পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাবরক্ষক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারীতা, শিক্ষক-কর্মচারীদের হয়রানিসহ অশালীন আচরণের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সহকারি শিক্ষক সম্মিলিতভাবে (১৩ আগস্ট) মহাপরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, জাকির সম্প্রতি (চইএঝও) প্রকল্পের স্কিমের (ঝগঅএ) এর অনুদান ৫ লক্ষ টাকার আবেদন গ্রহন বাবদ প্রতি প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহন করেছে। বিনামূল্যে সরকারি বই বিতরণের জন্য পরিবহন খরচ বাবদ সরকারি বরাদ্ধের টাকা, নতুন কারিকুলামের উপর বিষয় ভিত্তিক অনেক শিক্ষককে প্রশিক্ষনে নাম না দিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর নামে ও বেনামে প্রশিক্ষনের সরকারি বরাদ্দ, শিক্ষক প্রশিক্ষনের ভাতা, শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডির ডাটা এন্ট্রির পারিশ্রমিক, ম্যানেজিং কমিটি গঠনের সময় প্রিজাইডিং অফিসারের সম্মানি ও অফিস খরচ, নতুন এমপিওভুক্তির আবেদন, বিএড স্কেল, উচ্চতর স্কেল সহ যে কোন সংশোধনী কিংবা নাম কর্তনের আবেদন, শিক্ষক - কর্মচারী নিয়োগের সময় নিয়োগ পরীক্ষার সময় ও তারিখ নির্ধারন, প্রধান বা সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতিকে দিয়ে অবৈধ চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে নিজের আত্মীয়কে চাকুরি দিতে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও আর্থ আত্মসাৎ করে থাকে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেজাউল কবীর এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহোযোগিতায় অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক জাকির লাগামহীন ভাবে এসব ঘুষ, দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও উপজেলার ইসলামাবাদ মোহাম্মাদিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও পূর্ব মির্জাগঞ্জ এস.এম. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে অভিযুক্ত জাকির তার আপন দুই ভাইকে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে চাকুরি দিয়েছে। উপজেলার কাঠালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সম্প্রতি নিয়োগকৃত ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের চাচাতো ভাইকে তার নিজ এলাকা কুড়িগ্রাম থেকে এনে চাকুরি দিয়েছেন।
অভিযুক্ত জাকির স্থানীয় প্রভাব ও তার আপন ফুপাতো ভাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মিলন হাওলাদারের ক্ষমতার অপব্যবহার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ম্যানেজ করে শিক্ষক-কর্মচারি নিয়োগে ঘুষ-বানিজ্য, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ব্যাপক অনিয়মসহ নানাবিধ দুর্নীতিতে জড়িয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। উপজেলার সুবিদখালী সরকারি ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন তার রয়েছে ৬ তলা ভিত বিশিষ্ট দোতলা বিলাসবহুল ভবন। বিভিন্ন শহরে রয়েছে তার নামে বেনামে একাধিক বাড়ি, গাড়ি, জমি, প্লট ও ফ্লাট। বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে রয়েছে নামে বেনামে কোটি কোটি টাকা। তার জিপিএফ ফান্ডে রয়েছে ৩১ লক্ষ টাকা। হিসাবরক্ষক জাকির হোসেন শিক্ষকদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষকদের কাছে সে "টাকা খেকো জাকির” নামে সুপরিচিত।
এ ব্যাপারে (চইএঝও) স্কিম পরিচালক প্রফেসর চিত্ত রঞ্জন দেবনাথ বলেন, স্কিমের টাকা আত্মসাৎকারী অভিযুক্ত জাকিরের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, বরিশাল অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন অভিযোগের ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন।
অভিযোগের কপি হাতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা শিক্ষা অফিসার বলেন, সরজমিনে উপস্থিত হয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন বলেন, আমি কোন অন্যায়ের সাথে জড়িত নহে। অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত জাকির হোসেনকে তার মুঠো ফোনের (০১৭১৯-৬৩৩৭৩২) নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।