পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ৫৮ শহীদ পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘােষিত স্থায়ী পুনর্বাসন সুবিধার আওতায় ৫৭ শহীদ পরিবারকে প্লট বুঝিয়ে দেয়া হয়। তবে শহীদ কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের পরিবারকে এখনাে প্লট বরাদ্দ করা হয়নি।
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় শহীদ বিডিআরের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের পরিবারকে স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য প্লট বরাদ্দ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে ওইদিন রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দিন দোলন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এমএমজি সারওয়ার পায়েল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিসেস ঈশিতা পারভীন।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান।
সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর রমিজ ইউনিয়নের চর লক্ষ্মীগ্রামে।
সরকারের নিকট প্লট বরাদ্দ চেয়ে গত ১৬ মে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন মরহুম মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান, কন্যা জান্নাতুল ফেরদৌস, রহিমা খাতুন ও নাসরিন আক্তার। ওই রিটের শুনানি নিয়ে চার সপ্তাহের রুল জারি করেন আদালত।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের সময় সশস্ত্র জওয়ানদের নৃশংসতায় সেনাবাহিনীর ৫৭ কর্মকর্তা আর বিডিআরের একজন কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন সশস্ত্রবাহিনীর সৈনিক নির্মমভাবে শহীদ হন। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুবেদার মেজর মােঃ নুরুল ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের মর্যাদা প্রদান করে পরিপত্র জারি করে। তার উত্তরাধিকারীগণ বিধি মােতাবেক শহীদের জন্য প্রাপ্য সুবিধাদি পাবেন উল্লেখ করে একটি পরিপত্র জারি করে।
আশরাফুল আলম হান্নান জানান, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ৫৮ শহীদ পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘােষিত স্থায়ী পুনর্বাসন সুবিধার আওতায় ৫৭ শহীদ পরিবারকে প্লট বুঝিয়ে দেয়া হয়। তবে শহীদ কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের পরিবারকে এখনাে প্লট বরাদ্দ করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে অনবরত চেষ্টা করেও বিগত ১২ বছরে এর কোন ফল না পাওয়ায় তার পরিবারের সদস্যরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশনটি দায়ের করেন।
হান্নান আরো জানান, পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহী জওয়ানদের ভয়ে সবাই যখন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিলেন, তখন মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম সশস্ত্র জওয়ানদেরকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হন। অন্যান্যদের সাথে তার লাশও গণকবরে নিক্ষেপ করা হয়।
এদিকে জানা গেছে, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় বিশেষ আদালত ১৫২ জনকে ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। আর নিহত সেনাবাহিনীর ৫৭ কর্মকর্তা এবং একমাত্র বিডিআর কর্মকর্তা সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামসহ ৭৪ জনকে প্রদান করা হয় রাষ্ট্রীয় শহীদ মর্যাদা।
পিলখানা ট্র্যাজেডিতে শহীদ বিডিআর কর্মকর্তা তৎকালীন কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস-বিডিআরে যোগ দেন।