চট্টগ্রাম জেলা পুলিশে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে মাঠপর্যায়ে সক্রিয় হয়েছে পুলিশ। জেলার গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোতে অপরাধ রোধে চালু হয়েছে রাত্রিকালীন মহড়া। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু, (বিপিএম-সেবা)।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধে জেলা পুলিশের এই উদ্যোগ ইতিমধ্যে অপরাধীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তথ্য অনুযায়ী, একাধিক অভিযানে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন হয়েছে।
সাম্প্রতিক এক অভিযানে, ১৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে পটিয়ার কমল মুন্সিরহাট এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের ৩৬ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। অভিযানে গ্রেপ্তার হন দুই কারবারি—কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার নাছির উদ্দীন (৪৮) এবং রাশিফুল ইসলাম রাহুল (১৯)। অভিযানের সময় ইয়াবা বহনের কাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাসও জব্দ করা হয়। তবে একজন অভিযুক্ত পালিয়ে যায়।
গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম জানান, পালিয়ে যাওয়া অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে বিশেষ টিম কাজ করছে। গ্রেপ্তারদের আদালতে সোপর্দ করা হলে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম জেলার নতুন পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। থানাগুলোতে নিয়মিত পরিদর্শনের পাশাপাশি মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাত্রিকালীন টহল চালু করেছেন। তিনি নিজেও এসব মহড়ায় উপস্থিত থেকে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মনোবল বাড়াচ্ছেন।
সম্প্রতি মিরসরাই অঞ্চলে পরিদর্শনের সময় পুলিশ সুপার স্থানীয় জনগণ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যার কথা শোনেন। তিনি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সর্বদা পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
নতুন পুলিশ সুপার জানান, “জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশে পুলিশ বিভাগকে জনগণের আস্থা অর্জনে নতুনভাবে কাজ করতে হবে। আমরা চাই পুলিশ এমন হবে, যারা জনগণের সুখ-দুঃখে পাশে থাকবে।” তিনি আরও বলেন, “মহাসড়কে ডাকাতি প্রতিরোধ এবং অস্ত্র উদ্ধারে চলমান কার্যক্রম জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও উন্নত করবে।”
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “নতুন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ নবউদ্যমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।”
পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় বর্তমানে জেলার সব থানায় নিয়মিত নিরাপত্তা মহড়া, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব উদ্যোগে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এই পরিবর্তনশীল কর্মধারা দেশের অন্য জেলাগুলোর জন্য একটি রোল মডেল হয়ে উঠতে পারে। নতুন মনোভাব ও দায়িত্বশীল নেতৃত্বে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ যে পথে এগোচ্ছে, তাতে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি অপরাধ নিয়ন্ত্রণেও দৃশ্যমান পরিবর্তন আশা করা যায়।
বায়ান্ন/এসএ