বাংলাদেশ জাতীয় বাউল সমিতি ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিরাজ দেওয়ান। প্রথমে বাবাকে পরে মাকে হারিয়েছেন। মা-বাবা উভয়ের মৃত্যুর সময় মিরাজ ছিলেন গানের মঞ্চে। সেখানে খবর পেয়েছেন মা ও বাবার মৃত্যুর। এ কারণে মা-বাবার বেদনাদায়ক স্মৃতি আজো ভুলতে পারেননি। দৈনিক বায়ান্নের কাছে তিনি বলেছেন সেই বেদনাদায়ক দিন দু‘টির কথা।
২ জুলাই শনিবার রাতে সিলেট নগরীর সাগরদিঘির পারে একটি চাইনিজ রেস্তরায় দৈনিক বায়ান্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন মিরাজ দেওয়ান। সিলেট বিভাগীয় বাউল কল্যাণ সমিতির সভাপতি কামাল উদ্দিন রাসেলের সহযোগিতায় নেয়া হয় এই সাক্ষাতকার।
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদি খান থানার বিখ্যাত দেওয়ান পরিবারের সন্তান মিরাজ দেওয়ান। পাবিারিকভাবে সবাই বাউল সাধক ও শিল্পী। মিরাজ দেওয়ানের বাবা ফজলুল করিম দেওয়ানও ছিলেন একজন বাউল সাধক। মা কদবানু বিবি ছিলেন সঙ্গিত অনুরাগী। বড় ভাই রাজ্জাক দেওয়ান ও ছোট ভাই নেওয়াজ দেওয়ানও বাউল শিল্পী ও সাধক। সবার ছোট মিরাজ দেওয়ান। জন্ম ১৯৮০ সালে। শৈশব থেকে বড় ভাই রাজ্জাক দেওয়ানের সাগরিদ হয়ে বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। যন্ত্রী হিসেবে ছিলো তার ওই অংশ গ্রহণ।
মা-বাবার মৃত্যু সংবাদ বলতে গিয়ে মিরাজ দেওয়ান কেঁদে ফেলেন। পিতার মৃত্যু প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মিরাজ দেওয়ান বলেন, ১৯৯৯ সালের কথা। বাবা ফজলুল করিম দেওয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। ওই সময় মিরাজ দেওয়ান প্রায় সময় গুনগুন করে গাইতেন ‘আমি হারিয়েছি যাকে‘। বাবা যেদিন মৃত্যুবরণ করেন সেদিন মিরাজ দেওয়ানকে ডেকে বলেছিলেন ওই গানটি গাওয়ার জন্যে। কিন্তু ওইদিন পোস্তগোলায় দিনে একটি গানের প্রোগ্রাম ছিল। তাই মিরাজ দেওয়ান তাঁর বাবাকে বলেছিলেন প্রোগ্রাম শেষ ফিরে এসে গান শোনাবেন। কিন্তু সেদিন প্রোগ্রামে থাকতেই খবর পেয়েছিলেন বাবা আর নেই। ফিরে এসে আর বাবাকে গান শোনাতে পারেননি।
মায়ের মৃত্যুর সংবাদ বলতে গিয়ে মিরাজ দেওয়ান বলেন, দুই বছর পূর্বে মাদারিপুরে যান একটি গানের অনুষ্ঠানে। রাত ২ টা ১৮ মিনিটে প্রোগ্রামে গান গাইছিলেন তিনি। ওইসময় মিরাজ দেওয়ানের হারমোনিয়াম শিল্পীর মোবাইলে ফোন আসে। গানের মাঝেই জানতে চেয়ে উত্তর পাই বাড়ি থেকে ফোন এসেছিল। কিন্তু কারণ জানাতে নারাজ। একসময় মিরাজ দেওয়ান জানতে পারলেন তাঁর মা আর নেই। মা ও বাবার ওই মৃত্যু যন্ত্রণা আজো বহন করে চলেছেন মিরাজ দেওয়ান।
বাউল জগতে হাতেখড়ি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মিরাজ দেওয়ান বলেন, শৈশবে তাঁর মুর্শিদ ছিলেন সহোদর ভাই রাজ্জাক দেওয়ান। রাজ্জাক দেওয়ানের সাগরিদ হয়ে প্রতিটি গানের আসরে যেতেন যন্ত্রী সংগীত শিল্পী হিসেবে। ১৪ বছরে বয়সে সিরাজদিখানের কুচ্চামার ফেরিঘাট এলাকার মোস্তফা মাতব্বরের বাড়িতে আয়োজন করা হয় বাউলের আসর। ১০ হাজারের উপরে হবে স্রোতা। ওই অনুষ্ঠানে অনুরোধ এলো মিরাজ দেওয়ানকে গান গাইতে হবে। সকলের অনুরোধ তিনি লালন ফকিরে মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই মূল হারাবি-গাইলেন। গান শেষ হতেই তুমুল কড়তালি। জীবনের প্রথম গান। কাঁপিয়ে দিয়েছে স্রোতার মন। স্রোতাদের অনেক অনেক অনুরোধে আরেকটি গান গাইতে হয়। সেদিন ওই বাড়ির নারি ফকিরের আসনের টাকা দিয়ে মালা বানিয়ে মিরাজ দেওয়ানের গলায় পড়ানো হয়েছিল। সেই থেকে বাউল জগতে অবিরাম ছুটে চলেছেন মিরাজ দেওয়ান।