ঘূর্ণিঝড় 'সিত্রাং'র প্রভাবে সীমান্তবর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ জয়নাল আবেদীন নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ফসলের আংশিক ক্ষতিসহ বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে গাছ পড়ে চলাচলে সৃষ্টি হয় বিঘ্নতার। বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে পড়ায় সোমবার রাত থেকে দীর্ঘ সময় অবধি বন্ধ থাকে বিদ্যুৎ সরবরাহ। এতে জনজীবন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সোমবার থেকেই বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করতে থাকে। রাতে ভয়ানক রূপ ধারণ করে সিত্রাং। বৃষ্টির সাথে ঝড়ো বাতাসের তীব্রতায় এক ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ফসলের আংশিক ক্ষতিসহ বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে গাছ পড়ে চলাচলে সৃষ্টি হয় বিঘ্নতা। সোমবার রাতে জেলার কসবা উপজেলার সীমান্তঘেঁষা ধজনগর গ্রামে ঘরের উপর গাছচাপায় ঘুমন্ত অবস্থায় মৃত্যু ঘটে জয়নাল আবেদীন ভুইয়া নামে একজনের। এসময় আহত হন তার স্ত্রী নিপা আক্তার। জেলার বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে পড়ায় সোমবার রাত থেকে দীর্ঘ সময় অবধি বন্ধ থাকে বিদ্যুৎ সরবরাহ। এতে জনজীবন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ। পরে মঙ্গলবার সকাল থেকে পুণরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।
ঘূর্ণিঝড় 'সিত্রাং'র কারণে জেলার চলতি আমন ধানসহ সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় চলতি মওসুমে ৯৪৯ হেক্টর জমিতে শীতকালিন বিভিন্ন সবজির আবাদ হয়েছিলো। 'সিত্রাং'র কারণে মাসকলাই, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ ৮৩ হেক্টর বিভিন্ন রকম শাকসবজির জমি আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়াও চলতি আমন মওসুমে ৫৪ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। 'সিত্রাং'র কারণে কোনো কোনো স্থানে জমির ধান গাছ কিছুটা হেলে পড়েছে। এতে আমন উৎপাদনে কোন বিরুপ প্রভাব পড়বে না বলে তারা মনে করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মুন্সী তোফায়েল হোসেন জানান, 'আমন ফসল ঘরে তুলতে আরো দুই সপ্তাহ সময়ে লাগবে। তবে যেসব জমির ধান ৮০ ভাগ পেকেছে সেসব ধান কর্তনের জন্য ব্লক সুপারভাইজারদের মাধ্যমে কৃষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হবে প্রণোদনা পাওয়া গেলে তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।'
এদিকে জেলার কসবায় ঝড়ের সময় ঘরের উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ে জয়নাল আবেদীন ভুইয়া নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা ধজনগর গ্রামে ঘটে এই মর্মান্তিকতা। সোমবার গভীররাতে ঘুমন্ত ছিলেন ধজনগর গ্রামের মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে জয়নাল আবেদীন ও তার স্ত্রী। আচমকা একটি গাছ ভেঙ্গে ঘরের উপর চাপা পড়ে। এতে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা জয়নাল আবেদীন ভুইয়া ঘটনাস্থলেই মারা যান। এসময় আহত হন তার স্ত্রী নিপা আক্তার। ঘটনার খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে কসবা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদুল কাউছার ভুইয়া জীবন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ উল আলম, পৌরমেয়র মোহাম্মদ গোলাম হাক্কানী, স্থানীয় গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান ভুইয়াসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন ।
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ উল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, 'সোমবার রাতে প্রচণ্ড ঝড়ের সময় ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা জয়নাল আবেদীন ভুইয়ার ঘরের উপর গাছ ভেঙ্গে পড়লে জয়নালের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার স্ত্রী আহত হয়েছে।