নরসিংদীর রায়পুরায় ফসলি জমির বুক চিরে ছুটছে ট্রাক্টরের পর ট্রাক্টর। ফসলি জমি থেকে উর্বর মাটি ইট ভাটায় নিয়ে যাওয়াই তাদের মূল লক্ষ। এতে বিভিন্ন এলাকার ফসল নষ্ট হচ্ছে। সেই সাথে উর্বরতা হারিয়ে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে অনাবাদি জমির পরিমান। ফলে কমে যাচ্ছে ফসলের উৎপাদন।
চলছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমির মাঝখান থেকে অত্যাধুনিক ভেকু মেশিন দিয়ে জমির মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ। সে মাটি সংগ্রহে ব্যস্ত ইটভাটার শ্রমিকরা।
যেই জমির উপরিভাগে ধান বোনা হতো সে জমিতে এখন বিশাল আকারের গর্ত। এভাবেই রায়পুরা উপজেলার মহেষপুর ইউনিয়নের বেগমাবাদ এলাকায় বিপুল পরিমাণ ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটার পেটে। এতে করে ওই জমিগুলো যেমন উর্বরতা হারাচ্ছে তেমনি ধ্বংস হচ্ছে এসব ফসলি জমি। দেশের আইন অনুযায়ী ইটভাটার জন্য কৃষি জমি থেকে মাটি সংগ্রহ নিষিদ্ধ হলেও তার কোনো তোয়াক্কা করছে না অধিকাংশ ইটভাটার মালিকরা।
পরিবেশ অধিদপ্তর আইন লঙ্ঘনকারী ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে ফসলি জমি ধ্বংসের মহোৎসব হরহামেশাই চোখে পড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলায় অবস্থিত ইটভাটাগুলোর মধ্যে বেশকিছু ইটভাটাই ছাড়পত্র নেই। আবার কোনটি ইট পোড়ানো আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ এলাকায় পড়েছে। ইটভাটা মালিকরা নানা কৌশলে কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কানি উপরিভাগের এক ফুট মাটি ৩০-৩৫ হাজার টাকায় কিনে নিচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বেগমাবাদ এলাকার চারদিকে সবুজ ফসলের সমাহার। মাঝখান দিয়ে আকাশের দিকে উড়ে যাচ্ছে কালো ধোঁয়া। আর সে ধোঁয়ায় বিষিয়ে উঠছে গোটা পরিবেশ। ফসলি জমির মাঝখান দিয়ে সড়ক বানিয়ে ট্রাক্টর চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছু কিছু কৃষকদের অসচতেনতার কারণে ফসলি জমিগুলো এখন হুমকির মুখে। কেননা তারা ভাটামালিকদের বিভিন্ন প্ররোচনায় আকৃষ্ট হয়ে সোনালী ফসল ফলানো জমিগুলো থেকে মাটি বিক্রি করে থাকে। ভাটাগুলোর চারপাশ ঘুরে দেখা যায় এ এক অন্যরকম কর্মব্যস্ততা। নির্বিচারে চলছে ফসলি জমির উপর অত্যাচার। ইট ভাটা গুলোর মধ্যে এএমবি, একতা ও মিতালি উল্লেখ্যযোগ্য।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রায়পুরা উপজেলায় ২৫টি ব্রিক ফ্রিল্ড রয়েছে। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদী না থাকায় ও ব্যক্তিগত সমস্যায় ৮টি বন্ধ হয়ে গেছে। ৬টির কোন ছাড়পত্র নেই। বাকী ১১টি সরকারী নির্দেশনা মেনে পরিচালিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কৃষক জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ আমরা স্থানীয়রা মাটি নেওয়ার জন্য বাঁধা দিয়েছি কিন্তু তারা তা মানে নি। তারা বাছাই করে মাঝের জমিগুলোর মাটি ক্রয় করে। যাতে সেখান থেকে মাটি নিয়ে যাওয়ার পর আরেকজনের জমির মাটি ভেঙ্গে পরে ফসল নষ্ট হওয়ার ভয়ে সেও জমি বিক্রি করে দেয়। এভাবেই একের পর এক ফসলী জমি নষ্ট হচ্ছে।
এ ব্যাপারে একতা ইট ভাটার ম্যানেজার বাবুল মিয়া ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। ফসলী জমির মাটিগুলো আপনারা কিভাবে এনেছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এএমবি ব্রিক ফিল্ড এর মালিক আলমগীর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আপনারা কার অনুমতি নিয়ে ইটভাটায় প্রবেশ করেছেন? এগুলো জমির মালিকদের কাছে গিয়া জিজ্ঞাসা করেন। প্রতিবেদকের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমি ইট ভাটার মালিক, আমার ক্ষমতার কাছে আপনার ক্ষমতার প্রশ্নই ওঠে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইট বানাতে ফসলী মাটি কেটে নেওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি জমিতে মূলত জমির উপরের অংশটা বেশি ব্যবহৃত হয়। বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর হোসেন বলেন, ইট ভাটা গুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সাথে সকল ধরনের কাজে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ। কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্থ করে কোন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কোন ইট ভাটা করার সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর নরসিংদীর উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, রায়পুরায় ২৫টি ব্রিক ফ্রিল্ড রয়েছে। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদী না থাকায় ও ব্যক্তিগত সমস্যায় ৮টি বন্ধ হয়ে গেছে। ৬টির কোন ছাড়পত্র নেই। বাকী ১১টি সরকারী নির্দেশনা মেনে পরিচালিত হচ্ছে।