ঢাকা, রবিবার ৫ মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

ব্যালটের পরিবর্তে ইভিএম: আসনপ্রতি ব্যয় কোটি টাকার বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক: | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ০১:৩১:০০ অপরাহ্ন | এক্সক্লুসিভ

 

 

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে প্রতিটি আসনে কোটি টাকার বেশি সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে। একটি আসনে (১৫০টি কেন্দ্র হিসাবে) ইভিএমে নির্বাচন করতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ১৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। সেখানে কাগজের ব্যালটে ভোটগ্রহণে আসনপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ১৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে ইভিএম ব্যবহারের আসনে এক কোটি ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে।

 

এদিকে আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পথে থাকা ইভিএম মেরামতের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২৬১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এভাবে হিসাব ধরে আগামী অর্থ বছরের জন্য সরকারের ৪ হাজার ৪৮৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে ইসি। এর মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সার্বিক নির্বাচনি বরাদ্দ চেয়েছে দুই হাজার ৩৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় এ পরিমাণ বাজেটে আপত্তি জানিয়ে যৌক্তিক চাহিদা দিতে বলেছে।

 

 

এ অবস্থায় ইভিএম খাতের যৌক্তিক চাহিদা তৈরি করতে আজ মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিটিএমএফ) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইসি। ইসি সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে।

 

 

সুনির্দিষ্ট তথ্য চায় অর্থ মন্ত্রণালয়

 

সস্প্রতি সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক চিঠিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) মেরামত ও আনুষাঙ্গিক খাতে বাড়তি এক হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এর বাইরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করে ভোটগ্রহণের হিসাব ধরে আরেক খাতে চাওয়া হয়েছে ২৫৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

 

সূত্র জানিয়েছে, ঢালাওভাবে বাজেট না চেয়ে প্রকৃত পক্ষে কতটি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে এবং কতটি ইভিএম মেরামতে কত টাকা লাগবে, তা সুনির্দিষ্ট জানাতে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই যৌক্তিকতা না দিতে পারায় আগামী অর্থবছরে ইসির বাজেট কত হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। এমন অবস্থায় কয়টি আসনে এ মেশিনে ভোটগ্রহণ করা হবে সেই সিদ্ধান্ত শিগগিরই নিতে যাচ্ছে ইসি।

 

খরচ যেভাবে চাওয়া হয়েছে

 

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইসি ও অর্থ মন্ত্রণালয় মধ্যকার বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা গেছে, আগামী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসন, ৪৫০টি উপজেলা পরিষদ, দুটি সিটি করপোরেশন, ২০টি পৌরসভা ও ১০০টি ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। একই অর্থবছরে জাতীয় সংসদের ১৫টি আসনের উপনির্বাচনও ধরা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যথাসম্ভব ইভিএম ব্যবহার করা হবে। এ কারণে নির্বাচনে ব্যয় বাড়তি ধরা হয়েছে।

 

প্রতিটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজনে গড়ে ৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা, উপজেলায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকা, পৌরসভায় ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা এবং ইউনিয়ন পরিষদে ১৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। সবমিলিয়ে শুধু নির্বাচন আয়োজনে ২ হাজার ৩৮৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ইভিএম মেরামতে জন্য এক হাজার ২৬১ কোটি ৬২ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। সিসি ক্যামেরার জন্য ৩০০ কোটি টাকা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। সার্বিকভাবে আগামী অর্থবছরে ইসি ৫ হাজার ৪৮৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জন্য আগামী অর্থবছরে এক হাজার ৬২৭ কোটি ৬ লাখ টাকার সিলিং অর্থ মন্ত্রণালয় বেঁধে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

 

বাড়তি ব্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগামী অর্থবছরে ইসি যে বাজেট চেয়েছে তা এখনও চূড়ান্ত নয়। কত আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে, কতটি ইভিএম মেরামত করা হবে– এ ধরনের অনেক বিষয়ের ওপর এ টাকার অঙ্ক নির্ভর করছে। নির্বাচন কমিশন কত আসনে এ মেশিন ব্যবহার করবে, সেই সিদ্ধান্ত দিলে তখন কত টাকা লাগবে তা নির্দিষ্টভাবে বলা যাবে।

 

ব্যয় দিগুণ বাড়ছে

 

নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ ধরা হচ্ছে। এর বড় কারণ হচ্ছে ওই নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এবার ইভিএম ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া ইভিএম মেরামতে বড় অংকের টাকা ধরা হয়েছে। এছাড়া গত পাঁচ বছরে জ্বালানি তেলের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর খোরাকী ভাতা বেড়েছে ৭০ শতাংশ।

 

মেরামত করতে হবে সব ইভিএম

 

এদিকে ইসি সূত্র জানায়, ইভিএম'র ক্রয় চুক্তিতে এ মেশিনের ওয়ারেন্টি ও আয়ুস্কাল ধরা হয়েছিল পাঁচ বছর। এ হিসেবে ২০১৮ সালে সংগ্রহকৃত দেড় লাখ ইভিএমের আয়ুষ্কাল এ বছরই শেষ হয়ে যাবে। অর্থাৎ আগামী নির্বাচনের আগেই এ মেশিনের আয়ূষ্কাল শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে প্রায় সবগুলোই মেরামত করার প্রয়োজন হবে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি। ওই মেরামতের জন্য এক হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা চেয়েছে বিএমটিএফ। এছাড়া সংরক্ষণবাবদ গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ভাড়া এসেছে ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সেই টাকাও পরিশোধ করেনি ইসি। বিএমটিএফ কর্তৃপক্ষ বারবারই ওই টাকা পরিশোধের জন্য বলে আসছে।

 

সূত্র আরও জানায়, প্রতিটি ইভিএম মেরামতে কত টাকা ব্যয় হবে তা নির্ধারণে মঙ্গলবার বিএমটিএফ'র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে ইসি। ওই বৈঠকে ব্যয়ের  বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনও কত আসনে এ মেশিন ব্যবহার করবে সেই সিদ্ধান্তের ওপরও নির্বাচনের ব্যয় কম-বেশি হবে।