পেয়াাঁজ আবাদে অন্যতম উত্তরের জেলা পাবনায় আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হলেও দাম পাচ্ছে না কৃষক। বিষা প্রতি ৫০ মন করে ফলন পেলেও যে দাম পাচ্ছে তাতে করে আবাদের খরচই উঠছে না বলে জানান কৃষকেরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর পাবনায় ৮ হাজার ৫’শ ৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের কন্দ (মুড়িকাটা) পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৯’শ ৫০ হেক্টর জমির ফলন উঠানো হয়েছে। গড় ফলন হয়েছে ১২ দশমিক ৪ মেট্রিক টন।
পেঁয়াজ চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদে খরচ হয় অন্তত ৪০ হাজার টাকা। পেঁয়াজ বীজ ২৫ হাজার টাকা, সার ৩ হাজার টাকা, কীটনাশক ২ হাজার টাকা এবং জমি প্রস্তুত করা থেকে ফলন ওঠা পর্যন্ত শ্রমিক খরচ ৯ হাজার টাকা। আর জমি লিজ নিয়ে আবাদ করলে খরচ আরো ২০ হাজার টাকা বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ৬০ হাজার টাকায়।
কৃষকেরা আরো জানান, এ বছর এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের ফলন পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৫০ মণ। গত বুধবার প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮’শ টাকা দরে। সেই হিসাবে ৫০ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করলে দাম পাওয়া যাবে ৪০ হাজার টাকা। এর মধ্যে রয়েছে যাতায়াত খরচ। এতে করে ফল ভাল হলেও লাভের মুখ দেখতে পারছে না। তবে মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ১৩’শ টাকা করে। যাঁরা নিজেদের জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন সে সময় তারা বিক্রি করে কিছুটা লাভের মুখ দেখেছে। কিন্তু যারা লিজ নিয়ে আবাদ করেছিল তাঁদের উৎপাদন খরচ কোনোমতে উঠলেও লাভের মুখ দেখতে পারেনি।
পাবনার সুজানগর উপজেলার পেঁয়াজ চাষী মানিক প্রামাণিক বলেন, এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে ‘মুড়িকাটা’ পেঁয়াজ লাগিয়েছিলেন। ফলন ভালো হয়েছে, ৫০ মণ পেঁয়াজ পাওয়ার আশা করছেন তিনি। কিন্তু এরপরও তাঁর কপালে চিন্তার ভাঁজ। ৮’শ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করলে উৎপাদনের খরচই উঠবে না। তার পরে রয়েছে লিজের টাকা।
কথা হয় অপর পোঁয়াজ চাষী আশরাফ আলীর সাথে, তিনি বলেন, চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছিলেন। খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। হয়তো পৌনে ২’শ মণ পিঁয়াজ পাব। হাটে দাম কম। এত কম দামে পিঁয়াজ বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে। চিন্তুা করছি আগামী বছর আর পেঁয়াজ আবাদ করবো না।
কৃষকেরা আরো বলেন, হাটে সরবরাহ বেশি হওয়ায় পাইকার বা ব্যাপারীরা এই সুযোগে ইচ্ছামতো দাম কম দিয়ে কেনেন। তাঁরা ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বিক্রি করে ঠিকই লাভবান হন। কিন্তু লোকসান গুনতে হয় আমাদের।
এ বিষয়ে পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ বলেন, কন্দ পেঁয়াজ যেটাকে আঞ্চলিক ভাষায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ বলা হয়। এই জাতের পেঁয়াজ পচনশীল। বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না। এটা অল্পদিন বাজারে থাকে। জমি থেকে তোলার পরই বিক্রি করতে হয়। এ কারণে চাষিরা একসঙ্গে হাটে নিয়ে গেলে সরবরাহ বেড়ে যায়। আর সরবরাহ বেশি হওয়ার কারণে দামও কমে যায়।