বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫৪৩ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয়েছিল ২০ লাখ ৩ হাজার ৬৭০ মেট্রিক টন। আর গেল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ২১ হাজার ৪৪১ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় গেল বছরে পণ্য আমদানি কমেছে ২ লাখ ৮২ হাজার ২২৯ মেট্রিক টন।
কাস্টম কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে খাদ্যপণ্য ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে ব্যাংক এলসি খুলছে না। এতে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারেননি।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছিল ২৬ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন পণ্য। আমদানি কম হয়েছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। ওই বছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে ৫৫৮ কোটি টাকা ৮ লাখ টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছিল। অর্থবছরটিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। সেখানে আদায় করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছর ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
২০১৯-২১ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয়েছিল ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয় ২০ লাখ ১১ হাজার ৬ মেট্রিক টন।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বেনাপোল দিয়ে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে সরকার এলসিতে শতভাগ মার্জিন শর্ত দেয়া হয়েছে। আবার ব্যাংকগুলো ডলার সংকট দেখিয়ে এলসি খুলছে না। যেকারণে গেল অর্থবছরে আমদানি কমে গেছে।
আরেক আমদানিকরাক কামাল হোসেন বলেন, আমরা মোটর পার্টস আমদানি করে সারা দেশে বিক্রি করি। গত কয়েক বছর ধরে যশোরের ব্যাংক এলসি খুলছে না। যেকারণে আমরা পণ্য আমদানি করতে পারছি না। পণ্য আনতে না পারার কারণে লোকসান হচ্ছে। সামনে কি পরিস্থিতি হবে কে জানে।
যশোরের মোটরসাইকেল পার্টসের অন্যতম বৃহৎ আমদানিকারক মদিনা অটোসের মালিক ফারুক হোসেন বলেন, ডলার চাহিদা মতো না পাবার কারণে আমরা এলসি কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। আবার বাজারেও বিক্রি কমেছে। সম্প্রতি ব্যাংকগুলো সুদহার অনেক বাড়িয়েছে। এতে আমদানিকারকরা ঋণ নিয়ে ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারছে না। যেকারণে অনেক ব্যবসায়ী পণ্য আমদানি করছে না।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট এক্সপোর্ট কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, এলসি করতে না পারায় ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। যেকারণে পণ্য আমদানি কমেছে। তবে আশা করছি চলতি বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আমদানিকারক জানান, কতিপয় কাস্টমস কর্মকর্তার নানা হয়রানি আর বন্দর ব্যবস্থাপনায় অনিয়মনের কারণে অনেক ব্যবসায়ী বেনাপোল ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে গেছেন। কাস্টমকে টাকা দিতে হয় বাধ্যতামূলক। তা না হলে বিভিন্ন অজুহাতে আমদানিকারকদের হয়রানির শিকার হতে হয়। আবার শুক্রবার ও শনিবার কাস্টমের কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়না। বৃহস্পতিবার তারা ঢাকায় চলে যান। রোববার বিমানে এসে অফিস করেন। তাদের অনুপস্থিতির কারণেও ব্যবসায়ীদের ঘুরতে হয়।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, সরকার এলসি করতে শতভাগ মার্জিন দেবার নিয়ম করেছে। গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছেনা। এতে আমদানির সাথে জড়িত হাজার হাজার ব্যবসায়ী অর্থনৈতিকভাবে দুরবস্থায় রয়েছেন। এখন আমদানিকারকরা চরম বেকায়দায়। একদিনে বাণিজ্য ভালো নেই, তার ওপর পণ্য আমদানি করতে না পারলে আমদানির সাথে জড়িতরা আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের যুগ্ম কমিশনার সাফায়েত হোসেন বলেন, ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে এলসি খুলতে পারছেন না। যেকারণে গেল বছর পণ্য আমদানি কমে গেছে। আমাদের এখানে কোন হয়রানি করা হয় না।
আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক খুলনা-বরিশাল জোন প্রধান আবদুল মান্নাফ জানান, উচ্চ মার্জিনের কারণে সব ব্যাংকে এলসি কমেছে। ডলার সংকট কেটে গেলে আমদানি সহজ হয়ে আসবে।
ইস্টার্ণ ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক আবদুল হক জানান, ডলার সংকটে বেশিরভাগ ব্যাংক এলসি কমিয়ে দিয়েছে। এলসি করতে না পারলে পণ্য আমদানি কীভাবে করবে।