ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুটি মহাসড়কে সেদ্ধ আমন ধান শুকাচ্ছেন আশপাশের বাসিন্দারা। এতে মনে হচ্ছে মহাসড়ক দুটি যেন ধান শুকানোর চাতালে পরিণত। এতে প্রায়ই ছোটবড় দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে থ্রি-হুইলার, ইজি-বাইক, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল আরোহীরা। চলতি বছরে বালিয়াডাঙ্গী-নেকমরদ ও বালিয়াডাঙ্গী-ঠাকুরগাঁও মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
বৃহস্পতিবার (০২ ডিসেম্বর) বালিয়াডাঙ্গী-নেকমরদ মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায়, লোলপুকুর ডিএম উচ্চবিদ্যালয় থেকে গান্ডিকারী হাট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কে ৪০ জনের বেশি কৃষান-কৃষানি ধান শুকাচ্ছেন। আর এ ধান শুকানোর কাজে সহযোগিতা করছেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। একই চিত্র দেখা গেছে বালিয়াডাঙ্গী-ঠাকুরগাঁও মহাসড়কেও। কালমেঘ বাজার থেকে সদর উপজেলার মৌলানী বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটারজুড়ে সড়কের দুই পাশে প্রায় ৫০ জন কৃষক ধান শুকাচ্ছেন।
এসব মহাসড়কে ট্রাক চালকরা জানায় , মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। এসবের কারণে ট্রাক নিয়ন্ত্রণে রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে। ফলে ভয়ে ভয়ে ওই রাস্তায় চলাচল করতে হচ্ছে। একটু অমনোযোগী হলেই দুর্ঘটনা ঘটবে। তা ছাড়া ধান শুকানোর কারণে পুরো পরিবার চলে এসেছে রাস্তার ওপর।
ফুলতলা গ্রামের ইজি-বাইক চালক সাত্তার জানান, সূর্য ওঠার আগেই রাস্তা ফাঁকা থাকে। সূর্য উঠলে রাস্তায় ধান শুকানোর কাজে লোকজনের কারণে বড় গাড়িগুলোর সাইড দিতে খুব ঝামেলায় পড়তে হয়। অনেক সময় গাড়ি থামানোর প্রয়োজন পড়ে।
বোয়ালধার গ্রামের রফিকুল ইসলাম তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ বালিয়াডাঙ্গী-নেকমরদ মহাসড়কে ধান শুকাচ্ছিলেন। তিনি জানান, আগেরমত বাড়ির সামনে গৃহস্থরা ফাঁকা জায়গা ফেলে রাখেন না বলে ধান শুকানোর জায়গার অভাবে বাধ্য হয়েই মহাসড়কের ওপরই ধান শুকানোর কাজ করতে হচ্ছে।
স্বাধীন সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ রায়হান দুলু বলেন, ‘মহাসড়কে ধান শুকানো বন্ধের জন্য আমরা ২০১৮, ১৯ ও ২০ সালে চৌরাস্তায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং এমনকি জরিমানাও করা হয়েছে। তবুও মানুষ সচেতন হচ্ছে না।’
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন বলেন, ‘সভা-সেমিনারে সড়ক দুর্ঘটনারোধে সাধারণ মানুষের নানাভাবে সতর্ক করা হচ্ছে। রাস্তায় ধান কাটা-মাড়াই ও শুকানো বন্ধের জন্য নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ধান শুকানো বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নিষেধ করা হবে।’