ঢাকা, শনিবার ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৮ই মাঘ ১৪৩১

বাউফলে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

উত্তম কুমার, বাউফল | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৫ জানুয়ারী ২০২৫ ০৩:০২:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

পটুয়াখালীর বাউফলে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্তা  মো. সরফরাজ হোসেনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, গ্রাহক হয়রানি, অধিনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অসদাচরণ সহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। 

তার অনিয়ম দুর্নীতির বিভাগীয় তদন্ত ও বদলী দাবি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী। 

অভিযোগ আমলে নিয়ে তাকে বদলি করা হলেও অদৃশ্য ক্ষমতা বলে তা বদলি আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। 

অভিযোগ ও অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে  উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করে সরফরাজ। তার বাড়ি উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের শৌলা গ্রামে। তারা পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোসারেফ হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক ছিল। দলীয় ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে বেপরোয়া হয়ে উঠেন এ কর্মকর্তা। সমিতির গ্রাহকের মারধর, নিয়মিত সদস্য হওয়ার পরে লোন ও সঞ্চয় আটকে রেখে হয়রানি, অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীর সাথে অসদাচণ করেন  তিনি। 

তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ৫ এপ্রিল মো. আছাদুল হক নামে এক সদস্য ও একই বছরের ২ ডিসেম্বর  উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আপেল  মাহমুদ ফিরোজ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে ৫ জানুয়ারি তাকে দশমিনা উপজেলায় বদলির আদেশ দেন সিনিয়র প্রিন্সপাল অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম। ১২ জানুয়ারি দশমিনায় যোগদান করার কথা থাকলেও ১১ জানুয়ারি যোগদানের সময় ৪ মাস বৃদ্ধি করিয়ে নেন প্রভাবশালী এ কর্মকর্তা। 

রামনগর গ্রামের বাসিন্দা মো. আছাদুল হক বলেন, আমি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের নিয়মিত সদস্য। দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যাংকে লেনদেন করে আসছি। বর্তমান শাখা ব্যাবস্থাপক সরফরাজের অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারে আমরা সদস্যরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। তিনি আমাদের পাশবই আটকে রাখেন, নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করার পরেও ঋণ পাশ করেন না এবং অনেকে জমাকৃত সঞ্চয় আটকে রেখে হয়রানি করে থাকেন।  

শৌলা গ্রামের বাসিন্দা মো. মাহবুব গাজী জানান, তিনি ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণ নেওয়ার পরে মাঠ কর্মী নিয়মিত কিস্তি নিতে না আসায়  কয়েকটি কিস্তি বাদ পড়ে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা তাকে অফিসে তুলে নিয়ে হেনস্থা করেন।

রিজিয়া নামে আরেক সদস্য বলেন, তার প্রায় ৭ হাজার সঞ্চয় টাকা জমা রয়েছে। সঞ্চয়ের টাকা তুলতে একাধিক বার অফিসে গেলেও কর্মকর্তা তার টাকা উত্তোলন পাশ করেনি।

পৌর শহরের ব্যাটারি ব্যবসায়ী মো. সিদ্দিক কাজী, আমি আগেও লোন নিয়েছি। এখন আবারও লোন আনতে গেলে কর্মকর্তা আমাকে লোন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। নিয়মিত লোন পরিশোধ করার পরেও তিনি আমাকে লোন দেয়নি। 

এছাড়াও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার প্রভাব ঘাটিয়ে তার বাবা শাহজাহান হাওলাদারের নামে দুস্থ কৃষকের নামে বরাদ্দ হওয়া বিনামূল্যে সার, বীজ ও কিটনাশকসহ কৃষি উপকরণ নিয়েছেন এ কর্মকর্তা। 

এসব অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্তা মো. সরফরাজ হোসেন বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট। যারা লোন নিয়ে পরিশোধ করেন না, তারা আমার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা (আঞ্চলিক) কর্মকর্তা প্রদিপ কুমার বলেন, অভিযোগের সুনিদিষ্ট প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে