ঝিনাইদহের শৈলকুপায় রাতের আঁধারে সেচ পাম্পের দুটি ট্রান্সমিটার চুরি হয়েছে। এতে জমিতে রোপণ করা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, সময়মতো পানি না পেলে মারা যাবে তিন’শ বিঘা জমির ধান।
স্থানীয়রা জানান, গত সোমবার (৪ মার্চ) গভীর রাতে উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের দেবতলা মাঠে বিএডিসির আওতায় পরিচালিত সেচ প্রকল্পের গভীর নলকূপের দুটি ট্রান্সমিটার চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সকালে মাঠে গিয়ে কৃষকেরা ট্রান্সমিটার না দেখে নলকূপের মালিককে অবহিত করেন। পরে তিনি প্রকল্প কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান। ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পার হলেও ট্রান্সফরমারের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) তথ্যমতে, শৈলকুপা উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের দেবতলা মাঠে প্রায় সাড়ে তিন’শ বিঘা জমিতে প্রতি মৌসুমে আবাদ করা হয় বিভিন্ন জাতের ধান। ধানে সেচ দেওয়ায় কৃষকের সুবিধার্থে মুজিবনগর সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের ২০১২-১৩ অর্থবছরের আওতায় গভীর নলকূপ স্থাপন হয়। ওই নলকূপ স্থাপন হওয়ায় মাঠের ফসলে সেচ দিতে সুবিধা পায় দুই শতাধিকের বেশি কৃষক। তবে মাঠে সেচ দিতে ভরসা সেই সেচপাম্পের তিন ট্রান্সমিটারের মধ্যে দুটি চুরি হয়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, এর আগেও দুইবার ট্রান্সমিটার চুরি হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেননি। তারা ফসল বিক্রির টাকা দিয়ে ট্রান্সমিটার লাগিয়েছিলেন। কিন্তু এবার ঘরে জমানো কোনো ফসল, অর্থ নেই যে তা বিক্রি করবেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠে যতদূর চোখ পড়ে শুধুই ধানের আবাদ। জমিতে চারা রোপন শেষ হয়েছে, কিছুদিন পরই বের হবে শীষ। কিছু জমিতে হালকা পানি থাকলেও অন্য জমিতে প্রায়ই শুকিয়ে গেছে। জমিতে পানি নিতে না পারায় দিকবিদিক ছোটাছুটি করছেন কৃষকরা। কেউবা জমিতে বসে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। তাদের দাবি, কয়েকদিন পরই জমির পানি শুকিয়ে যাবে। ওই সময়ে ধানে সেচ না দিতে পারলে মারা যাবে কৃষকের স্বপ্ন।
কৃষক পাভেল খান জানান, ‘আড়াই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। কয়েক দফায় জমিতে পানি দিয়েছি। হঠাৎ করে সেচ পাম্পের ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় জমিতে পানি দেওয়া নিয়ে চিন্তার মধ্যে আছি। চারদিন হলো জমিতে পানি নেই। দু-একদিনের মধ্যে জমিতে পানি না দিলে বেড়ে ওঠা ধান মরে যাবে।’
আলিম হোসেন নামের অপর এক কৃষক বলেন, ‘চলতি মৌসুমের ধান আমরা সারাবছর রেখে চাউল বানিয়ে খাই। এবারের ধান মরে গেলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।’
কৃষক জয় হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘জমি শুকিয়ে যাচ্ছে এখন পানির প্রয়োজন। এইবার চুরি দিয়ে তিনবার ট্রান্সমিটার চুরি হয়েছে। চোর না ধরতে পারলে প্রতিবারই চুরি হবে।’ সেজন্য তিনি চুরি ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান।
দেবতলা মাঠের গভীর নলকূপের ম্যানেজার শুভ খান বলেন, ‘রাতে কোনো এক সময় সেচ পাম্পের দুটি ট্রান্সমিটার চুরি হয়। যা দিয়ে ২ শতাধিক কৃষকের প্রায় সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পানি সেচ দেওয়া হয়। ট্রান্সমিটার পুনঃস্থাপন না করা পর্যন্ত সেচ বন্ধ থাকবে। বিষয়টি আমি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তারা কৃষকদের নিজ অর্থে ট্রান্সমিটার কিনতে বলেছেন। দ্রুত ট্রান্সমিটারের ব্যবস্থা না হলে পানির অভাবে ধান মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
দিগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান তপন বলেন, ‘চুরির বিষয়টি কেউ আমাকে জানাইনি। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি, চুরি রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঝিনাইদহ বিএডিসির (ক্ষুদ্রসেচ) সহকারী প্রকৌশলী জাহিদ হাসান বলেন, দেবতলা মাঠের গভীর নলকূপে ৩টি ট্রান্সমিটারের মধ্যে একটি বিএডিসির। চুরি হওয়া দুটি ট্রান্সমিটারের মালিক কৃষকেরা। ওই ম্যানেজারকে থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। ঊধ্বর্তন কতৃপক্ষকে সুপারিশ করে একটি ট্রান্সমিটারের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। অন্যটি কৃষকদের নিজ অর্থে ক্রয় করে নিতে হবে।