দীর্ঘ ৩ বছর পূর্বে বিতর্কী (ছদ্মনাম)’র এক গৃহবধূকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে সোনাতলা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রী সুজন চন্দ্র ঘোষ। এর পর থেকে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেই চলছিল সে। সুজন সোনাতলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের নামাজখালী গ্রামের শ্রী সুভাশ চন্দ্রের ছেলে, তার মা সন্ধ্যারানী ঘোষ বর্তমানে সদর ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের সদস্য। ধর্ষীতা ঐ নারী একই এলাকার পাশের বাড়ির মুসলীম সম্প্রদায়ের এক গৃহবধূ।
বিতর্কী (ছদ্মনাম)’র ঐ নারী ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, গত ৩ বছর পূর্বে একই এলাকার অন্য এক নারীর কাছে সেলাইয়ের কাজ শিখতেন, একদিন দুপুরে কাজ শিখতে গেলে ঘরের দরজা ভেতর থেকে আটকানো দেখেন। ডাকা-ডাকি করলে কোন সাড়া না পেয়ে দরজা ধাক্কা দিলেই দেখেন সুজন ও ঐ নারী অন্তরঙ্গ অবস্থায় আছে। বিষয়টি দেখে ফেললে ঐ নারী ও সুজন আমাকে ঘটনাটি বলতে নিষেধ করে। কথা বলার এক পর্যায়ে ঐ নারী আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে দিয়ে বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে দিলে সুজন আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষন করে। এসময় সুজন ও ঐ নারী আমাকে বলে এই ঘটনা কাউকে বললে তোর স্বামী ও সন্তানকে মেরে ফেলবো। এর পর থেকে দু-চারদিন পর-পর বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে দীর্ঘ এই তিন বছর ধর্ষন করেই চলে সে। কোন সময় অমত পোষন করলে আমার ননদকে ধর্ষন করবে বলে ভয় দেখায়। এক পর্যায়ে আমি অতিষ্ট হয়ে বিষয়টি আমার স্বামীকে জানাই এবং তার সম্মতীতেই মামলা দায়ের করি।
৯ জুলাই সোনাতলা থানায় সুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলা দায়ের হয়। এঘটনার পর থেকে সে পলাতক রয়েছে। তবে সুজনের সাথে যোগাযোগ না হলেও তার পরিবার ও দলীয় নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন বালু উত্তোলন ও টাকা পয়সা লেনদেনের ঘটনায় এটি একটি সাজানো নাটক।
এলাকায় ঘুরে ও নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ সম্পাদক সুজন ও সোনাতলা সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আকাশ বালু উত্তোলন ও বিক্রয় করতো। এক পর্যায়ে তারা একটি ট্রাকটর কেনেন ট্রাকটরটি কেনার সময় বেশিরভাগ টাকা ইনভেষ্ট ছিল সুজনের। এছাড়া বালু উত্তোলন ও বিক্রয়ের বেশকিছু টাকার লেনদেন ছিলো তাদের মধ্যে। এই বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে দা-কুড়াল সম্পর্ক হয়ে যায়। সুযোগ ও দুর্বল জায়গা খুজতে থাকে আকাশ এক পর্যায়ে ধর্ষনের স্বীকার ঐ নারীর স্বামীর সাথে কথা বলে এবং তার স্ত্রীর সাথে ঘটে যাওয়া বিষয়টি স্ত্রীকে বলতে বলে যা মোবাইলে ভিডিও ধারন করে ঐ ভিডিওতে তার ১০ বছর বয়সী ছেলের কথাও রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর ভিডিওটি সোনাতলার বিভিন্ন দলীয় নেতা ও কিছু সাংবাদিকদের দেখায় এবং এটির একটি ব্যবস্থা নিতে বলে আকাশ। কিন্তু নারী ঘটিত বিষয়ে কোন মামলা না হওয়ার কারণে এটি নিয়ে কেউ এগিয়ে যায়না। সবাই বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে বলে। এক পর্যায়ে “সোনাতলায় যা যা দেখেছি” নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে ভিডিওটি আপলোড করে। এরপর একদিনেই বিষয়টি ভাইরায় হয়ে যায়। তার পরে পুলিশের তৎপরতায় ধর্ষীতা ঐ নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। অবশেষে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সুজনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
উল্লেখ্য বিষয়টি নিয়ে অনেকেই বলছেন যে নারী প্রথমে ধর্ষনের সহায়তা করেছিল অজ্ঞাতনামা ঐ নারীকে এই মামলায় আসামী করা হলোনা কেনো?
অপরদিকে নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কেন্দ্র ছাত্রলীগের সিদ্ধান্তে সোনাতলা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুজনকে বহিস্কার সেই সাথে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় সোনাতলা উপজেলা শাখা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়।
এ বিষয়ে সোনাতলা উপজেলা ছাত্র লীগের সভাপতি মাহমুদুল হাসান রতন বলেন, সুজন ও আকাশ এর মধ্যে টাকা লেনদেনের বিষয় আছে এছাড়া ঐ নারীর স্বামীর কাছে থেকেও টাকা পায় সুজন। এসব নানা ঘটনার কারণ এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক বলেন, সুজন যদি অপরাধী হয় তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তিনি আরো বলেন সোনাতলা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।
এ বিষয়ে সোনাতলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জালাল উদ্দীন বলেন সুজন চন্দ্র ঘোষ এর বিরুদ্ধে একটি ধর্ষন মামলা দায়ের হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে পুলিশের একধীক টিম মাঠে কাজ করছে।