যেদিন ঘোষিত হলো নিজ ইউনিয়নের নির্বাচনের তফসিল, সেদিনই সমাহিত হলেন চেয়ারম্যান প্রার্থী এরশাদুল হক ও তার সহযোগী বাদল সরকার। আগেরদিন রাতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন তারা। নারকীয় এই জোড়া খুনের ঘটনায় থানায় রজুকৃত মামলায় আসামী হলেন নিহত এরশাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১৫ জন। আকস্মিক এই কিলিং মিশন ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়ন এলাকাজুড়ে এখন বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা।
রোববার (১৯ ডিসেম্বর) নিহত এরশাদুল হকের ছোট ভাই আকতারুজ্জামান বাদী হয়ে ১৫ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জনকে আসামী করে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে খুন হন নাটঘর ইউনিয়নের নান্দুরা গ্রামের বাসিন্দা, নাটঘর ইউপি'র বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের পুত্র, আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী এরশাদুল হক (৩৮) ও তার সহযোগী কুড়িঘর গ্রামের সন্তোষ সরকারের পুত্র বাদল সরকারকে (২৭)। নিহত এরশাদুল হক নাটঘর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের অসুস্থতার কারণে পিতার বদলে এরশাদুল আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
চাঞ্চল্যকর জোড়া খুন ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানায় রজুকৃত হত্যা মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে নজরুল ইসলামকে। ঘটনার পর পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে একজনকে। এদিকে মামলার এজাহারভূক্তদের মধ্যে দু'জন চেয়ারম্যান প্রার্থীও রয়েছেন। এরা হলেন, সজীব চৌধুরী (শামীম আব্দুল্লাহ) ও রফিকুল ইসলাম রতন। এরা দু'জনেই নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। ঘটনার পর থেকেই তারা পলাতক রয়েছেন। অপরদিকে নিহত এরশাদুল হকও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
নাটঘর ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী এরশাদুল হক ও তার সহযোগী কুড়িঘর গ্রামের সন্তোষ সরকারের পুত্র বাদল সরকার খুন হওয়ার পর থেকে এলাকাজুড়েই বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। আকষ্মিক এই 'কিলিং মিশন' এলাকাবাসীর মাঝেও সৃষ্টি ব্যাপক আতঙ্কের। গোটা এলাকায় মানুষের চলাচল কমে যাওয়ার পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে নাটঘর বাজারের বেশীরভাগ দোকানপাট। আচমকা এলাকাজুড়ে কমে গেছে অন্যতম বাহন মোটরসাইকেলের চলাচল। অনেকটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন এলাকাবাসী। এছাড়া পরিকল্পিত জোড়া খুনের ঘটনায় ব্যাপক কৌতুহলও বিরাজ করছে সর্বত্র। কেন এই জোড়া খুন? এই কিলিং মিশনে কারা অংশ নেয়? তাদের কাছে এতো আগ্নেয়াস্ত্র এলো কোত্থেকে, যা দিয়ে বৃষ্টির মত গুলি ছুড়ে মুহূর্তেই কিলিং মিশন সম্পন্ন করা হয়?- এমনি নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
একাধিক সূত্র জানায়, সুপরিকল্পিত এই কিলিং মিশনে অন্তত ১৬/২০জন অংশ নেয়। ৬/৭টি মোটরসাইকেল ভাড়া করা কিলাররা নারকীয় হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়ে উল্লাস করতে করেত চলে যায়। স্থানীয় সূত্র জানায়, দু'টি কারণে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এর একটি হলো বিগত ২০১৯ সালের জুলাই মাসে গোষ্ঠীগত দ্বন্ধে হত্যা করা হয় এরশাদুলের চাচাতো ভাই সাইফ উল্লাহকে। এ ঘটনায় এরশাদুল বাদী হয়ে সে বছরের ২ এপ্রিল ২০ জনকে আসামী করে নবীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিভাগেন তদন্তাধীন। ওই মামলার পলাতক আসামীদের কয়েকজন সম্প্রতি এলাকায় এলে তাদেরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে এরশাদ ও তার লোকেরা। পূর্বের এই বিরোধের জেরে এরশাদুল ও তার সহযোগী বাদল খুনের শিকার হয়েছেন বলে ধারণা করছে নিহতের পরিবার। অপরদিকে স্থানীয়রা মনে করছেন, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণেও সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী এরশাদুল খুন হয়ে থাকতে পারেন। তাদের মতে, এরশাদুল অনেক জনপ্রিয় ও মিশুক হওয়ায় তার প্রতি জনগনের ব্যাপক সমর্থন ছিলো। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুন সম্পর্কে জানান, 'আসামীদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে। মাঠে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে।'
প্রসঙ্গত, ১৭ ডিসেম্বর শুক্রবার রাতে জেলার নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এরশাদুল হক ও তার সহকর্মীকে গুলি করে হত্যা করে দূর্বৃত্তরা। নির্বাচন, এলাকার আধিপত্য ও পূর্ব বিরোধের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ ও এলাকার সচেতন মহল।