বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন যে, ভারত ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, যা দেশের স্বার্থের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) ঠাকুরগাঁওয়ের নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি বলেন, ভারতে বসেই কিছু শক্তি বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদে আবদ্ধ করতে চাইছে এবং আমাদের অর্জনকে ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি মনে করেন, এ ধরনের প্রচারণার বিষয়ে বাংলাদেশের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ফ্যাসিবাদ কায়েমের মাধ্যমে জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছে, যা দেশের জন্য একটি বড় বিপদ। মতাদর্শের পার্থক্য থাকতেই পারে, তবে জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, "আমরা সেই ঐক্য ধরে রাখার চেষ্টা করেছি এবং কিছুটা সফল হয়েছি, তবে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী আচরণ এই জাতীয় ঐক্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
মির্জা ফখরুল সামাজিক মাধ্যমের বর্তমান অবস্থা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "সামাজিক মাধ্যম যেমন ভালো কাজে ব্যবহার হতে পারে, তেমনই ভয়ংকর কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে এখন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানো হচ্ছে, যা আমাদের দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।" তার মতে, কিছু ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, "বাজারে চাল, আলু, সবজিসহ প্রায় সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে।" তিনি আরও জানান যে, তার বাসার একজন সহকর্মী চালের দাম ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকায় পৌঁছানোর কথা জানিয়েছেন, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে নষ্ট করে দিচ্ছে। সরকারের এই দিকটি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। জনগণ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা করছে, যেখানে তারা নিজেদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারবে। তিনি বলেন, "দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, তা করা উচিত।" তবে তিনি মনে করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিটি ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটাতে নির্বাচিত সরকার আসলেই প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করা উচিত বলে তিনি উল্লেখ করেন। ১৭ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার জট কাটাতে সময় লাগবে এবং জনগণকে এ জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্যের সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহ-সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর বিএনপির সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম শরিফসহ অন্যান্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বায়ান্ন/এএস