ডার্ড গার্মেন্টসের গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মুক্তি, নিরীহ শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ এবং চাকুরীচ্যুত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহালের দাবিতে কলকারখানার সামনে শ্রমিকরা সমাবেশ করেছেন। গত (৪ জুন) রোজ রবিবার ২০২৩ ইং বিকাল ৩ ঘটিকার সময় গাজীপুর জেলার রাজেন্দ্রপুরস্হ ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড গার্মেন্টসের গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মুক্তি, নিরীহ শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ, বেআইনিভাবে চাকুরীচ্যুত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, রিজাইনকৃত শ্রমিকদের আইনানুগ পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, গাজীপুর কার্যালয়ে সামনে শ্রমিক সমাবেশ করে উপমহাপরিদর্শক বরাবর একটি লিখিত দরখাস্ত দিয়েছে শ্রমিকরা। উল্লেখ্য যে, গত (১৩ মে) ২০২৩ ইং এপ্রিল মাসের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ৫ বছরের রিজাইনকৃত শ্রমিকদের সকল আইনানুগ পাওনাদি পরিশোধ, ২০২০ সালের ঈদুল ফিতরের বকেয়া থাকা হাফ বোনাস পরিশোধ, ২০২২ সালে অর্জিত ছুটির টাকা চলতি মাসে পরিশোধ, যে সকল শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা রয়েছে তাদের টাকা পরিশোধসহ প্রতি মাসের সাতকর্ম দিবসের মধ্যে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে কারখানার সামনে শ্রমিকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরের দিন (১৪ মে) শ্রমিকরা দাবিতে অনর থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যান। বিকাল চারটার দিকে মালিক কারখানায় আসলে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, শিল্প পুলিশের প্রতিনিধি, সাধারণ শ্রমিকদের কে নিয়ে বৈঠকে বসেন, উক্ত বৈঠকে মালিক শ্রমিকের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ার কারণে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন শ্রমিকরা। পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। কারখানার পাশে থাকা একটি পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বাসায় ফিরে যান। ঐ ঘটনায় পৃথক দুইটি মামলা হয়েছে শ্রীপুর থানায়। একটি গত (১৫ মে) ২০২৩ ইং এস আই মিনহাজুল হক শ্রীপুর সাব-জোন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ- ২, বাদী হয়ে ১৪৩/৩৩২/৩৩৩/৩৫৩/৪৩৬/৪২৭ ধারায় ঐ কারখানার/ (৮ জন) শ্রমিককে আসামি করে, অজ্ঞাতনামা ৩০০ জন শ্রমিকের নামে মামলা দায়ের করেন শ্রীপুর থানায়। উক্ত ঘটনায় বেশ কিছু নিরীহ শ্রমিকদের গ্রেফতার করেছে বলে দাবী শ্রমিক পরিবারের। ২য় মামলাটি হয়েছে গত (১৭ মে) ২০২৩ ইং ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার এস এম নুরুজ্জামান বাদী হয়ে শ্রমিকদের নামে মামলা দায়ের করেছেন শ্রীপুর থানায়। উক্ত শ্রম অসন্তোষকে কেন্দ্র করে কারখানা কর্তৃপক্ষ ১৪ তারিখের ১ নোটিশের মাধ্যমে ১৫ তারিখ থেকে কারখানাটি ১২(১) ধারায় বন্ধ ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে (২৪ মে) ২০২৩ ইং কারখানাটি খুলে দিয়ে প্রায় পাঁচশত শ্রমিককে বরখাস্তের আদেশ দিয়ে চাকুরি হইতে বিরত রাখছেন বলে দাবি শ্রমিকদের। সমাবেশের যোগ দেওয়া শ্রমিকরা দাবি করে বলেন, কারখানার মালিক শ্রম আইনের কোনো কিছুই তোয়াক্কা না করে শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আসছেন। সম্পূর্ণ হয়রানি মূলক এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুরাতন শ্রমিকদের বেছে বেছে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার জন্যই বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা ২৩(৪) বেছে নিয়ে পুরাতন শ্রমিকদের দরখাস্ত করেছেন মালিকপক্ষ। শ্রমিকরা ন্যায় বিচার চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। শ্রমিকদের ডাকে সমাবেশে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর মহানগর শাখার সভাপতি শফিউল আলম বলেন, সাধারণ নিরীহ শ্রমিকরা জালাও পোরাও বিশ্বাস করে না, তারা কারখানায় কাজ করতে চান এবং সময় মতো বেতন ভাতা পেলেই তারা খুশি থাকেন। উক্ত ঘটনায় প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, কোনো নিরীহ শ্রমিককে যাতে হয়রানি করা না হয় সে ব্যাপারে প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের শহিদুল ইসলাম শহীদ, শ্রমিক নেতা তমিজ উদ্দিন তনু, হামিদ সরকার, শাজাহান সিরাজ সহ অন্যান্য ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।