বাঙালির প্রাণের অন্যতম উৎসব নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ। আর মাত্র এক দিন পরেই পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখের তোর জোর শুরু হয়ে গেছে মৃৎশিল্পীদের মধ্যে। মৃৎশিল্পীদের দম ফেলার ফুসরত নেই। হরেক রকমের মাটির বিভিন্ন রকম খেলনা পুরানো শেষ করে এখন ব্যস্ত হয়ে পরেছেন শেষ মুহূর্তের রঙের আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলতে। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে মৃৎশিল্পীদের কয়েকগুণ কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। বৈশাখকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের মৃৎশিল্পীরা রং তুলিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সারা বছর তেমন আয় না হলেও বৈশাখী মেলায় মাটির তৈজসপত্র বিক্রি করে আয়ের মুখ দেখেন মৃৎশিল্পীরা। মৃৎশিল্পীদের ঐতিহ্য যে একে বারে ফুরিয়ে যায়নি তা চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত থাকতে বুঝা যায়। এই মাসে মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করেন। বিভিন্ন তৈজসপত্র ও শিশুদের খেলনা তৈরি করেন। মৃৎশিল্পীদের হাতের কারুকাজ তৈজসপত্র গ্রামীণ মেলাতে মুগ্ধতা ছড়ায়। যা ছোট বড় সব বয়সীদেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকে শুরু করে মধ্যে রাত পর্যন্ত চলছে তাদের এ ব্যস্ততা। নারী-পুরুষ সকলে মিলে বিভিন্ন রকমের শিশুদের খেলনা রং করেছেন। হাড়ি-পাতিল, সানকি, কলসি, ফুলের টপ থেকে শুরু করে শিশুদের খেলনা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ময়ূরপাখি, নৌকা,পাতিল,জগ,কলসি,চুলা বিভিন্ন খেলনা রং করতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা।
মৃৎশিল্পী গোবিন্দ পাল বলেন, প্লাস্টিকের জন্য মাটির খেলনা আগের মতো বিক্রি হয় না। কিন্তু পহেলা বৈশাখের গ্রামীণ মেলাতে মাটির বিভিন্ন তৈজসপত্র ও ছোটদের খেলনার কদর বেশি। বেঁচাকেনা ভালো হয়। চৈত্র মাসের পুরো সময়টাতে কুমার পাড়ায় ব্যস্ত থাকে। একদিন পর পহেলা বৈশাখ। ছোটদের খেলনা রং করছি এই খেলনা গ্রামীণ মেলাতে বিক্রি করবো। বৈশাখকে কেন্দ্র করে ৬০-৭০ টি খেলনা বানিয়েছি। আজকের মধ্যে রংয়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
মৃৎশিল্পী ভেলা রানী পাল বলেন, চৈত্র মাসের শুরু থেকে ১০ রকমের খেলনা তৈরি করেছি। পুতুল হাড়ি, পাতিল, চুলা, পাটা, পাখি, ঘোড়া বিভিন্ন মাটির তৈরি তৈজসপত্র ও খেলনা পুরানো শেষ করে এখন রং করছি। আমি আর আমার স্বামী মিলেই খেলনা তৈরি করেছি। ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত খেলনা রং করার কাজ করতে হচ্ছে। প্লাস্টিকের জিনিস বের হওয়াতে মাটির জিনিসের কদর কমে গেছে। শুধু বৈশাখে গ্রামীণ মেলায় মাটির জিনিসের কদর থাকে। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ৬০০ খেলনা তৈরি করেছি। ছোটদের খেলনা রং করতে ব্যস্ত হয়ে পরেছি। প্রত্যেকটি ৫ থেকে ২৫ টাকা দরে ছোটদের খেলনা বিক্রি করা হবে।
মৃৎশিল্পী যুগল পাল বলেন, আগের মতো মাটির জিনিস আর বিক্রি হয় না। প্লাস্টিকের জিনিস বের হয়েছে তাই মাটির জিনিস চলে না। আগে মাটির জিনিসের তৈজসপত্রের ভালোই চলতো, ভালো দাম পেতাম। এখন আর আগের মতো দাম পাই না। বৈশাখ মাসে গ্রামীণ মেলায় মাটির জিনিসের কদর থাকে, ভালোই বিক্রি করা যায়। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ছোটদের খেলনা তৈরি করেছি। সেই খেলনা পুরানো শেষ করে রং তুলিতে ফুটিয়ে তুলছি। চৈত্র মাসে কুমাররা ব্যস্ত সময় করে। সারা বছরের কাজ এই মাসে করে থাকি। বৈশাখী গ্রামীণ মেলার জন্য টিয়া, ময়ূরপাখি, হাতি, ঘোড়া পুরানো শেষ করে রং করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছি। ৮০-৯০ টি ছোটদের খেলনা তৈরি করেছি। প্রত্যেকটি খেলনা ২৫-৩০ টাকা দরে গ্রামীণ বৈশাখী মেলায় বিক্রি করবো। গ্রামীণ মেলা গুলোতে মাটির খেলনার কদর ভালোই থাকে। তাই বেঁচাকেনাও ভালো হয়।