বগুড়া প্রতিনিধিঃ উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৬টায় বিপদ সীমার ৯সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা এলাকায় যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে নিমিশের মধ্যেই ৮০টি বসতবাড়ীর জায়গা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বেশ কিছু ঘরবাড়ী, আসবাবপত্র ও বিভিন্ন মালামাল নদীতে ভেসে গেছে। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনের মধ্যে এক ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে মাইকিং করে লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যেতে বলা হচ্ছে। ভেসে যাওয়া ঘরবাড়ী ও মালামাল উদ্ধার করা হচ্ছে ।
অপর দিকে বুধবার রাতে নদী ভাঙ্গন উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া ২নং স্পারের গোড়ায় ৩০ মিটার ধসে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদারের মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করে। এলাকার লোকজনও স্বেচ্ছাশ্রমে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজে সহায়াতা করে রাতে স্পারটি রক্ষা করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের জানান, হাসনাপাড়া স্পারটি ঝুকি মুক্ত আছে। ইছামারায় ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন রোধে কাজ করা হচ্ছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান, জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম, সারিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম মন্টু মন্ডল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সবুজ কুমার বসাক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়া সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি সকালেই বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। পানি বাড়ার সঙ্গে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনার তীব্র স্রোতে নদীতীর সংরক্ষন বাঁধ ও নদী ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রনে নির্মিত স্পারের বেশ কিছু অংশ ধসে গেছে। নদীর পানি বৃদ্ধি ও ভাঙ্গনের কারণে নদী তীরবর্তী এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অপরদিকে পানি বাড়ার কারণে বেশ কিছু এলাকার নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা বন্যাসহ ভাঙ্গনের কারণে সৃষ্ট যে কোন অবস্থা মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহন করেছেন। ইতোমধ্যে নদীতীর সংলগ্ন এলাকার লোকজনকে প্রয়োজনবোধে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য মাইকে প্রচার করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) আরো জানায়, বুধবার রাতে উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া স্পারে আকস্মিক ধস নামে। স্পারের কংক্রীট ও মাটির শ্যাংকের মাঝে এই ধস নামে। পাউবো জানায়, নদীর তীব্র ঘুর্ণী স্রোত সেখানে আঘাত হানায় ধসের সৃস্টি হয়। এতে হাসনাপাড়া স্পার-২ এর প্রায় ৩০ মিটার জায়াগার একাংশ ধসে গিয়ে এটি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে। খবর পেয়ে রাতেই প্রশাসনিক ও পাউবোর কর্মকর্তারা সেখানে যান। স্পার রক্ষায় জিওটেক্স’র বস্তা ফেলা শুরু হয়। পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী বুধবার দুপুরে জানান তারা সেখানে অবস্থান করছেন। এ পর্যন্ত ধসে পড়া অংশের মধ্যে ১০ মিটার বেশি খারাপ অবস্থায় ছিলো। তারা সেখানে জিওটেক্সের বালু ভর্তি বস্তা ফেলে ধস বন্ধ করেছেন। এখন সেটি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। পাউবো আরো জানায়, হাসনাপাড়া ছাড়াও কামালপুর ইউনিয়নে নদী তীর সংরক্ষন(ডান তীর) বাঁধে ধস নেমেছে। সেখানে প্রায় ৪শ’ মিটার ধসে গেছে। ধস ঠেকাতে জিএটেক্সের বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে বলে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল হক জানিয়েছেন। স্থানীয় লোকজন জানান, কামালপুরের ইছামারা, দক্ষিন ফকির পাড়া ও কামালপুর গ্রামে এই ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। বেশ কিছু বাড়ি ঘর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) সবুজ কুমার বসাক জানিয়েছেন, ভাঙ্গন ও যমুনার পানি বৃদ্ধির কারনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদী তীরবর্তী এলাকা গুলোতে সর্তকতা মুলক মাইকিং করা হয়েছে। তিনি জানান, নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কিছু নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে। এছাড়া ভাঙ্গনের কারনে প্রায় ১০০ট পরিবার তাদের বাড়ি ঘর ইতোমধ্যে সরিয়ে নিয়েছেন।
এদিকে গত কয়েক দিন ধরে সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় পানি বেড়ে বিপদ সীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।