে এসেছি। কাজটির প্রকল্প পরিচালক ছিলাম আমি। প্রকল্পের মেয়াদ অনুসারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রায় এক বছর পর কাজটি শুরু করেছেন। ঠিকাদারের কাজের অজ্ঞতা থাকাসহ অফিসিয়াল নিয়ম মানার প্রবনতা কম ছিল। এ কারণে আমি কাজটি বাতিল করতে চেয়েছিলাম। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফলতির কারণে ব্রীজটি হেলে পড়ার ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।