ঢাকা, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১

পাখি শিকার আইননত দন্ডনীয় অপরাধ জানতেন না ওয়াহেদ

বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি | প্রকাশের সময় : সোমবার ১৮ এপ্রিল ২০২২ ১১:০৮:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

ঠাকুরগাঁওয়ের বালীয়াডাঙ্গী উপজেলায় আব্দুল ওয়াহেদ নামে এক ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়া জাতের লাল সিরাজি ও কালো সিরাজি দুই জাতের কবুতর নিয়ে পালন করা শুরু করেন ৷ বর্তমানে তিনি খামারে একশো জোড়া কবুতর লালন পালন করছেন৷ খামারে কবুতরের ছয়টি জাত রয়েছে৷  পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভাবে কবুতর চাষাবাদ করার স্বপ্নও বুনছেন তিনি৷ উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নে নিজ বাড়ীতে এ খামার করেন তিনি।

বালীয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলায় গরু,ছাগল বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করা হলেও কবুতর চাষ হয়না।তবে কিছু বাড়িতে অল্প করে কবুতর চাষ হয়৷ সেটি বাণিজ্যিক ভাবে হয়না৷

জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই পাখি শিকারে বেশ মনযোগী ছিল ওয়াহেদ। সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সাথে নিয়ে বেরিয়ে যেতেন পাখি শিকার করতে৷ দিনের অধিকাংশ সময় কাটাতেন শিকারের পথে৷ নানা কৌশলে শিকার করতেন পাখি৷ পাখি শিকার নেশা ও পেশায় পরিণত হয় তার৷ বয়স বাড়ার সাথে  বদলে ফেলে শিকার করার কৌশল৷

যুবক বয়সে পাখি শিকার করার জন্য ক্রয় করেন বন্দুক। প্রতিদিন সময় করে বের হতেন শিকার করতে৷ শিকারবিহীন খুব কম দিন অতিবাহিত  হয়েছে তার জীবনে।

 

পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন পাখি শিকার করা আইননত দন্ডনীয় অপরাধ। ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দণ্ডের বিধান রয়েছে। শিকারের মাধ্যমে অনেক পাখিকে এতিম করা ও কষ্ট দেওয়া হয়৷ তখন থেকে পাখি শিকার বাদ দিয়ে কবুতর পালন শুরু করেন তিনি৷

কবুতর চাষী আব্দুল ওয়াহেদ বলেন,আমি স্কুল থাকা অবস্থা থেকে পাখি শিকার করতাম৷ শখের বসে বন্দুক কিনেছিলাম৷ পরে পাখি শিকারের আইন জানার পর কবুতরের প্রতি আমার আসক্তি বাড়ে৷ তখন থেকেই পাখি শিকার বন্ধ করে দেয়। তারপর কুমিল্লা থেকে লাল সিরাজি ও কালো সিরাজি নামে অস্ট্রেলিয়া জাতের দুই জোড়া কবুতর নিয়ে আসি৷ সেগুলো লালন পালন শুরু করি৷ আমি কবুতরের আশেপাশে থাকলেই তারা কাছে চলে আসে। একেকজন শরীরের একেক জায়গায় বসে।  বর্তমানে আশি জোড়া কবুতর ও বিশ জোড়া বাচ্চা কবুতর আছে৷ ছয় জাতের কবুতর পালন করছি আমি৷ দৈনিক বিশ থেকে পঁচিশ টাকা খরচ হয়। কয়েকজোড়া বাজারে বিক্রি করেছি৷ জোড়া প্রতি দুই হাজার করে টাকা পেয়েছি৷ আমি এটি বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করা যায়। যদি সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে আমি ভাল কিছু করতে পারব ইনশাআল্লাহ।

কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী বলেন, আমি কবুতর খামারটি দেখতে এসেছি৷ আমি নিজেও কবুতর পালন করতে বেশ আগ্রহী। এখানে আসার পর ওয়াহেদ চাচা আমাকে সার্বিক পরামর্শ দিলেন। কোন জাতের কবুতর লালন পালন করলে ভাল হয়। কোন জাতটি লাভবান হওয়া যায়। এ ছাড়াও কেমন খরচ হতে পারে। সার্বিক বিষয়ে তিনি আমাকে বললেন। আমি খুব অল্প সময়ের মধ্যে কবুতর পালন করা শুরু করব ইনশাআল্লাহ।

 

প্রতিবেশী হাসান আলী রুবেল বলেন,তিনি কবুতর শখের বসে পালন করা শুরু করেছিলেন৷ কিন্তু এখন প্রায় খামারের মত হয়ে গেছে৷ আর কবুতরের সাথে উনার আলাদা একটি সখ্যতা তৈরী হয়েছে৷ তিনি এখন  বাণিজ্যিক ভাবে কবুতর চাষাবাদ করার জন্য চেষ্টা করছেন৷যদি সরকারের পক্ষ থেকে  সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় তাহলে অনেক ভাল হবে৷ অনেক বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে৷ পাশাপাশি বেকারত্ব যে সমাজ থেকে অভিশাপ সেটি ঘুচবে বলে আমি আশা করছি৷

 

উপজেলা প্রাণী সম্পদ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডাঃ নাসিরুল ইসলাম বলেন,  উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে কেউ কবুতর চাষ করছেননা। তবে পারিবারিক ভাবে অনেকে লালন পালন করছেন৷ কেউ যদি বাণিজ্যিক ভাবে কবুতর চাষাবাদ করার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন৷ তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সরকারি বিধি অনুযায়ী সার্বিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে৷