নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর রিকশায় মাইক বেঁধে প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করতে শোনা যেত একসময়। নানা শ্লোগানে প্রার্থী ও তার প্রতীকের গুণগান তুলে ধরেতেন ঘোষক। এসব শ্লোগান শুনতে রিকশার ধারে ভিড়তেন মানুষ। সময় বদলেছে, এখন আর এসব শোনা যাচ্ছে না। যশোরের শার্শা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও ভ্যান রিকসায় ডিজিটাল সামগ্রী ব্যবহার করে মাইকিং চলছে শহর কিংবা গ্রামে।
দেশের জনপ্রিয় গানগুলোর সুর ও সংগীত মিল রেখে পাল্টে ফেলেছেন কথাগুলো। প্রার্থীদের ভোট প্রার্থনায় ব্যবহার করা হচ্ছে জনপ্রিয় এসব গানের সুর। অনেকে আবার মেলোডি মিউজিক ব্যবহার করে উচ্চশব্দে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এতে যেমন শব্দ দূষণ হচ্ছে, তেমনি বিরক্ত হচ্ছেন ভোটাররা। পাল্লা দিয়ে এক পথে কয়েকজন প্রার্থীর মাইকিংয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন জনসাধারণ। মাইকিং দেখলে রাস্তায় বের হওয়া পথচারীরা কান চেপে ধরে দূরে সরে যাচ্ছেন। উপজেলায় ৫৪৭ জন প্রার্থী প্রতিদিন প্রচারণা চালাচ্ছেন।
আগামী ২৮ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে পুরো শার্শা উপজেলা জুড়ে চলছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। বিভিন্ন এলাকায় ইউপি সদস্য (চেয়ারম্যান, সাধারণ মেম্বার, সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার) প্রার্থীদের পক্ষে দুপুর থেকে শুরু করে রাত আটটা-নয়টা পর্যন্ত উচ্চ শব্দে মাইকিং চলছে। দিনভর মাইকের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাসহ উপজেলাবাসী। পরীক্ষার্থীদের সমস্যার কথা ভেবে মাইকিং বন্ধ অথবা সীমিত করার দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগী পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৮ নভেম্বর শার্শা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ১০ ইউনিয়নে ৪৩ জন চেয়ারম্যান, ৪০৭ জন সদস্য ও ৯৭ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সব মিলিয়ে উপজেলায় মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৫৪৭ জন।
প্রার্থীরা ভ্যান রিকশা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে মাইক লাগিয়ে প্রচারণামূলক গান ও শ্লোগান প্রচার করছেন। এসব ভ্রাম্যমাণ মাইকের লাগাতার শব্দে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থী ও আসন্ন এইচএসসির পরীক্ষার্থীরা। নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারকাজে একটি ওয়ার্ডে একের অধিক মাইক ও নির্বাচনী এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বৃদ্ধি করে এমন অন্য কোনো যন্ত্রের ব্যবহার করা যাবে না। বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত মাইকিং করে প্রচারণা চালানোর নিয়ম থাকলেও, সেটি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়েছেন অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা।
উত্তর শার্শার শাড়াতলা এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থীর অভিভাবক আব্দুর রহমান বলেন, রাত সাড়ে আটটা-নয়টা পর্যন্ত মাইকে প্রচারণা চলতে থাকে। বিকট শব্দের কারণে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় মন বসাতে পারছে না।
নিজামপুর এলাকার চার-পাঁচজন অভিভাবক বলেন, এভাবে দিনরাত মাইক বাজানোর কারণে পরীক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের সমস্যার কথা ভেবে প্রার্থীদের মাইকিং বন্ধ অথবা সীমিত করার দাবি জানান তারা।
নাভারন বাজারের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক খোরশেদ আলম বলেন, গান বাজিয়ে প্রচারণা বিরক্ত লাগে। উচ্চশব্দে বাচ্চারা পড়ালেখা করতে পারে না। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এসব দেখা উচিত প্রশাসনের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রার্থী বলেন, আসলে মানুষ এখন আর পুরনো স্টাইলে প্রচারণা শুনতে চায় না। নতুন কিছু যুক্ত করলে মানুষ তা শোনে। তাই গান বাজিয়ে প্রচারণায় মনযোগ বেশি আকর্ষণ করে।
এদিকে শার্শা, বাগআঁচড়া, পুটখালি, বাহাদুরপুর, নিজামপুর, ডিহি, লক্ষনপুর ইউনিয়নের কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, সন্ধ্যার পর মাইকিং বন্ধের ব্যাপারে সব প্রার্থী যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে তারাও সেটি বাস্তবায়ন করবেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, প্রার্থীরা যেন আচরণবিধি মেনে মাইকিং করেন, সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান থাকবে, তাঁরা যেন পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে নির্বাচন কমিশনের বেধে দেওয়া সময় ও নির্দেশের মধ্যে মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালান।