ঢাকা কাস্টমস হাউস গিলে খাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানেরই রিস্ক ম্যানেজমেন্ট দপ্তরের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা শিবলী মাহফুজ হিমেল ও কমিশনার এ কে এম নূরুল হুদা আজাদ। এই দুই কুতুবের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে যারা নিঃস্ব হয়েছেন তারা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
হিমেল ও নূরুল হুদা গং ঢাকা কাস্টমস হাউসে সেবা নিতে আসা ব্যবসায়ীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।
অন্যকে সর্বশান্ত করে নিজেরা অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। রাজধানীতে গাড়ি-বাড়িসহ নামে বেনামে কিনেছেন অসংখ্য ফ্লাট।
জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য খালাসের সুবিধা দিয়ে বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন এই চক্রের সদস্যরা।
এরআগে ঢাকা কাস্টমস হাউসের আরাফাতের ঘুষ নেওয়ার তথ্য ফাঁস হয়। এই অফিসের সুপারিন্টেন্ড নায়েব আলীর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ পড়লে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। হিমেল ও নুরুল হুদা গং জ্ঞাত আয়বহির্ভূথ সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে কোটি কোটি উপার্জন করেছেন। বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন।
তারা তাদের পছন্দনীয় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে চোরাই পণ্য খালাসের মাধ্যমে এক দিকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন অপরদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে।
মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি করা জীবনবিনাশী যৌন উত্তেজক ওষুধসহ নানা ধরণের অবৈধপণ্য আমদানিতে সহযোগিতার মাধ্যমে এই সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
এদিকে এই সিন্ডিকেট অবৈধ পন্থায় আয় করা টাকা বিদেশে পাচার করছে সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। ওইসব সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান পণ্য খালাসের মাধ্যমে একে অপরের অবৈধ কর্মকান্ড ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার করছে।
এছাড়াও এই চক্রের অত্যাচারে ঢাকা কাস্টম হাউজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানা যায়।
এই দুই প্রতারক চক্রের ভয়ংকর জালিয়াতির নানা তথ্য আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে।
অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়, বায়ো-জিন নামে এক প্রতিষ্ঠানের সিইও মোহাম্মদ জাহিদুল হক পোল্যান্ড থেকে তার্কিজ এয়ার ওয়েজে কসমেটিকস পণ্য আমদানি করেন। আমদানি করা পণ্যের বিপরীতে গত ৩১ আগস্ট শুল্ক কর বাবদ ২৩ লাখ ৯২ হাজার ৯৯০.৯৩ টাকা পরিশোধ করেন।
পরবর্তীতে মালামাল ডেলিভারি পর্যায়ে জানতে পারেন, পণ্য চালানটির বিল লক করা হয়েছে। এবিষয়ে ১লা সেপ্টেম্বর ঢাকা কাস্টমস হাউসের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট দপ্তরের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা শিবলী মাহফুজ হিমেলের সাথে দেখা করেন জাহিদুল হক।
এসময় ওই কর্মকর্তা বায়ো-জিন প্রতিষ্ঠানের নামে মিথ্যা ও ভুলেভরা ইনভয়েজ দেখান। ইনভয়েজে গড়মিল রয়েছে এমন তথ্যে ডেলিভারি চালানটি আটক দেখানো হয়েছে বলে জানান। এছাড়াও সিএন্ডএফ এজেন্টের এআইএন লক করা হয়েছে বলেও জানান।
বিষয়টি নিয়ে জাহিদুল হক জানান, এবিষয়ে তিনি ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যার নম্বর ১১৯। এছাড়াও
ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার এ কে এম নূরুল হুদার কাছে বিষয়টি নিয়ে লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করে প্রতিকার প্রার্থনা করেন। কমিশনার নুরুল হুদা বিষয়টি নিয়ে হিমেলের সাথে আলোচনা করে সমাধানের পরামর্শ দেন। আরও পরামর্শ দেন, ব্যবসা করতে হলে এখানে সমঝোতা করতে হবে। তাছাড়া ব্যবসা করে মজা পাবেন না। হয়রানির শিকার হবেন।
পরবর্তীতে জাহিদুল হক বিষয়টি নিয়ে হিমেলের সাথে যোগাযোগ করলে তার কাছে এককোটি টাকা ঘুষ দাবি করেন হিমেল। ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে হিমেল জাহিদুল হককে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি-ধামকি দেন।
এরপর জাহিদুল হক উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করলে ঢাকা কাস্টমস হাউসের যুগ্ম-কমিশনার মোঃ মিনহাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি জাহিদুল হকের পক্ষে রায় দিলেও অজ্ঞাত কারণে পণ্য চালানটি তিনি ঘুষ প্রদান ছাড়া খালাস করতে পারছেন না। এতেকরে জাহিদুল হক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাঁর ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। বিষয়টি যেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নজরে এসে জাহিদুল হক পরিত্রান পান সেই প্রত্যাশা করেন তিনি।