ঢাকা, সোমবার ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২০শে মাঘ ১৪৩১

নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবে সদস্যপদ নিয়ে অস্থিরতা, তালাবদ্ধ কার্যালয়

সুবীর দাস, নওগাঁ | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৮ জানুয়ারী ২০২৫ ০৫:২৭:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবে নির্বাচন নিয়ে জটিলতা ও নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এখন চরমে। এই দ্বন্দ্বের জেরে সাংবাদিকদের একটি অংশ প্রেস ক্লাবে তালা দিয়ে প্রেস ক্লাবের দখল নিয়েছেন। প্রেস ক্লাব তালাবদ্ধ করে চাবি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ট্রেজারিতে জমা দিয়েছে তাঁরা। এ পরিস্থিতিতে গত চার দিন ধরে প্রেস ক্লাবের সদস্যরা কার্যালয়ে ঢুকতে পারছেন না। এ ঘটনায় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক অন্তোষ বিরাজ করছে।

এদিকে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবে বর্তমানে তিনটি কমিটি বিরাজ করছে। 

জেলা প্রেস ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাধারণ সভা ডেকে সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোট অথবা সাধারণ সদস্যদের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে প্রেস ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু প্রেস ক্লাবের কয়েকজন সদস্য কোনো প্রকার নিয়মের তোয়াক্কা না করে সাধারণ সভা না ডেকে গত মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।

পাঁচ সদস্যের ওই আহ্বায়ক কমিটিতে প্রেস ক্লাবের সদস্য নাছিমুল হক বুলবুলকে আহ্বায়ক ও আসাদুর রহমান জয়কে সদস্য সচিব করা হয়। 

প্রেস ক্লাবের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পেশিশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অবৈধভাবে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর মঙ্গলবার দুপুরে তাঁরা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রেস ক্লাবে মহড়া দিয়ে প্রেস ক্লাবে তালা মেরে দখল করে নেয়। প্রেস ক্লাবে পেশিশক্তির প্রয়োগ বন্ধ ও সাংবাদিকদের মধ্যকার বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে জেলা প্রেস ক্লাবসহ পাঁচটি সাংবাদিক সংগঠন মিলে প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয়। 

পাঁচটি সাংবাদিক সংগঠন হচ্ছে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব, জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জেলা টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম। ৯ সদস্যবিশিষ্ট এই আহ্বায়ক কমিটতে জেলা প্রেস ক্লাবের সদস্য এস এম রায়হান আলমকে আহ্বায়ক ও জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আজাদ হোসেনকে মুরাদকে সদস্য সচিব করা হয়।

এছাড়া ইনডেপেডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিনিধি সাদেকুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও সকালের সময় পত্রিকার প্রতিনিধি মাহমুদুননবী বেলালকে সদস্য সচিব করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এই কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। 

এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সদ্য বিলুপ্ত কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘প্রেস ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযাযী সাধারণ সভা ডেকে ভোট অথবা সাধারণ সদস্যদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রেস ক্লাবের নতুন কমিটি গঠনের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে সাধারণ সভা না ডেকে কমিটি বিলুপ্ত করেছেন। শুধু তাই নয় প্রেস ক্লাবের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য প্রেস ক্লাবের কিছু সদস্য বহিরাগত লোকদের নিয়ে মহড়া দিয়ে প্রেস ক্লাবের আহবায়ক কমিটির নেতা দাবি করে প্রেস ক্লাবে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। 

এ ঘটনায় প্রেস ক্লাবের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রেস ক্লাবে ঢুকতে গেলে প্রেস ক্লাব তালাবদ্ধ দেখতে পান। পরবর্তীতে তাঁরা জানতে পারেন প্রেস ক্লাব তালাবদ্ধ করে চাবি জেলা প্রেস ক্লাবের কার্যালয়ে ট্রেজারিতে জমা দেওয়া হয়েছে।’  

নওগাঁর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রেস ক্লাবে তালা ঝুলিয়ে দখল করে নেওয়া এবং চাবি ডিসির ট্রেজারিতে জমা দেওয়ার ঘটনা সাংবাদিকদের জন্য খুবই লজ্জার। 

এছাড়া প্রেস ক্লাব ঘিরে তিনটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার ঘটনাও আমাদের জন্য বিব্রতকর। এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের উচিত যত দ্রুত সম্ভব প্রেস ক্লাবের তালা খুলে দেওয়া। প্রেস ক্লাবসহ যে কোনো সংগঠন তার গঠনতন্ত্র বা সংবিধান অনুযায়ী চলে। প্রেস ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুাযায়ী এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। অন্য কোনোভাবে সমস্যার সমাধান করা হলে সেটাকে অযাচিত হস্তক্ষেপ বলে গণ্য হবে।’

নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের একাংশের আহ্বায়ক এস এম রায়হান আলম বলেন, ‘প্রেস ক্লাব বৃত্তিবৃত্তিক চর্চার এবং মর্যাদার প্রতিষ্ঠান। এ ধরণের প্রতিষ্ঠান তালা মেরে দখল করে নেওয়ার ঘটনা খুবই ন্যাক্কারজনক। পেশিশক্তি প্রয়োগ করে প্রেস ক্লাব দখল কিংবা অন্যায়ভাবে কোনো চাপিয়ে দেওয়ার ঘটনা সাংবাদিকেরা কখনও মেনে নেবে না। জেলা প্রশাসনের উচিত প্রেস ক্লাবের চাবি দ্রুত প্রেস ক্লাবের প্রকৃত সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া।’

এ ব্যাপারে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি খুবই বিব্রত। প্রেস ক্লাবে তালা তো আমি লাগাইনি। একটু ওয়েট করেন। বিষয়টি সমাধানের একটা চেষ্টা করছি। আপনারা (সাংবাদিকরা) নিজেরা সমস্যার সৃষ্টি করেছেন। এটার সমাধানের জন্য আপনারা নিজেরাও বসতে পারেন। আমাকে সমাধান দিতে বললে ওয়েট করতে হবে।’