জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পাল্টে যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়া। তীব্র তাপ প্রবাহে পুড়ছে এ জনপদ। নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। দীর্ঘ ৬৫ বছর পর এবার বর্ষা মৌসুমে তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙ্গে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়েছে। তবে এমন আবহাওয়া আরো এক সপ্তাহ চলতে পারে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
শীত মৌসুমে তীব্র শীত আর গরমে তীব্র গরম। অসহনীয় অবস্থা চলছে গত কয়েকদিন ধরে। দিনে গরম, রাতেও অসহ্য গরম। জুন থেকে বর্ষা মৌসুম শুরু হলেও এখনো বৃষ্টির ফোঁটা পড়েনি। দিনে যেন আগুনের হলকা বইছে। আর রাতের তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগে বিক্ষিপ্ত এলাকায় তাপমাত্রা বাড়লেও এখন বাড়ছে পুরো এলাকায়।
গরমে নাজেহাল সব বয়সী মানুষ। অস্থির হয়ে উঠেছে জনজীবন। ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা প্রাণিকুলেরও। কোথাও স্বস্থি নেই। বগুড়া আবহাওয়া অফিস সহকারি আবহাওয়াবিদ মোঃ আব্দুল হান্নান জানান, তাপমাত্রা আরো কয়েকদিন বাড়তে পারে।
১৯৫৮ সালের জুনে দেশের উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রবিবার সেখানকার তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ১ডিগ্রী সেলসিযাস। চলতি বছরের এপ্রিলে ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। দিনের মধ্যভাগে তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে গরম হয়ে উঠেছে অসহনীয়। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের ঘনঘন লোডিশেডিংয়ে ভোগান্তির মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। এপ্রিল মাস থেকেই বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়া বেশ উত্তপ্ত। তীব্র দাবদাহে কর্মজীবী মানুষের নাভিশ^াস উঠেছে। জুুনের প্রথম সপ্তাহে তাপপ্রবাহ যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে বাতাসের আদ্রতা। গরমের কারণে কেউ কেউ পুকুর ও নদীর পানিতে নেমে বাঁচার চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ ছায়াযুক্ত গাছের নীচে আশ্রয় নিচ্ছেন। তীব্র গরম ও ঘনঘন লোডশেডিংএ ব্যাহত হচ্ছে লেখাপড়া, ব্যবসা, চিকিৎসাসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। একদিকে তীব্র গরম আর অন্যদিকে বিদ্যুতের ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে শহরের বাসিন্দা, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও হাসপাতালে চিকিৎসারত রোগীদের জীবন দূর্বিসহ হয়ে পড়েছে।
সোনাতলা উপজেলা থেকে বগুড়া শহরে এসেছেন আজিজ নামের এক মধ্য বয়সী রিক্সা চালক। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানান, রিক্সা চালানো যাচ্ছে না। দুই এক টিপ মারলেই বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। এতে সারাদিন রিক্সা চালিয়ে জমার টাকা দিয়ে হাতে তেমন কিছুই থাকছে না। এতে সংসার চালানো কষ্ট হচ্ছে। হকার্স মার্কেটের দোকানদার মিনহাজ¦ জানালেন, আগে ৮/১০ হাজার টাকা বেচা-কেনা হত। এখন দুই হাজার টাকা বেচা কষ্ট হচ্ছে। তীব্র্র গরমে ও প্রখর রোদের কারণে মার্কেটে লোকজন কম আসছে। বগুড়া নিউজ মার্কেটের বোরকা হাউজের মালিক সাজেদুর রহমান সিজু জানালেন, আগে ভালই বেচা-কেনা হচ্ছিল। এখন বেচা কেনা নাই বললে চলে। সারাদিন ২/৩ গ্রাহক আসছে। এতে দোকান খরচই হচ্ছে না। এ অবস্থা থাকলে দোকান বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
ফল ব্যবসী হাসান জানালেন, আগে ভারে আম বিক্রি করে ভালই চলতো। এখন এখন সারাদিন ১০/১৫ কেজি আম বিক্রি করা যাচ্ছে না। এঅবস্থা থাকলে আমাদের তো না খেয়ে মরতে হবে। প্রচন্ড রোদ ও দাবদাহে ব্যবসায়ীরা এমনিতেই নাজেহালের মধ্যে রয়েছেন এর উপরের বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং তা আরো বাড়িয়ে তুলেছেন। এ অবস্থায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।