নাসিরনগর উপজেলায় গত জানুয়ারি হতে অক্টোম্বর মাসে ৫২টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ট্রান্সফরমার না থাকায় দুই সহস্রাধিক পরিবার অন্ধকারে রয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ট্রান্সফর্মার কিনে চুরি হওয়া জায়াগায় স্থাপন করা হচ্ছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ থাকাকালে ও লোডশেডিংয়ের সময় ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে, যা কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষের ধারণা এর সঙ্গে বিদ্যুতের টেকনিশিয়ান জড়িত রয়েছে।
এ বিষয়ে নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের জিএম প্রকৌশলী মো. আমজাদ হোসন বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষা-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৭টি স্থানে ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ার পর নতুন করে স্থাপন করা হয়নি। এতে অন্তত তিন হাজার শিক্ষার্থীসহ ব্যবসায়ীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। চুরি হওয়া স্থানে প্রথমবার অর্ধেক ও দ্বিতীয়বার সম্পূর্ণ টাকা গ্রাহকদের দিতে হয়। এটা কষ্টের বিষয়। চুরি ঠেকাতে গ্রাহকদের সচেতনতার পাশাপাশি পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও চুরি ঠেকাতে মাইকিং করা হবে। এ বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও জরুরি। পুলিশ প্রশাসনেরও সহযোগিতা চাওয়া হবে।
আন্দ্রাবহ আদর্শ গুচ্ছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পার্থ দাস বলেন, আগস্ট মাসে ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। আজ পর্যন্ত ট্রান্সফরমার লাগানো সম্ভব হচ্ছ না।
নাসিরনগর নুরিয়া গাউছিয়া ট্রেডার্সের ব্যবসায়ী মো. রমজান মিয়া বলেন, ৩০ অক্টোবরে রাত্রে আমার ৩ টি ট্রান্সফরমার চুরির হয়েছ।
অধিকাংশ গ্রাহক দৈনিক বায়ান্নকে বলেন, ট্রান্সফরমারের ভেতরের তামার কয়েল নেয় চোররা। কিছুদিন পরপরই একের পর এক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেই চলছে। কিন্তু প্রতিরোধে বা চুরি ঠেকাতে পল্লী বিদ্যুতের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। ট্রান্সফরমার চুরি ঠেকাতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।
সরেজমিন বিদ্যুৎ গ্রাহক সাহেদ মিয়ার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ৫০ হাজার টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফরমার কিনে স্থাপন করতে হয়। এতে প্রায় এক সপ্তাহ অন্ধকারে থাকতে হয়েছে সবাইকে। লাইন চালু থাকাকালে সাধারণ মানুষের পক্ষে ট্রান্সফরমার চুরি করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে বিদ্যুতের ট্রেকনিশিয়ান জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন গ্রাহকরা।
তারা আরও অভিযোগ করেন, মাঝে মাঝে বিদ্যুতের লোডশেডিং দেওয়া হয়। ওই সময়েই ট্রান্সফরমার চুরি হয়। আর ট্রান্সফরমার চুরি হলে পল্লী বিদ্যুতের অফিস থেকে গ্রাহকদের টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফরমার স্থাপন করতে হয়। এতে ওই উপজেলার সহস্রাধিক পরিবার অন্ধকারে রয়েছে। এতে করে গ্রাহকরা রয়েছে চরম ভোগান্তিতে।
চরম ভোগান্তিতে থাকলেও নতুন করে ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হচ্ছে না। গ্রাহকদের টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফরমার কিনতে হবে বলে জানান পল্লী বিদ্যুতের কর্তৃকপক্ষ। এতে করে গ্রাহকরা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে নাসিরনগর থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের বলেন, পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রান্সফরমার চুরি ঠেকাতে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে চোর চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাসিরনগর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসে ১১টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ৬টি, মার্চ মাসে ৫টি, এপ্রিল মাসে ৪টি, মে মাসে ১টি, জুন মাসে ২টি, আগস্টে ৫টি, সেপ্টেম্বর ৫টি, অক্টোবর ৬টি এবং ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০টিসহ মোট ৫২টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। যার মূল্য ৩২ লাখ ৩১ হাজার টাকা।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে