ঢাকা, রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪শে ভাদ্র ১৪৩১

প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের শিল্পীরা

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল | প্রকাশের সময় : বুধবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৩:৩৪:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা। আর এই উৎসবকে ঘিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের শিল্পীরা। আগামী (১ অক্টোবর) থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। 

টাঙ্গাইল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এ বছর টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় এক হাজার ২৮৪টি পূজামণ্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। জেলার সদর উপজেলার পূজামণ্ডপে ২০৭টি, বাসাইলে ৬৫টি, সখিপুরে ৫৩টি, মির্জাপুরে ২৫৬টি, নাগরপুরে ১৩২টি, দেলদুয়ারে ১২৭টি, গোপালপুরে ৫০টি, ভূঞাপুরে ৪০টি, কালিহাতীতে ১৯০টি, ঘাটাইলে ৮১টি, মধুপুরে ৫০টি ও ধনবাড়ীতে ৩৩টি পূজামণ্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ১২৪৩টি ও চলতি বছর ১২৮৪টি। গত বছরের তুলায় ৪১টি পূজামণ্ডপের সখ্যা বেড়েছে।   

জেলার তারটিয়া প্রতিমা তৈরির কারখানাসহ বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে দেখা গেছে, তারটিয়া কারখানায় শিল্পীরা প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। কেউ দেবীর গায়ে দিচ্ছেন তুলির আঁচড় আবার কেউ ব্যস্ত প্রতিমার গায়ে কাঁদা মাটির প্রলেপ লাগাতে।

তারটিয়া এলাকার প্রতিমা তৈরির কারিগর সন্তোষ পাল বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। এবার আমি ১০টি প্রতিমা তৈরি করেছি। আমার কারখানায় দুই-তিনজন কর্মচারীসহ পরিবারের লোকজন নিয়ে প্রতিমা বানাচ্ছি। বর্তমানে খড়, বাঁশ, মাটি, লোহাসহ সব কিছুর দাম আগের তুলানায় অনেক বেশি। সব কিছুর দাম বাড়ার কারণে আমাদের এখন পোষে না। জাতিগত কাজ এজন্য করতে হয়। 

তারটিয়া এলাকার সন্ধ্যা পাল বলেন, আমি পরিবারের কাজ কর্ম করে যে সময় টুকু থাকে আমার স্বামীর সাথে প্রতিমা তৈরি কাজে সাহায্য করি। সামনে ৩০ সেপ্টেম্বর পঞ্চমী। পঞ্চমীর রাতের আগেই আমাদের প্রতিমার সব কাজ শেষ করতে হবে। এজন্য আমরা এখন খুব ব্যস্ত সময় পার করছি। 

নিখিল পাল বলেন, এ বছর ১০টি প্রতিমা তৈরি করেছি। এখন রঙ তুলির কাজ চলছে। মাটির কাজ সব শেষ করছি। এ পর্যন্ত চারটি রঙ করছি। ছয়টি প্রতিমা বাকি আছে রঙ করার জন্য। আমরা রাত দিন জেগে কাজ করছি। কাজ করতে গিয়ে আমাদের অন্য কোনো দিকে নজর দেওয়ার সুযোগ নেই। খাওয়া দাওয়ারও কোনো ঠিক নাই।

প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি প্রতিমা তৈরি করতে শিল্পীদের সর্বনিন্ম ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। সর্বোচ্চ তিন-চার লাখ টাকা খরচ হচ্ছে এ বছর। প্রতিমা তৈরির জন্য তাদের ৩ থেকে ৪ ভ্যান মাটি লাগে। খড়ের আউর লাগে ৫ থেকে ৬ পৌন। এছাড়াও কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা ও ধানের গুড়াসহ বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে প্রতি ভ্যান মাটিতে তাদের খরচ হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, প্রতি পৌন আউরে খরচ হয় পাঁচশ’ টাকা থেকে ছয়শ’ টাকা। আর বাকি জিনিসগুলোর জন্য খরচ হয় ৪ থেক ৫ হাজার টাকার মতো। আগের থেকে সব কিছুর জিনিসপত্রের দাম বেশি। একটি প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। প্রতিমা তৈরিতে চার থেকে পাঁচজন শিল্পী একসঙ্গে কাজ করেন। একেকজন শিল্পী প্রতিমার এক এক কাজে হাত দেন বলেও জানান প্রতিমা শিল্পীরা।

টাঙ্গাইল পূর্ব আদালত পাড়ার বড় কালিবাড়ী গিয়ে দেখা যায়, শিল্পী নিশি কান্ত পাল প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বলেন, এটা ছাড়াও আরও পাঁচটি প্রতিমা রঙ করার বাকি আছে। সাত-আট দিনের মধ্যে এগুলোর কাজও শেষ হবে।  

টাঙ্গাইল পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার গুন ঝন্টু জানান, এ বছর জেলার ১২টি উপজেলায় মোট ১২৮৪টি পূজামণ্ডপে পূজা হবে। এ জন্য মন্দিরে বিভিন্ন কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বিভিন্ন দাবি করেছি। প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। 

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে আনসার সদস্যরা ডিউটিতে থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে পুলিশ থাকবে। 

তিনি আরও বলেন, জেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপে নামাজের সময় সূচি টাঙানো জন্য বলা হয়েছে। পূজা কমিটিকে মণ্ডপগুলো পূজা চলাকালীন সময় সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে বলা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের মোবাইল টিম কাজ করবে।