ঢাকা, রবিবার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ই আশ্বিন ১৪৩১

ভোলায় নিহত জেলে পরিবারে শোকের মাতম

ভোলা প্রতিনিধিঃ | প্রকাশের সময় : সোমবার ১১ এপ্রিল ২০২২ ০৮:০৯:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

মেঘনায় ৯ এপ্রিল রাতে জেলে-নৌ পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত ভোলার জেলে আমির হোসেনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কিছুতেই যেন কান্না থামছে না বাবা-মা ও স্ত্রীর। নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে এমন মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছে না তার পরিবারের সদস্যরা। সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে জেলে হত্যা বিচারের দাবী জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

২ মাসের জন্য মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। তবুও পেটের টানে উপার্জন করতে নদীতে গিয়েছিলেন ভোলার সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের চর মোহাম্মদ আলী গ্রামের জেলে আমির হোসেনসহ ১১ জন।

কিন্তু মাছ শিকারে গিয়ে তাকে ফিরতে হবে লাশ হয়ে তা কে জানতো। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়েছে আমিরের পরিবারটি। ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মা এবং প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে কান্না ভেঙ্গে পড়েছেন স্ত্রী সুরভী বেগম।

নিহত জেলের স্ত্রী সুরভী বেগম বলেন, ঘরে অভাব, তাই সে (আমির) বাধ্য হয়ে নদীতে গেছে। কিন্তু সে তো ফিরে এলোনা। এখন ছোট বাচ্চা এবং বৃদ্ধ শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে কে দেখবে? আমরাতো এতিম হয়ে গেলাম। আমার একমাত্র ছেলে তো প্রতিবন্ধি। আমাদের পরিবার চালাবে কে।

নিহত জেলে আমিরের মা ছকিনা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলের দোষ নাই, ওরা তাকে হত্যা করেছে, আমরা তার বিচার চাঁই। নিহতের ভাই জামাল রাঢ়িসহ জেলেদের পরিবারের অভিযোগ, যেসব জেলে ট্রলারের সাথে নৌপুলিশের সংঘর্ষে হয়েছে তারা পার পেয়ে গেলেও বিনা দোষে পুলিশ গুলি চালিয়েছে আমিরের জেলেদের।

জানা গেছে, ভোলা সদরের চর মোহাম্মদ আলী গ্রামের আমিরসহ একই এলাকার মনির, কামাল, সবুজ, সবুজ মাঝি, এমরান, মোঃ আলী, মোকতার ও সাইফুরসহ ১১ জেলে মনির চৌকিদারের ট্রলার নিয়ে মাঝ শিকারে গিয়েছিলেন। রাত ৯-১০টার দিকে টহলরত নৌপুলিশের সাথে জেলেদের সংঘর্ষ হয়। এতে এক জেলে নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন।

নিহত জেলে আমিরের বোন নার্গিস বেগম ও ভাই জামাল রাঢ়ি বলেন, নদীতে নৌপুলিশের সাথে তাদের ভাইদের কোন জামেলা হয়নি, জামেলা হয়েছে অন্য ট্রলারের সাথে। কিন্তু তারপরেও তাদের উপর গুলি চালিয়েছে নৌপুলিশ।

তবে নৌপুলিশ দাবী করছে,জেলেদের ইটপাটকেলের আঘাতেই জেলের মৃত্যু হয়েছে। মজু-চৌধুরীরহাট ঘাটের নৌপুলিশের ইনচার্জ মোঃ জামান বলেন, পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যায়নি, জেলেদের আঘাতে নৌপুলিশের ৬ সদস্য আহত হয়েছে। তারা হাসপাতালে ভর্তি। জেলেদের নিজের ইটের আঘাতে জেলের মৃত্যু হয়েছে।

ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুচিত কুমার হালদার বলেন, আগে ঘটনার সঠিক তদন্ত হবে। তারপর যদি জেলেরা নির্দোষ হয় তাহলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত জেলে পরিবারকে সহায়তা দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, শনিবার (৯ এপ্রিল) রাতে লক্ষ্মীপুর কমলনগর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাট এলাকায় মেঘনা নদীতে নৌপুলিশের সঙ্গে জেলেদের সংঘর্ষে আমির হোসেন (৩০) নামে এক জেলে নিহত হয়েছেন।